এনটিভির সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা : প্রধানমন্ত্রী
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির ২২ বছরে পদার্পণ আজ বুধবার (৩ জুলাই)। এ উপলক্ষে এক বাণীতে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ২১ বছর পূর্ণ করে ২২ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি চ্যানেলটির পরিচালনা পর্ষদ, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, দর্শক ও কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে গণমাধ্যমকে অবারিত ও শক্তিশালী করতে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্থাপন করাসহ সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা ও গণমাধ্যমের জাতীয় স্বীকৃতির পদক্ষেপ নেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট-১৯৭৩, নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ অ্যাক্ট-১৯৭৪, প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪, সরকারি মালিকানাধীন নিউজ পেপার অ্যাক্ট-১৯৭৫, নিউজ পেপার অ্যাক্ট-১৯৭৫ এবং সংশোধিত চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ অ্যাক্ট-১৯৭২ প্রণয়ন করে। তিনি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে গণমাধ্যমের অবিস্মরণীয় ভূমিকাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিভূ হিসেবে আখ্যা দেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিকাশ ও উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা এদেশে প্রথম বেসরকারি টেলিভিশনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেই এবং সংবাদপত্রে সরকারি মালিকানা বিলোপ করি। ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয় এবং তথ্য কমিশন গঠন করা হয়। আমরা সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯, জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা এবং লাইসেন্সিং রেগুলেশন ২০১০, বেসরকারি এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১৪ প্রণয়ন করেছি। সাংবাদিক সহায়তা কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য আমরা ‘সাংবাদিক সহায়তা ভাতা ও অনুদান নীতিমালা-২০১২’ এবং ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৪’ প্রণয়ন করেছি।’
সরকারপ্রধান বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘দেশে এখন সংবাদপত্রের সংখ্যা তিন হাজার ২৫৫টি। অনুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল, দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের অনলাইন পোর্টাল রয়েছে ৪৪৭টি। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ টেলিভিশন ও চট্টগ্রাম টেলিভিশনের পাশাপাশি দেশে বর্তমানে ৩৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং অনুমোদিত আরও ১৩টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি ২৩টি এফএম বেতার ও ১৮টি কমিউনিটি বেতার কেন্দ্র বর্তমানে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা অনলাইন মিডিয়া, আইপিটিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসার ও তথ্য প্রবাহে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ দেশের সম্প্রচার জগতে বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখন অনেক সাশ্রয়ী ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে সম্প্রচার করছে।’ তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে টেলিভিশনকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখলে চলবে না। সামাজিক দায়বদ্ধতা বজায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এবং দেশজ শিল্প-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশের মানুষের উন্নত মনন গঠনে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে অবদান রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের যে উত্তরণ, সেই গৌরব অর্জনে গণমাধ্যম আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযাত্রী। আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে—এই প্রত্যাশা করি। আমি এনটিভির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।’