গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৬, পরিচয় মিলেছে হতাহতদের
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ব্যাংক কর্মকর্তা ও মা- মেয়েসহ নিহত বেড়ে ছয় জনে দাঁড়িয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন বাসযাত্রী। আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উপজেলার মাঝিগাতী এলাকায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন খুলনার বানিয়াখামার এলাকার সৈয়দ এরশাদ আলীর ছেলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের খুলনা জোনের কালেকশন অ্যান্ড মনিটরিং অফিসার সৈয়দ মামসাদ আলী (৩১), টুটপাড়ার বাসিন্দা আবু হাসানের স্ত্রী তহুরা বেগম (৫৫), তার মেয়ে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার মনোহরপুর গ্রামের মো. আসলাম উদ্দিন কুদ্দুসের স্ত্রী তানিয়া আফরোজ (২৮), গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতান শাহী গ্রামের মোতালেব শেখের ছেলে রইজ শেখ (২৪), বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার সারুলিয়া গ্রামের মো. হাসিব মোল্লার ছেলে সাগর মোল্লা (২৪) ও একই জেলার ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া এলাকার আ. সামাদ গাজীর ছেলে সাইদুর রহমান (৪৪)।
আহতদের কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের এস আই মো. আব্দুল্লাহ হেল বাকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,
খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ মামসাদ আলী, তহুরা বেগমসহ পাঁচজন নিহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তহুরা বেগমের মেয়ে তানিয়া আফরোজের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার ফলে প্রায় ৩০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাইওয়ে মাদারীপুর জোনের ডিআইজি মো. শাহিনুর আলম খান, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুল কবির চন্দনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. বাকের আলী খান জানান, বাসের চালক ঘুম ঘুম অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল বলে শুনেছি। গাড়িটি খুব গতি সম্পন্ন ছিল। ফলে দ্রুতগামী বাসটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে হলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা প্রথমে চারটি মরদেহ উদ্ধার করি। এর কিছু সময় পরে বাসের ভেতর আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ মামসাদ আলীর বোন দিলরুবা খানম বলেন, ‘আমার ভাই সৈয়দ মামসাদ আলী আজ রোববার ব্যাংকের কাজে সকালে ব্যাংকের কাজে ইমাদ পরিবহণে চরে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আমি খবর পেয়ে ভাইয়ের মরদেহ নিতে এসেছি। আমার ভাইয়ের মরদেহটি আমাকে নিতে হবে এটা কখনও ভাবতে পারিনি। ভাইয়ের অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে যেন আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এবং কোনো মায়ের কোল খালি না হয় তার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
কাশিয়ানী জোনের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্লা সেকেন্দার আলী বলেন, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ফলে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হয় এবং পরে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে। পরে দুপুরে দুর্ঘটনায় কবলিত বাসটিকে ট্রেকার দিয়ে টেনে সরানো হয়। বাস এবং ট্রাক দুটি হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহগুলো বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।