এনজিও সেতুর সহকারী হিসাবরক্ষককে হত্যার অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ৫
টাঙ্গাইলের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সোশ্যাল আ্যাডভাসমেন্ট থ্রু ইউনিটির (সেতু) সহকারী হিসাবরক্ষককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই এনজিওর পাঁচ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহত হিসাবরক্ষক হাসান আলী (২৩) সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার পুঠিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে। তিনি ‘সেতুর’ জামালপুর জেলার পিয়ারপুর শাখার সহকারী হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন।
বেসরকারি সংস্থা ‘সেতু’ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের জামালপুর জেলার পিয়ারপুর শাখায় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক ও সহকারী হিসাবরক্ষক তিনজনে যোগসাজশ করে সংস্থাটির প্রায় ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ অভিযোগে ওই তিনজনকেই বরখাস্ত করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ‘সেতুর’ প্রধান কার্যালয় টাঙ্গাইলে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দিলেও ব্যবস্থাপক ও সহকারী হিসাবরক্ষককে প্রধান কার্যালয় ভবনের সপ্তম তলার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাসান আলির মা-বাবাকে ‘সেতুর’ প্রধান কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। হাসানের মা-বাবা সাত দিনের সময় চেয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে টাঙ্গাইল শহরের সদর সড়কে অবস্থিত ‘সেতুর’ প্রধান কার্যালয় সেতু টাওয়ারের পশ্চিম পাশ থেকে হাসান আলীর মরদেহ লাশ উদ্ধার করা হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, শুক্রবার রাতে ভবনের সপ্তম তলা থেকে লাফ দিয়ে হাসান আলী আত্মহত্যা করেছে। তবে হাসানের পরিবারের অভিযোগ, ‘সেতু’ কর্তৃপক্ষ হাসানকে কোনোভাবে হত্যা করে লাশ নিচে ফেলে দিয়েছে। পরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করছে তারা।
এ ঘটনায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ইতোমধ্যে সেতুর নির্বাহী পরিচালক মির্জা সাহাদত হোসেনের ছেলে ও সংস্থাটির উপপরিচালক (মানবসম্পদ) মির্জা সাকিব হোসেন, উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. শরিফুল ইসলাম, সাপোর্ট স্টাফ রাশেদুল ইসলাম ও কর্মসূচি ব্যবস্থাপক খায়রুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আদালতে তোলে। পরে বিচারক আসামিদের কারাগারে পাঠিনোর আদেশ দেন।
হাসান আলির বাবা লতিফ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে। আমাকে শুক্রবার রাতে সেতু অফিস থেকে ফোন করে বলা হয়, আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আপনি আসেন। পরে থানা থেকে ফোন করে হাসানের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।’
‘সেতুর’ উপপরিচালক (প্রশাসন) বিমল চক্রবর্তী বলেন, ‘পিয়ারপুর শাখার ম্যানেজার ও সহকারী হিসাবরক্ষককে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শাখায় সংযুক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রধান কার্যালয় ভবনের সাত তলায় তাদের থাকার জন্য একটি রুম দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাফ দিয়ে হাসান শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেন।’
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ বলেন, ‘হাসান আলীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।’