শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে মহিষের মাংস, পেঁয়াজ বাজেয়াপ্ত
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা এক টন মহিষের মাংস ও ২৫ টন পেঁয়াজ বাজেয়াপ্ত করেছে স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত ২ আগস্ট সেই পণ্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
গত ১০ মে কোয়ারেন্টাইনের শর্তভঙ্গ করে দেশে এই দুটি পণ্য আমদানি করেছিল ঢাকার সাভারের মেডলাইফ প্যাকেজিং ইনডাস্ট্রিজ নামে একটি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মহিষের মাংস ও পেঁয়াজ খালাস করে নিতে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট দাখিল না করে উচ্চ আদালতে রিট করে।
গত ১৮ জুলাই এই আদেশের কপি হাতে পায় হিলি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আদেশে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য দুটির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির ৮০ দিনের মাথায় গত ২ আগস্ট সেই পণ্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
হিলি স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্র জানায়, যেসময় এসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, সেসময় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) বন্ধ রেখেছিল সরকার। তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড (বিডা) কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে মহিষের মাংস ও পেয়াজ আমদানি করে মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু আমদানির স্বপক্ষে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট ছিল না।
এদিকে রপ্তানিযোগ্য মাংসের আচার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ভারত থেকে মহিষের মাংস ও পেঁয়াজ আমদানি করলেও এই প্রতিষ্ঠানের আচার তৈরির কোনো সক্ষমতা এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই জানিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন। এ নিয়ে গত ১৬ মে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুনানির দিন ধার্য করে। সেদিন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও মাংস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং আমদানিকারক সেদিন যথাযথ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। ওই দিন মহিষের মাংস আমদানিকারক কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আরও কিছু সময় চেয়ে আবেদন করে। নানা নাটকীয়তা শেষে দুটি পণ্য ছাড় পেতে উচ্চ আদালতে রিট করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। রিটে যথাযথ কাগজপত্র আদালতে দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত এই দুটি পণ্যের বিষয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।
এদিকে হিলি স্থলবন্দরের কাস্টমস উপকমিশনার মো. বায়জিদ হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় ভারত থেকে আমদানি করা মহিষের মাংস এবং পেঁয়াজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট ছাড়া এই দুটি পণ্য ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জনা গেছে, আমদানি করা প্রাণীজ পণ্য চালান ছাড় করণে বাংলাদেশ পশু ও পশুজাত পণ্য সঙ্গনিরোধ আইন, ২০০৫ ও আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪-এর বিধান মোতাবেক প্রাণি সঙ্গনিরোধ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র এবং উদ্ভিদজাত পণ্যচালান ছাড়করণে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ আইন, ২০১১ ও আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২০২৪-এর বিধান মোতাবেক উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মাংসের আঁচার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পণ্য দুটি আমদানি করলেও কাস্টমস থেকে ছাড় পেতে কোয়ারেন্টাইন ছাড়পত্র নিতে পারেনি। মহিষের মাংস আমদানি করার ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও, এই মাংস আমদানিতে কোনো পূর্ব অনুমোদন নেয়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। যে কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে মাংস ছাড় না দিতে চিঠি দেয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। অনুমতি না থাকায় হিলি স্থলবন্দর প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও কোনো ছাড়পত্র পায়নি মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডস্ট্রিজ।