নববর্ষের আগের দিন কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল

ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে সমুদ্রশহর কক্সবাজারে বিপুল পর্যটকের সমাগম হয়েছে। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভিড় করছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে দীর্ঘদিন খরায় থাকা কক্সবাজারের পর্যটন খাত চাঙা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দেখছেন আলোর মুখ।
ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করে। পর্যটকদের এই চাপ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এবার ঈদে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের আধিক্যতার কারণে অনেক পর্যটক নৈসর্গিক সুন্দর অবলোকনের জন্য ছুটছেন শহরের বাইরে। কক্সবাজার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হিমছড়ি পাহাড়ি ঝরনা, বিনোদন স্পট, বোটানিক্যাল গার্ডেন। সুউচ্চ পাহাড় থেকে পাখির চোখে সমুদ্র ও আশপাশের এলাকা দেখতে ভিড় করছে পর্যটকরা। রেজুর খালে ছোট বোটে কাইকিং, সোনারপাড়া সৈকত, ইনানী ও পাটোয়ারটেকের পাথররাণী বিচে মনের সঙ্গে মাধুরী মিশিয়ে আনন্দ হৈহুল্লোড়ে মেতেছে পর্যটকরা।
ঈদের তৃতীয় দিন আজ শনিবার থেকে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী ও কবিতা চত্বর পয়েন্টে পর্যটকে মুখরিত ছিল। সমুদ্রস্নান, ওয়াটার বাইক (জেটস্কি), ঘোড়ায় চড়া ও বিচবাইক নিয়ে এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্টে ঘুরে বেড়ানোতে ব্যস্ত ছিল অনেক পর্যটক।
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী আদিনাথ মন্দির দেখতে ভিড় লক্ষ করা গেছে। এই উপজেলার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতেও লোকজনের সমাগম হচ্ছে। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না থাকায় মাতারবাড়ি সমুদ্রসৈকত থেকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখছে পর্যটকরা।
এ ছাড়া সাবরাং ট্যুরিজম স্পট, শামরাপুর নানা রঙের সাম্পানের সৈকত, জাহাজপুরা শতবর্ষী গর্জন ট্যুরিজম স্পট দেখতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে ঈদের আগে ছাড় দিলেও এখন দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেন বেশ কয়েকজন পর্যটক। আবার অনেকেই ভালো মানের রুম না পেয়ে হতাশায় ভোগছেন। রেস্টুরেন্টেও একটু দাম বেশি রাখার অভিযোগ তুলছে পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে ঈদের আগে পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। ঈদের প্রথম দিনেও তেমন কোনো জনসমাগম ছিল না। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে পর্যটন এলাকায় জনসমাগম বেড়েছে। হোটেল-মোটেলের কক্ষ প্রায় ৯০ শতাংশই বুকিং। কোনো হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাইনি। যদি এমন অভিযোগ উঠে তবে ওই হোটেল আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে পর্যটক বরণে প্রস্তুত ছিলাম আমরা। শুক্রবার থেকে বিপুল পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। তাদের সর্বোচ্চ সার্ভিস দিচ্ছি আমরা। অতিরিক্ত দাম কোথাও রাখা হচ্ছে না। যদি এমন হয় তাহলে প্রতিটি রেস্টুরেন্টে আমাদের মোবাইল নম্বর আছে। ফোন করে অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা দিতে সৈকত ছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি আমরা। যেকোনো সমস্যায় পর্যটকরা একটি বাটন চাপ দিয়েই আমাদের সেবা নিতে পারেন।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে আশা করছিলাম পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার। তা ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে হচ্ছে। পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধসহ পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সমুদ্রসৈকত এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। ভ্রমণ শেষে পর্যটকরা নিরাপদে ফিরুক এটাই আমাদের কামনা।’