সাভারে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৫০ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানার আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাভারেই হত্যা মামলা হলো ১৫টি।
রফিকুল ইসলাম (২২) নামে এক অটোরিকশা চালককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এ মামলাটি দায়ের করেন তার বড় ভাই রমজান আলী।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারপিট ও গুলিবর্ষণ করে হত্যা ও হত্যার হুকুম দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া।
নিহত অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম (২২) কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ডাকবাংলা পাড়ার বাসিন্দা মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন বিকেলে বিজয় মিছিল নিয়ে সাভার থানার দিকে যাবার পথে থানা রোডেই ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে পুলিশ। অন্যান্যের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম।
শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ছাড়াও মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ওরফে জি এস মিজান, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গণি, তার ছেলে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, কামরুল হাসান শাহিন, মেহেদী হাসান তুষার, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব, তার ভাই ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর, সাভার পৌরসভার কাউন্সিলর রমজান আলী, নূরে আলম সিদ্দিকী নিউটন, সেলিম মিয়া, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহসভাপতি নিজামউদ্দিন টিপু, সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদ চৌধুরী, সাভার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল রানা, বনগাঁ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজন, সেলিম মন্ডল, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খান, আমিনবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রকিব উদ্দিন, ভাকুর্তা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হোসেনসহ অন্যান্যরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম স্ত্রী আশামনি ও মা রওশন আরাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সাভারের গেন্ডা মহল্লায়। জীবিকা নির্বাহের জন্যে রফিকুল ইসলাম অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। সেদিন সন্ধ্যার দিকে থানা রোডের বৌবাজারের সামনে পিঠে বাম দিকে গুলিবিদ্ধ হয় সে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রফিকুল ইসলামের মরদেহ তার নানা বাড়ি জামালপুর সদর থানার বানারেরপাড় কবরস্থানে দাফন করা হয়।