নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থানে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে আরও নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে এটাই গণতন্ত্রের রীতি। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই।
আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে ওয়াসিম আকরামসহ ১৪৩ জন ছাত্রদলের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মরণ করতে চাই গত ১৫ বছরে যারা শহীদ হয়েছেন, নুরুল আলম নুরুসহ শত শত নেতাকর্মী গুম, শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে স্মরণ করছি শ্রদ্ধার সাথে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশ ও জনগণের কাঁধে চেপে বসা এক পলায়নপর মাফিয়া চক্রের পলায়নের মধ্য দিয়ে পার হলো ঐতিহাসিক ২০২৪ সাল। নিরাপদ ও অপার সম্ভাবনাময় এক দেশ গঠনের ক্ষেত্রে আজ থেকে শুরু হলো নতুন বছর। নতুন বছরের শুরুতে বীর ছাত্র-জনতাকে জানাই এর শুভেচ্ছা। সারা দেশের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাই আমাদের লক্ষ্য উল্লেখ করে তারেক রহমান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে বলেন, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ ও যারা আলোচক ছিলেন তাদের বক্তব্যে একটি কথা উঠে এসেছে। নানা চড়াই উত্তরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বর্তমানে দেশের ছাত্র সমাজে সবার কাছেই জনপ্রিয় সংগঠন হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
ছাত্রদলের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যারা সংগঠনকে এগিয়ে নিতে জড়িত ছিলেন তাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার সীমাহীন ত্যাগ ও ভূমিকায় স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বর্তমানে বাংলাদেশ এখন এক বিপুল সম্ভাবনার ধার প্রান্তে দাঁড়িয়েছে। সকলকে খেয়াল রাখতে হবে কোন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার লোভ ও লাভের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে হবে। বিশেষ করে ছাত্র ও তরুণদের ভূমিকা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে কার্যকর এবং প্রভাবশালী রাষ্ট্রের ভূমিকায় দেখতে চাইলে সমৃদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং অবশ্যই মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রধান হাতিয়ার রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের লক্ষ্য হতে হবে লেখাপড়া, লেখাপড়া এবং লেখাপড়া।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা গত দেড় দশকে দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পলাতক স্বৈরাচার গত দেড় দশকে দল মত বর্ণ নির্বিশেষে তথা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। দেশ ও জনগণের কল্যাণের নেওয়া নিজ নিজ আদর্শ এবং লক্ষ্য কিংবা পলাতক স্বৈরাচারই ছিল প্রধান বাধা। এ কারণেই ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মতোই ২০২৪ সালে জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্ট মাফিয়া সরকার পতন আন্দোলনে দল মত নির্বিশেষে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
তারেক রহমান আরও বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে মাফিয়ার সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। অবশেষে মাফিয়া সরকারের পালিয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সামনে এখনতো বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক এবং মানবিক দেশ গড়ার পালা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যার যার দলীয় আদর্শ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। এটিই গণতান্ত্রিক রীতি। এটিই গণতান্ত্রিক বিশ্বের স্বাভাবিক ও স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। এমন অবস্থায় কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন জিজ্ঞাসাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, দেশপ্রেমিক সকল মানুষ সকল রাজনৈতিক দল স্রেফ অসৎ উদ্দেশ্যে তর্ক বলেই বিবেচিত করে। বরং আমাদের দল মনে করে রাষ্ট্র ও রাজনীতির এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার ও নির্বাচন প্রয়োজন। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যক্রম পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ ভোটের অধিকারের সুযোগটি পায়। যেটি রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতা, গণতন্ত্র মানবাধিকার নিশ্চিত করা না গেলে অন্য কিছুই টেকসই হয় না। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা উপেক্ষিত থাকলে জনগণ তাদের দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে। ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার?
তারেক রহমান বলেন, এখনো কেন মিথ্যা মামলায় জনগণকে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না বিএনপি। এজন্য জনগণের পক্ষের শক্তির রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। রাষ্ট্র ও সরকারের বিধি ব্যবস্থা তা নিয়ে তরুণদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রশ্নগুলো থাকাটাই স্বাভাবিক।
তারেক রহমান আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার হয়েছেন সাড়ে তিন কোটি। তারা ভোটার হলেও আজ পর্যন্ত তারা একটি জাতীয় নির্বাচন কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি এবং ইচ্ছা থাকলেও কেউ জনপ্রতিনিধি হতে পারেনি। সেই সুযোগ পায়নি। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক জনগণকে স্বাগত জানায়। বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সকল পরিস্থিতিতে ও ভিন্ন মতের পক্ষে; যা মহাসচিব ও তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ। কোন রাজনৈতিক দলকে জনগণ গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে তা নির্বাচনের মাধ্যমেই রায় দেবে জনতার আদালত। যারা জনগণের আদালতের মুখোমুখি হতে ভয় পায় কিংবা যাদের ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা ধৈর্য হারাবেন না। নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে, এ বিশ্বাস রাখুন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না বরং সতর্ক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেদেরকে জনগণের অস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থা রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে করুন সারা দেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মী সমর্থক নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলবো লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদেরকে জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত রাখ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন আদর্শ শিক্ষার্থী হিসেবে সচেষ্ট হও। সবার মনে রাখা উচিত আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর বাংলাদেশ। সুতরাং শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞানে বিজ্ঞানে শিক্ষিত করা না গেলে নিশ্চিতভাবেই হয়তো আবারো পথ হারাবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।