সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু
আবহমান বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোক ও কারুশিল্পের প্রসার এবং পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এ উৎসবের আয়োজন করেছে। চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুরুন নবী, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন, ঢাকা রিজিয়নের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপন দেবনাথ প্রমুখ।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবারের উৎসবে দেশের প্রায় ১৭টি জেলার প্রতিথযশা ৬৪ জন কারুশিল্পী তাদের শিল্পকর্ম নিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের শীতল পাটি, মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি ও মাটির পুতুল, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁও, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশ বেতের কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া-পুতুল, বন্দরের রিকশা পেইটিং, কুমিল্লার, তামা-কাঁসা-পিতলের কারুশিল্প, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও কুমিল্লার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের শিল্প।
এছাড়া কারুপণ্য তৈরির উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্যও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাহারি কারুপণ্যের মোট ১০০টি স্টল। উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে কারুশিল্প প্রদর্শনী, লোকজীবন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলা প্রদর্শনী। মাসব্যাপী লোকজ উৎসব লোকজ মঞ্চে প্রতিদিন দেশীয় লোকসংস্কৃতির জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, হাসনরাজার গান, মুর্শিদী গান, চর্যাগান, লোকগল্প বলা, লোকজনৃত্যসহ বিভিন্ন লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। লোকজ খেলার মাঠে থাকবে গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি অনুষ্ঠান। উৎসবে লোকজ ঐতিহ্যের মুড়ি, মুড়কি, জিলাপি ও বাহারি পিঠাপুলিসহ নানা ধরনের মিষ্টান্ন স্থান পেয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে নিয়মিতভাবে মাসব্যাপী এ লোকজ মেলার আয়োজন করে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উৎসব প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে। উৎসবে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। তবে বিকেল ৫টার পর উৎসবে বিনামূল্যে প্রবেশ করা যাবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিলুর রহমান জানান, লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পুরোদমে অবকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছে। আগামীতে এর সৌন্দর্য আরও বাড়বে। দেশীয় সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ভবিষ্যতে মেলার আয়োজন মাসব্যাপী নয়, কারুশিল্পীদের নিয়ে বছরব্যাপী হবে সেই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের বাইরে রপ্তানি বাড়ানো যায়, পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষও এই পণ্যের ব্যবহার বাড়ালে তার চাহিদা বাড়বে। রিকশাচিত্র, শীতল পাটি এবং জামদানির মতো কারুশিল্পে ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত হয়, সেজন্যেও কাজ করে যাচ্ছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।