বগুড়ার শেরপুরে বিএনপি-আ.লীগ-পুলিশ সংঘর্ষ
বগুড়ার শেরপুরে অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধর দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শহরের হাসপাতাল রোড খেজুরতলা এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ত্রিমুখী সংঘর্ষে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তত ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুরুতর আহত চারজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা শহরে টহল দিচ্ছেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা, উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান আলী, কনস্টেবল মো. শামীম হাসান, মো. রেজাউল করিম ও আফজাল হোসেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আহত নেতাকর্মীরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ায় তাঁদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
অবরোধের সমর্থনে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন শেরপুর-ধুনট আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। মিছিলটি শহরের ধুনটমোড় এলাকার দিকে যাচ্ছিল। একই সময়ে বাসস্ট্যান্ডে দলীয় কার্যালয় থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি শান্তি মিছিল বের হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজামাল সিরাজী, আলহাজ মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মিছিলটি বিএনপির পেছনে পেছনে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে শহরের খেজুরতলা এলাকায় পৌঁছালে অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগান দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে উভয় পক্ষই মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টা-পাল্টি স্লোগান দিলে শুরু হয় ধাওয়া- পাল্টাধাওয়া এবং ইট-পাথর নিক্ষেপ। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ এসে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ত্রিমুখী সংঘর্ষ প্রায় ঘণ্ট্যব্যাপী স্থায়ী ছিল বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের শান্তি মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা। এতে তিনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজামাল সিরাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম খোকনসহ অন্তত ১১ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।’
এই অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অবরোধের সমর্থনে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করি। মিছিলটি কয়েকশ গজ যেতে না যেতেই কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল থেকে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। সেইসঙ্গে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় বিএনপির একজন কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ভাঙচুর করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। তবে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।
শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা জানান, বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ও সংঘর্ষ বাধলে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনিসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও দাবি করেন। এই ঘটনায় কোনো পক্ষই এখনো লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি ঘটতে না পারে সেজন্য প্রশাসন সতর্ক রয়েছেন বলে জানান তিনি।