গোপালগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা
গোপালগঞ্জের গোহালায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ‘আলোকিত গোহালা ও সমৃদ্ধ মুকসুদপুর কাশিয়ানী’র উদ্যোগে শুক্রবার (৩০ জুন) বিকেলে গোহালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সদস্য ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনা কমিটির সদস্য, রাজনীতিক ও সংগঠক আশরাফুল আলম পপলু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আশরাফুল আলম পপলু বলেন- আমরা শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি নিশ্চিত করতে বর্তমান প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই, উদ্বুদ্ধ করতে চাই দেশপ্রেমে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের জাতিকে গড়ে তুলতে হবে। সে কারণেই বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা জানাতে হবে। তাদের জানাতে হবে কীভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালির বৈষম্যের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, মানুষকে সচেতন করেছিলেন। কীভাবে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এদেশের মানুষকে তাঁর মৌলিক অধিকার আদায়ে সচেতন করেছিলেন, অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এসব ইতিহাস এই প্রজন্মকে জানানো অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক পপলু আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার মতো দেশপ্রেমিক, সৎ, সাহসী নেতা হতে হবে; যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শত বাধা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে প্রিয় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, সম্মানিত করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলছেন। তাই শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত হতে হবে, তাদেরকে মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। এর মাধ্যমেই পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি তৈরি হতে পারে। এভাবেই আমাদেরকে শান্তি এবং সৌহার্দ্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। কেবল তখনই আমাদের উন্নয়ন সমৃদ্ধি টেকসই হবে, আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানোর পাশাপাশি গোহালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও সম্মাননা প্রদান করা হয়। শহীদ ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা শুভেচ্ছা ও সম্মাননা গ্রহণ করেন। কৃতি শিক্ষার্থীদেরও ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের মুকসুদপুর উপজেলার সাবেক কমান্ডার ফিরোজ খান। সভাপতিত্ব করেন গোহালা ইউনিয়ন কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মিয়া।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গোলাম মাহমুদ এবং নূর-এ আলম সিদ্দিকী মিয়া শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রভাষক মো. সালাম শেখ, ফারুক বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টুটুল বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মিয়া সিরাজুল হক ও মুকসুদপুর উপজেলা কমান্ড নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক গাজী। আরও উপস্থিত ছিলেন অন্যতম সংগঠক মো. মাহবুব আলম লাভলু, অহিদুল আলম ডাবলু, জাহাঙ্গীর আলম, মেহেদী হাসান, তৌহিদুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ফাহাদ, শাহীন গাজী, মিজানুর রহমান মোল্লা, এসএম রাজীব শরীফ প্রমুখ।
শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রা
‘আলোকিত গোহালা ও সমৃদ্ধ মুকসুদপুর কাশিয়ানী’র উদ্যোগে আজ শনিবার (১ জুলাই) সকালে সংগঠক ও রাজনীতিক আশরাফুল আলম পপলুকে নিয়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রা শিরোনামে গণসংযোগ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সামাজিক সম্প্রীতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি বিষয়ে সতেতনতা সৃষ্টি এবং দেশ ও সারা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তথা সরকারের অর্জন ও সাফল্য তুলে ধরতে এই অভিযাত্রার আয়োজন করা হয়।
মুকসুদপুরের গোহালা টি.সি.এ.এল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সকাল ৯টায় এই অভিযাত্রার শুরু হয়। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে অভিযাত্রার শুরু হয়।
এই অভিযাত্রা গোহালা থেকে শুরু হয়ে সিন্দিয়াঘাট-টেকেরহাট হয়ে দিগনগর গিয়ে সেখানে নিয়ে নির্মিত মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখান থেকে বরইতলা, বনগ্রাম হয়ে মুকসুদপুর থেকে কাশিয়ানী; এরপর কাশিয়ানী থেকে মুকসুদপুর হয়ে ভাবরাশুর, উজানী, কাশালিয়া, ননীক্ষীর, জলিরপাড়, শান্তিপুর, সুইচগেট, টেকেরহাট, সিন্দিয়াঘাট হয়ে গোহালা গিয়ে ফের শেষ হয় এই কর্মসূচি। মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীর পথে পথে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও বিভিন্ন স্থানে পথসভার আয়োজন করা হয়।