প্রতারণা করে পঞ্চম বিয়ে করতে গিয়ে ধরা যুবক
একটি দুটি নয়! মিথ্যে পরিচয় দিয়ে একে একে বিয়ে করেছেন পাঁচটি। নিজেকে পরিচয় দিতেন সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে। সেই পরিচয় নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন না তোলে সে জন্য নিজেই বানিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র। সেনাবাহিনীর পোশাক পরে কখনও-সখনও চলে যেতেন কথিত স্ত্রীদের বাড়িতে।
ভাবেই দিন কাটছিল কুষ্টিয়ার তারেকের! কিন্তু বিধি বাম। সর্বশেষ আশুলিয়ায় নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিয়ের নাটক সাজিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়।
অভিযুক্ত যুবকের নাম হাসিবুল ইসলাম তারেক (২৩)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
আশুলিয়া থানা পুলিশ প্রতারণা করে এ পর্যন্ত তারেকের বিরুদ্ধে পাঁচটি বিয়ের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
আজ রোববার সকালে আশুলিয়া থানা থেকে তারেককে পাঠানো হয় ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আদালত তাকে কারগারে পাঠান। এর আগে আজ সকালে ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আশুলিয়ার ডেন্ডাবর নতুনপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর পরিবার বলছে, প্রতারণার কাজে তারেক একা নয়, জড়িত তার পরিবারও। এ কারণে তাঁর বাবা আশরাফ আলী (৫০) ও মা হাসিনা বেগমকেও (৪২) মামলার আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কিশোরী (১৫) আশুলিয়ার ডেন্ডাবর নতুন পাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে। সে স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তারেক। পরে বিয়ের নাটক সাজিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন। মেয়ের পরিবারের সন্দেহ হলে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, তারেকের সেনা সদস্য বলে পরিচয় দেওয়াটা নিছক প্রতারণা।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছে তারেক এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে দুটি ডিভোর্স হয়েছে, বাকি তিন স্ত্রী এখনও আছে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারেক নিজেও একাধিক বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন।
তারেক বলেছেন, সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ছবি দেখালে অনেক পরিবার আকৃষ্ট হয়। বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকলে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়।
মিথ্যে পরিচয় দিয়ে একের পর এক বিয়ে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক বলেন, ‘মেয়েদের সঙ্গে থাকতে আমার খুবই ভালো লাগে!’
তারেকের গ্রামের বাড়ি বাগুলাট ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মো. আবু সারেক বলেন, ‘তারেক আমার প্রতিবেশী। সে ফটকা গোছের। তিনিও বেশ কয়েকটি প্রতারণা নালিশ পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সে একাধিক বিয়ে করেছে। তার বাড়িতে এক বউ আছে, সেখানে দুই সন্তান আছে। গাজীপুরে একটি বিয়ে করেছে। সেখানেও একটি সন্তান আছে। এখন তিন স্ত্রী রয়েছে। তারেকের বাবা–মাও একাধিক বিয়েতে উপস্থিত থেকে সত্য গোপন করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, সেনাসদস্য পরিচয় দিয়েই এই অপরাধ করে আসছিলেন তারেক। তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।