পালিয়ে থেকে ফেসবুকে দোয়ার দরখাস্ত সেই সালাহ উদ্দিন টিপুর
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার প্রধান আসামি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকেই রয়েছেন পলাতক। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) তার ফেসবুক ওয়ালে সৌদি আরবে তোলা একটি ছবি দিয়ে লিখেন ‘দোয়ার দরখাস্ত’।
সরকার পতনের পর এটিই জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর ফেসবুকে প্রথম পোস্ট। তাঁর এ পোস্ট নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে।
সালাহ উদ্দিন টিপু ফেসবুক পোস্টটি আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৮০০ শেয়ার এবং প্রায় আট হাজার কমেন্ট পড়েছে। এতে প্রায় ১৩ হাজার রি-অ্যাক্ট পড়েছে। এরমধ্যে প্রায় ছয় হাজার হাসির রি-অ্যাক্ট।
ফেসবুকে টিপুর অনুসারীরা আলহামদুলিল্লাহসহ বিভিন্ন ধরনের পজেটিভ মন্তব্য করেছেন। তবে বেশিরবাগ মন্তব্যই তাঁর বিপক্ষে। কেউ কেউ তাঁকে লক্ষ্মীপুরে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখেছেন ‘শিক্ষার্থীদের ওপর কতটি গুলি করেছেন, কত মায়ের বুক খালি করেছে, তার হিসাব দিয়ে যান।’
আত্মগোপনে গোপনে যাওয়ার দুই মাস আট দিন পর ফেসবুক পোস্টের ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই টিপুর ফাঁসি দাবি করেছেন। অনেকে কটাক্ষ করে সমালোচনাও করেছেন। শাকিল নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ভাই, গুলির হিসাব দিয়ে যান।’ মুহা. কাউছার হাবীব লিখেছেন, ‘তোদের বিচার একদিন বাংলার জমিনে হবে ইনশা আল্লাহ’। ইদ্রিস মিয়াজি লিখেছেন, ‘আপনি তো প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন, আপনার হাতে এখনও রক্তের দাগ লেগে আছে, বাংলার মাটিতে আপনার জায়গা হবে না, আপনার বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবেন।’ মো. ইসমাই লিখেছেন, ‘কেন আবার এসে গুলি করতেন? আপনাকে আসলেই অনেক ভালো জানতাম, আপনি এটা এটা একটা কাজ করলেন, ছিঃ!’ আবদুল মুতালিব লিখেছেন, ‘থেরাপি তো মাফ হবে না, লক্ষ্মীপুরের কলঙ্কিত সন্তান।’ রাকিবুল হাসান নকিব লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ব্রো, সবগুলো গুলির হিসেব দিয়ে যাইয়েন, যতগুলো মায়ের বুক খালি করেছেন, এগুলোর হিসাব দিয়ে যাইয়েন, কীভাবে পারেন এসব আমার মাথায় আসে না।’ মাহিম হোসেন লিখেছেন, ‘মক্কা শহরের সবাই ভয়ে আছে, কখন আবার ফায়ার হয়?’ রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে ফাঁসির জন্য কবুল করুন।’ শাহাদাত হোসেন লিখেছেন, ‘পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন।’ রায়হান লিখেছেন, ‘মানুষ মেরে ওমরাহ পালন, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে দারুণ অভিনয়।’ গাজী সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘পীর সাহেব, আপনি পালাইছেন কবে?’ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বাসার ছাদ থেকে গুলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছিস। তোর ক্ষমা নেই। লক্ষ্মীপুরবাসী তোকে কখনও ক্ষমা করবে না। তোর বিচার লক্ষ্মীপুরেই হবে...’
আবার অনেকেই ছবিতে মন্তব্য করেছেন এটি পুরোনো। নতুন করে ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি পুরোনো ছবি ফেসবুকে ছেড়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে টিপুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে টিপু সরাসরি জড়িত। কিন্তু তিনি এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী নুর মোহাম্মদ বলেন, টিপু চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়েও দুই মাসে ধরা পড়েনি। তার গাড়িচালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মুন্নাফ বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকার বাসার ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেন টিপুসহ তাঁর সহযোগীরা। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চার শিক্ষার্থী। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনার জেরে পিটুনিতে নিহত হন আরও আটজন। ওই দিনই টিপু পালিয়ে যান। এরপর থেকে কেউই তাঁর অবস্থান জানতে পারেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চার শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। এ ছাড়া তিনি পুলিশের ওপর হামলায় করা মামলারও প্রধান আসামি।