সত্যিকারের বা প্রক্সি কোনো যুদ্ধই আমরা চাই না : পররাষ্ট্র সচিব
বিশ্বের যেকোনো ধরনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এ অঞ্চলে যেকোনো ধরনের সংঘাত বা যুদ্ধ বাংলাদেশকে তার উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারে। অবশ্যই আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, সেটা সত্যিকারের যুদ্ধ হোক বা প্রক্সি যুদ্ধ হোক। আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব এসব কথা বলেন।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ কাউকে তার ভূমি অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করতে বা প্রতিবেশীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবে না।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুরা সংঘাতের শিকার হওয়ায় বাংলাদেশ সবসময়ই যেকোনো ধরনের যুদ্ধের বিপক্ষে।’
ভারত ও মিয়ানমারকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ফোকাস আরও উন্নয়নের দিকে রয়েছে। তাই কোনো ধরনের সংঘাত, প্রক্সি বা অন্যথা হলে বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত হবে। এ কারণে আমরা সবসময় সর্বোচ্চ সংযম করি।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল, তখন উসকানিমূলক ঘটনা ঘটেছে।’
বিশ্বের বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে এবং এই ভারসাম্যমূলক কাজটি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী করছি না, আমরা সময়মতো সাড়া দিচ্ছি এবং উদ্বেগের উত্তর দিচ্ছি যদি থাকে। অনেকেই বলছেন, আমাদের কাছ থেকে শিখতে চান। তারা খুশি যে বাংলাদেশ কীভাবে এই সমস্ত প্রতিযোগিতামূলক চাহিদা ও স্বার্থ মোকাবিলা করছে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সরকার আশা করছে একটি ভালো নির্বাচন হবে। এই মুহূর্তে আমরা মনে করি না, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।’
উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সরকার কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করতে পারেন সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাই আমাদের ফোকাস। কোনো সমস্যা হলে আমরা তা মোকাবিলা করব।’
মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা যেভাবে চায়, তারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চাই। বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো বিদেশিকে সন্তুষ্ট করার জন্য নির্বাচন করছে না, বরং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য এবং জনগণ চাইলে যেন ভোট দিতে পারেন। একটি বিশেষ দেশ কী ভাবছে বা কোনো বিশেষ দেশ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে কি না তা অপ্রাসঙ্গিক।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন।
এর আগে গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও বলেছেন, তারা এই অঞ্চলে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ দেখতে চান না এবং বৃহত্তর উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আমরা এখানে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ দেখতে চাই না। সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা যেখানে প্রক্সি যুদ্ধ দেখি, সেখানে সমস্যা থেকে যায়। ইউরোপ প্রক্সি যুদ্ধে পতিত হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।’
এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা হতে পারে বলেও সতর্ক করেন ড. মোমেন।