আশুলিয়ার পোশাক কারখানায় কড়া নিরাপত্তা, তবুও বন্ধ ৪৯টি
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অস্বস্তি কাটাতে কড়া নিরাপত্তা দিচ্ছে প্রশাসন। কারখানার মালিক ও পোশাক শিল্পের সংগঠনগুলোর নেতারা নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ। তবুও আজ শনিবার (১৪ সেপ্টম্বর) খোলেনি ৪৯টি তৈরি পোশাক কারখানা। অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষিত এসব কারখানায় কাজ করেন কয়েক লাখ লাখ শ্রমিক। কবে নাগাদ খুলবে তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউ।
এর আগে গত শুক্রবার কারখানার মালিক, বিজিএমইএ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের এক বৈঠকে সব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম শ্রমিকদের নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আজ শিল্পাঞ্চল ঘুরে করে দেখা গেছে, সর্বাত্মক নিরাপত্তার মধ্যে খুলে দেওয়া কারখানাগুলোতে কাজে যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। বিজিএমইএ বলছে, এখনও বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকরা শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারায় কোনো বেতন পাবেন না।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, টানা অসন্তোষের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার পোশাক খাতে উৎপাদন। গত এক বছরে নানা সমস্যার কারণে প্রায় ২৭০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
নানা মহলের উসকানি, বহিরাগত হামলাকারী ও ঝুট ব্যবসায়ী এমনকি বিগত সরকারের মদদপুষ্ট তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের অনেকে সংকটকে কৃত্রিমভাবে জিইয়ে রেখেছে বলে দাবি করছে অনেকে।
শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের সুরক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা শ্রমিকদের মোটিভেট করেছি। বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক–মালিকদের দূরত্ব কমিয়ে আনা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তৈরি পোশাক কারখানার মালিক বলেন, ‘হ্যাঁ এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, আগের চাইতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বেড়েছে। পুলিশ, শিল্প পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আছেন।’
পুলিশ-১, ঢাকা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, কারখানার শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক উন্নত হলেই অনেক সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে পুরোনো কায়দায় যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া হয় সেটা ভুল হবে। এতে কখনও ভালো হয় না। যা করতে হবে সমঝোতা, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস দিয়েই করতে হবে।
এই ঘটনার জন্য তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্বলতাকেও দায়ী করেছেন অনেকে।
অনেকের মতে, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অপসারিত নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানা রয়েছে আশুলিয়ায়। বেতন বৈষম্য নিয়ে এবারের শ্রমিক অসন্তোষের সূত্রপাত ঘটে মূলত সেই কারখানাগুলো থেকে।
এর বাইরে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান সর্বশেষ গত মার্চের নির্বাচনে বিজিএমইএর সভাপতির পদে আসেন। সরকার পতনের আগেই পালিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। পরে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরামের নেতাকর্মীরা সভাপতিসহ পুরো পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে পদত্যাগ করেন এস এম মান্নান। নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। যদিও পর্ষদ ভেঙে দিতে ফোরামের বিভিন্ন তৎপরতায় বর্তমান পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিসহ দু–চারজন ছাড়া পর্ষদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। এমন বাস্তবতায় সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও দুষছেন পোশাক মালিকদের অনেকে। তাদের মতে, সরকারের এত উদ্যোগের পরও এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে এখনই নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে পোশাক খাত।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু বলেছেন, বিএনপির নাম করে কেউ যদি এই শিল্পাঞ্চলে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে, তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।