পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া সেই চালক অটোরিকশা নিতে থানায়!
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠে এক চালকের ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা ঘটে চলতি বছরে ১৯ জুন। এ ঘটনায় কয়েকদিনব্যাপী উদ্ধার অভিযান চললেও সে সময় খোঁজ মেলেনি তাঁর। তিন মাস ১০ দিনের মাথায় খোঁজ মিলেছে তাঁর! বেঁচে আছেন তিনি। তাঁর নাম শরিফুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাটে। আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উত্তর থানায় উপস্থিত হয়েছেন তিনি।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শরিফুলের বাড়ি বাগেরহাটে হলেও তিনি ঢাকার হাজারীবাগে থেকে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে জানান। ঘটনার দিন রাতে পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি থেকে বের হন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা থেকে বাগেরহাটের গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়া। কিন্তু মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে তিনি অটোরিকশা চালিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন। একপর্যায়ে সেতুতে একটি যানের সঙ্গে তাঁর অটোরিকশার ধাক্কা লাগলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে ধাওয়া দেন। এ সময় গুলি করার ভয়ে তিনি রিকশা রেখেই সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়েন।
শরিফুল বলেন, ‘রাতভর নদীতে ভেঁসেছিলাম আমি, নদীতে অনেক ঢেউ ছিল। আমি কোনো কুল-কিনারা খুঁজে পাইনি। নিজের মতো করে সাঁতরাচ্ছিলাম। সকালে অনেক দূরের একটি এলাকায় উঠি। পরে বাসে উঠে বাড়িতে গেলেও পরিবারের কেউ আমার এই ঘটনা বিশ্বাস করেনি। সবাই বলে অটোরিকশাটি আমি গোপনে বিক্রি করে দিয়েছি।
কিস্তিতে অটোরিকশাটি কিনেছিলাম। পরে জানতে পারলাম এটি থানায় রয়েছে। এজন্য পদ্মা সেতু উত্তর থানায় আসি। বাড়ির লোকজন আমাকে মনে করছে যে আমি এটি বিক্রি করে টাকা খেয়ে ফেলেছি। আমি যে এটির মালিক প্রমাণ করা নাই। এটা প্রমাণ করার জন্যই আমি আমার অটোরিকশাটি নিয়ে যেতে চাই।’
এ বিষয়ে শরিফুল ইসলামের শ্বশুর মোহাম্মদ দাউদ মোল্লাহ জানান, ‘ঘটনাটি আমাদের কাছে বলার পর আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ পদ্মা নীতিতে পড়ে কেউ জীবিত ফিরতে পারে না। শরিফুলের মানসিক কিছু সমস্যা আছে। এই ঘটনা জানানোর পর অনেক দিন পর্যন্ত সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এখন থানায় এসে দেখলাম তারই অটোরিকশা এটি। এখন বিশ্বাস হচ্ছে। ওসি থানার বাইরে থাকায় আমরা বসে আছি।’
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আলমগীর হোসেন জানান, থানা এলাকায় সকাল বেলা এসে তিনি দাবি করেন অটোরিকশাটি তাঁর। তাঁর পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। বিস্তারিত পরে বলব।
চলতি বছরের ১৮ জুন দিবাগত রাত ২টার (১৯ জুন) পর মাওয়া থেকে উল্টোপথে সেতুতে উঠে পড়ে অটোরিকশাটি। বিষয়টি টের পেয়ে সেতুর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ধাওয়া করেন। পরে সেতুর ২১ নম্বর পিয়ারের কাছ অটোরিকশা রেখে চালক নদীতে ঝাঁপ দেন। রে পদ্মা সেতু উত্তর থানা, ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ ও ডুবুরিদল যৌথভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েও তাঁকে উদ্ধার করতে পারেনি।