পাবনায় প্রসবের সময় বাচ্চার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন, তদন্ত কমিটি গঠন

পাবনায় এক প্রসূতির সন্তান জন্মের সময় নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট থেকে নবজাতকের মাথা বের করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের লেবার ও গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ গাইনি চিকিৎসক ডা. নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. জাহিদ ইসলাম ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা মাসুর।
রোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, পাবনা আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাই প্রবাসী মো. রমজান খাঁর স্ত্রী মোছা. শিউলী খাতুন (৩৫)। গর্ভবতী মা প্রথম থেকেই পাবনার গাইনি চিকিৎসক ডা. শাহীন ফেরদৌস শানুর নিয়মিত রোগী ছিলেন। হঠাৎ মঙ্গলবার ভোররাতে পেটে ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত ডা. শাহীন ফেরদৌস শানুর শহরের বাসার চেম্বারে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক তাকে দেখে অবস্থা জটিল মনে করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে হাসপাতালের ধাত্রী নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেটের ভেতরে রয়ে যায়। তারপর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা বের করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ও স্বজনের পাশাপাশি অন্য রোগীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দীপা মর্জিনা রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা করে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানান। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাচ্চা মৃত সেটি তারা পরে জানতে পেরেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নারগীস সুলতালা বলেন, ঘটনাটি শোনার সাথে সাথেই আমরা বিষয়টি নিয়ে মায়ের পরিপূর্ণ সেবা প্রদানসহ তার জন্য কি কি করণীয় সেটির ব্যবস্থা করছি। এই নারীর পেটে যে বাচ্চা ছিলো সেটি মৃত অবস্থায় ছিলো। মৃত বাচ্চা নিয়েই তিনি এখানে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পেটের বাচ্চার বয়স পরিপূর্ণ ছিলো না। সবেমাত্র সাত মাসে পরেছে। তবে রাতে মায়ের পেটের ব্যথা উঠলে তারা তাদের নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি দেখে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সেই মায়ের পেটের ও জরায়ুর অবস্থা দেখে বাচ্চা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের।
ডা. নারগীস সুলতালা আরও বলেন, মেয়েটির গর্ভকালীন সময় থেকেই ডায়াবেটিক ও থাইরয়েডের সমস্যা ছিলো। তিনি নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করতেন। ভুক্তভোগী নারীর পেটে পানির পরিমাণ খুবই কম ছিলো। এটি একটি বিরল ঘটনা। পেটে থাকা মৃত শিশুটির বয়স কম হওয়াতে তার শরীরের কোনো কিছুই শক্ত ছিলো না। এমনকি ওই শিশুটির দেহের মাথার অংশ পেটের উপরে ও পা নিচের দিকে ছিলো। নরমাল প্রসব করানোর সময় সেবিকারা জোড়ে টান দিলে ঘাড় থেকে মাথা ছিড়ে যায়। পরে সিজার করে তার পেট থেকে মৃত শিশুর অবশিষ্ট অংশ (মাথা) বের করা হয়েছে। এই ঘটনা কেনো হয়েছে, কোনো অসাবধানতা অবলম্বন করায় হয়েছে কিনা সেটি তদন্ত করে দেখছি আমরা। কোনো রকম অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. রফিকুল হাসান বলেন, রোগীর অবস্থা এখন ভালো আছে। গাইনি চিকিৎসক নারগীস সুলতাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। এরপরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে রাতে বা সকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের ওই পরিবারের সাথে কথা বলে ডেলিভারির কাজটি করা উচিত ছিলো। এই ঘটনায় চিকিৎসকসহ যারা ছিলেন তাদেরকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি। সকলের সাথে কথা বললেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।