হাসিনার আমলে মামলায় জর্জরিত হয়েছিলেন ড. ইউনূস
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/08/yunus-afp.jpg)
পলাতক শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত করা হয়েছিলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার ১৬৮টি মামলা দায়ের করেছিলো। এরমধ্যে ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা একটি, দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি, গ্রামীণ টেলিকম সংশ্লিষ্ট মামলা ৬৪টি। এছাড়া গ্রামীণ কল্যাণের ৬৯টি, গ্রামীণ কমিউনিকেশনের ২৫টি ও গ্রামীণ ফিশারিজের নামে ৮টি মামলা করা হয়।
শ্রমিকদের দাবিকৃত পাওনা ড. ইউনূস গত ৫ আগস্টের আগেই পরিশোধ করে দেন। ফলে ১৬০টি মামলা শ্রম আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যায়। তবে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এক মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে অবশ্য গত ১ অক্টোবর শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করলে ড. ইউনূসকে খালাসের রায় দেওয়া হয়। অপরদিকে হাইকোর্টে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া পাঁচটি মামলার কার্যক্রম ও মানহানির মামলা বাতিল করে দেওয়া হয়। মামলাগুলো ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন ছিল।
ড. ইউনূসকে প্রতিনিয়ত আদালতে নিয়ে যাওয়া হতো এবং তাঁকে আদালতের খাঁচা সম্বলিত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে হেনোস্তা করা হতো। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে লিফট বন্ধ করেও আদালতের পাঁচ তলায় হাটিয়ে নেওয়া হতো।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের টাকা আত্মসাতের মামলা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালাস দেওয়া হয়। গত ১১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম খালাসের আদেশ দেন।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ জুন অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপরে ১১ আগস্ট ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী মামলার প্রসিকিউশন প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করে দুদক। সেই আবেদন বিচারক মো. রবিউল আলম গ্রহণ করলে ড. ইউনূসকে খালাস দেওয়া হয়।
শ্রম আইনের মামলায় দণ্ড বাতিল
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আদালতের দেওয়া কারাদণ্ড থেকে খালাস পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১ অক্টোবর শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ড. ইউনূসকে খালাসের রায় দেন।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এই মামলায় গত ১ জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডিত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন।
মানহানির মামলা
২০১১ সালে জাসদের যুগ্ম সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা বারের সদস্য নজরুল ইসলাম চুন্নু অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। সেই মামলা গত ২১ নভেম্বর বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট।
নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা কেবল অর্থের জন্য রাজনীতি করেন, এখানে কোনো আদর্শের ব্যাপার নেই। তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ময়মনসিংহ জেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম চুন্নু সেই বছরের ২১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের আদালতে একটি মানহানি মামলা করেন।
ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ওই মামলায় সমন জারি করলে ইউনূস মামলা দায়েরের চার বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন।