ববির হলে রাতভর নির্যাতন, ভাঙা হাত নিয়ে হাসপাতালে মুকুল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদকে কক্ষে আটকে রেখে রাতভর চালানো হয় নির্যাতন। এতে ভেঙে যায় তার হাত। এমন অভিযোগ উঠেছে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইংরেজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। মুকুলের দাবি, একটি ম্যাসেজের জেরে চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী তার ওপর নির্যাতন চালান।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ববির বঙ্গবন্ধু হলের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আর শুক্রবার সকালে সহপাঠীরা আহত মুকুলকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
আহত মুকুল ববির ইংরেজি বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র। তিনি নরসিংদী সদরের বাসিন্দা। তার বাবা কাঠমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। টিউশনি করে নিজের ও বোনের পড়াশোনার ব্যয় চালান মুকুল।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে টিউশনি শেষে হলে ফিরছিলেন মুকুল। তিনি রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের কয়েকজন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়। এতো রাতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা মুকুলকে বলেন, দশম ব্যাচের বড় ভাইয়েরা বঙ্গবন্ধু হলে ডেকেছেন। এই কথা শোনার পর মুকুল হলে ফিরে দশম ব্যাচের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে এই খবর জানান।
ম্যাসেজে মুকুল লেখেন, ‘আমাদের ব্যাচের নামে ছোট ভাইদের ডাকা হয়েছে, অথচ আমরা জানি না। আগেও এভাবে ডেকে র্যাগিং করা হয়েছে অনেককে। তখন বিভাগের শিক্ষকদের কাছে আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। এখন আবার ডাকা হয়েছে। আমরা জানি না, এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই না।’
ববি শিক্ষার্থী মুকুল জানান, গ্রুপে ম্যাসেজটি দেওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই তানজিদ তাকে ফোন দেন। তাকে শেরে-বাংলা হলে যেতে বলেন। রাত ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে চতুর্থ তলায় আসলে তানজিদের সঙ্গে মুকুলের দেখা হয়। এরপর তানজিদ সেখান থেকে তাকে ৪০১৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে থাকা সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে ওই ম্যাসেজ কেন লেখেছে তা জানতে চান তানজিদ।
মুকুল বলেন, ‘‘এ সময় আমাকে উদ্দেশে তানজিদ বলেন, ‘তোর জন্য আমি একাদশ ব্যাচটাকে গোছাতে পারছি না।’ এরপরই তানজিদ ও তার সহযোগী সিহাব কিলঘুষি, লাথি মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে জিআই পাইপ ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন। তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
মুকুল বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। তারপরও আমাকে মেরে পঙ্গু করে দেওয়া হলো। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
শেবাচিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক মো. নাহিদ বলেন, ‘রোগীর (মুকুল) বাঁ হাতের হাড় ভেঙে গেছে। সেখানে আমরা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। ২১ দিন পর ব্যান্ডেজ খোলা হবে। এরপরও যদি হাড় জোড়া না লাগে তবে অস্ত্রোপচারের দরকার হবে।’
বিষয়টি নিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট আরিফ হোসেন বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’ আর ববি প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তাকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। এই বিষয়ে ববি প্রশাসন ইখতিয়ার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তানজিদকে একাধিকবার কল দেওয়ার পর তার এক আত্মীয় ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘তানজিদ এলে কল দিতে বলব।’ আর সিহাবের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ‘রং নম্বর’ বলে কেটে দেওয়া হয়।