হত্যা মামলায় ৬ যুবকের যাবজ্জীবন
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মনোতোষ (৩২) নামে এক যুবককে হত্যা ও মুক্তিপণ দাবির অপরাধে ছয় যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মো. নাজির আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় এ রায় দেন।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুবকরা হলেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খাস সোনামুখী মধ্যপাড়া গ্রামের শ্রী সুজন কুমার সরকার, বিশ্বাস বাড়ি এলাকার রুবেল, বলরামপুর পূর্বপাড়া এলাকার শিপন, একই গ্রামের ইউসুফ আলী, লিটন মণ্ডল ও সড়াতৈল গ্রামের রায়হান সরদার।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত রায়হান সরদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৪ ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিচারক।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজন রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। আসামি শ্রী সুজন কুমার সরকার পলাতক আছেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি রায়হান সরদার ও শিপন ভিকটিম মনোতোষের বাবার স-মিলে কাজ করতেন। কাজের সময় আসামি রায়হান সরদার মনোতোষের বাবার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ধার নেন। কিছুদিন পর মনোতোষের বাবার স-মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে তারা অন্য জায়গায় কাজ করেন। মনোতোষের বাবা পাওনা টাকার জন্য রায়হান সরদারকে চাপ দিয়ে বকাঝকা করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামি রায়হান সরদার তাঁর সহযোগী শ্রী সুজন কুমার সরকার, রুবেল, শিপন, ইউসুফ আলী ও লিটন মণ্ডলের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি আসামি শিপনের বাড়িতে পিকনিকের আয়োজন করেন এবং মনোতোষকে দাওয়াত করেন। মনোতোষ আসামি সুজনকে সঙ্গে নিয়ে রাত ৮টার দিকে সুজনের বাড়িতে পিকনিক খেতে আসেন। খাওয়ার পর সুজন কুমার সরকার, রুবেল, রায়হান সরদার, শিপন, ইউসুফ আলী ও লিটন মণ্ডল ভিকটিমকে বেঁধে রেখে তাঁর বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
আসামিরা ভিকটিম মনোতোষকে বেলকুচি উপজেলার বিশ্বাসবাড়ি হুরা সাগর নদের উত্তর পাশে নূর নবীর ইউক্যালিপটাস বাগানে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা মদ ও গাঁজা খান এবং ভিকটিম মনোতোষকে পরিকল্পনা করে মদের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে বেশি পরিমাণ মদ খাওয়ান। এ সময় ভিকটিম নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পাশের একটি ধুইঞ্চাক্ষেতে কচুরী পানা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরে তাঁরা মনোতোষের আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
এ ঘটনায় নিহত মনোতোষের চাচাতো ভাই শ্রী অচিন্ত কুমার সরকার বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় মামলা করেন। মামলা চলাকালে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। সাক্ষ্য শেষে আজ ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারক।