অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা, বিচার চাইলেন মা-বাবা
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমতলী এলাকার প্রবাসী বিল্লাল হোসেনের মেয়ে বারিয়া সিদ্দিকা কাশপিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গত ১৯ জুন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
কাশপিয়া কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার মা-বাবার দাবি তাদের সন্তানকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
কাশপিয়ার মা সায়মা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী দুবাই প্রবাসী। আমাদের তিন সন্তানের মধ্যে কাশপিয়া মেজো। বছরখানেক আগে তার সঙ্গে প্রতিবেশী মো. সজিব হোসেনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পরিচয় হয়। কথাবার্তার পাশাপাশি তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাঁর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সজিব তাঁর মোবাইল ফোনে রাখে। বিষয়টি জানার পর আমরা পারিবারিকভাবে ওই ছেলের সঙ্গে কথা না বলতে সতর্ক করি। এ ঘটনার পর সজিব আমার মেয়ের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি জানার পর আমার ভাসুরের ছেলে মো. রাসেল হোসেন প্রবাস থেকে সজিবকে এসব কাজ না করার অনুরোধ করে। পরে গত ১৬ জুন রাসেল দেশে আসে। খবর পেয়ে ১৯ জুন কাশপিয়ার জেঠাতো ভাই রাসেলকে মারধর করতে সজিব হোসেন ও মেহেদি হাসান রাব্বি তাদের দলবল নিয়ে আমাদের বাড়ি আসে। পরে কাশফিয়ার চেষ্টায় রাসেলকে মারতে পারেনি সজিব ও রাব্বির সঙ্গে আসা দুর্বৃত্তরা। তবে এ ঘটনায় কাশফিয়ার চাচা-চাচিসহ বেশ কয়েকজন তাকে বলে, ‘তুই মরলে সবাই বাঁচে।’ পরে রাগে ক্ষোভে মানসিক যন্ত্রণায় সে নিজের কক্ষে এসে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। আমি সেদিন বাড়িতে ছিলাম না। খবর পেয়ে বাড়ি এসে দেখি আমার মেয়ে আর নেই। মরে গেছে। আমি মা হয়ে কেমনে সহ্য করি আমার মেয়ের মরা মুখ। কত ডাকলাম কাশপিয়া বলে কোনো সাড়া শব্দ নেই। কতবার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম, কত কান্না করছি, একবার আমার সঙ্গে কথা বল। কোনো কথা বলেনি আমার অভিমানি মেয়েটা।’
কাশফিয়ার মা জানান, বিকেলে এ ঘটনার পর রাতেই চারজনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়। আসামিরা হলেন সদর উপজেলার আমতলী এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে সজিব হোসেন (২৪), একই এলাকার শাহ আলমের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২), ময়নাল হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন (২২) ও আবুল কাশেমের ছেলে মো. রাহিম (২২)।
কাশফিয়ার বাবা প্রবাসী বিল্লাল হোসেন দুবাই থেকে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে শুনে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফিরেছেন। ঘটনার পরের দিন তিনি নিজ হাতে সন্তানের মরদেহ দাফন করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিল্লাল বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওরা মরে যেতে বাধ্য করেছে। খুব মেধাবী ছিল আমার মেয়ে। প্রবাস থেকে এমন কোনো দিন নেই আমি আমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলিনি। আজ আমার মেয়ে মরে গেছে। আমার ভেতরটাতে কী করছে আমি কেমনে কই। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এদিকে অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানায়, মামলা হওয়ার খবর পেয়ে তারা পালিয়ে গেছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘আমরা চার আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’