নির্বাচনি বিধি-বিধানের সীমাবদ্ধতা দূর করা দরকার : বদিউল আলম
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, একটা বিষয় সুস্পষ্টভাবে এসেছে। সেটা হলো আমাদের আইনকানুন, বিধিবিধানের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো দূর করা দরকার। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রয়োগ।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ড. বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান ও আদালতের মাধ্যমে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের একটা রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে তারা বিধি-বিধানের সংযোজনও করতে পারে৷ অগাধ ক্ষমতা দেওয়া ছিল। তবে এটার প্রযোগে সমস্যা ছিল। এই সমস্যাটা দূর করতে হবে।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবের নেতৃত্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। উনারা আগে নির্বাচন করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। উনারা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কী বিষয়ে আমাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার এবং অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, সে মতামত নিয়েছি। খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। উনারা অনেকগুলো বিষয় আলোকপাত করেছেন। সুস্পষ্ট বিষয়ে আমাদের তারা লিখিত দেবেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে৷’
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আইন, কানুন, বিধি-বিধান যেগুলো আছে, আরও শক্তিশালী করা দরকার। কমিশনের কার্যকারিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেগুলোর ব্যাপারে পরামর্শ ছিল। মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারাই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে তারা যেন আরও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচন হয়েছে।’
ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, ‘একটা হাইপ্রোফাইল সংস্কার কমিশন এখানে কাজ করছে। এজন্য সম্মান বোধ করছি। সহকর্মীরা আমাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কারণ এটা আমাদের অঙ্গীকার। সংবিধানেরও অঙ্গীকার হলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ নিশ্চিত করা৷ এটা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানই দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। এটা মনে রাখতে হবে এটা সংস্কার... এখানে অনেকগুলো ভালো জিনিস আছে। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা আছে আমরা সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। মাঠের অভিজ্ঞতা থেকে গণমাধ্যমসহ অংশীজনের কী অভিজ্ঞতা আছে, আমরা সেগুলো নিয়েও আলোচনা করেছি। হস্তক্ষেপ কোত্থেতে কীভাবে হয় এবং আইনগত কর্তৃত্বের বাইরে নির্বাচনকে কেউ হস্তক্ষেপ করে, এগুলো নিয়ে আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি৷ কোনো ধরনের রাখঢাক করিনি, যাতে সংস্কার কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়। আলটিমেটলি মানুষের আশা যেটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার, সে সমস্ত সুপারিশ আমরা করেছি। আমরা আশা করি কমিশন যদি সদয় হয়, আমরা আমাদের সুপারিশগুলো আরো কংক্রিট আকারে দিতে পারবো।’
নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাব আমরা যেটা বলেছি, নির্বাচন কমিশন তো নির্বাচন একা করে না। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সমস্ত অর্গান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে। নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে সংবিধান ও আইনে; সেই ক্ষমতা যেন পুরোপুরি প্রয়োগ করা যায়। আইনের প্রয়োগ কিন্তু পুরোপুরি হয় না। আইনের প্রযোগ করার ক্ষেত্রে যাতে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনাররা, নির্বাচন কর্মকর্তারা কোনো ধরনের কোনো কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হন, অন্য কেউ যাতে এখানে হস্তক্ষেপ করতে না পারে, আমাদের সেই সুপারিশ আছে।’
শফিউল আজিম বলেন, ‘এ ছাড়া সংবিধানে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেটা যাতে আরও সুনির্দিষ্ট করা যায় আইনের মাধ্যমে, আরেকটা হলো নির্বাচন ব্যয় ও নির্বাচন অপরাধের বিচার যাতে আরও সুনির্দিষ্ট করা যায়, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে অন্য কোথাও যাতে চলে যেতে না পারে, সেই সুযোগ যেন না থাকে। অর্থাৎ নির্বাচনের সময় কোনো কুকর্ম করে থাকলে পরবর্তীতেও যেন বিচার করা যায়, সেই ক্ষমতা যেন ইসির থাকে, সেই সুপারিশও করেছি।’