বিধবা রাজিয়া বেগমের মানবেতর জীবন!

জীবনযুদ্ধে একা লড়াই করছেন এক বৃদ্ধ বিধবা নারী। বসবাস করছেন এক জরাজীর্ণ ভাঙা ঘরে। যা যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। মাথার ওপর জরাজীর্ণ টিনের ছাউনি, দেওয়ালে ভাঙা কাঠ ও বাঁশের অবলম্বন—এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। বলছি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রাজিয়া বেগমের কথা।
দূর থেকে দেখে মনে হয় এটা একটি পরিত্যক্ত ভাঙা ঝুপড়ি ঘর। এখানে কোনো মানুষের বসবাস নেই। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য কয়েকটি বাঁশের সঙ্গে টুকরো টুকরো পলিথিনের কাগজ দিয়ে ঘেরা এই ভাঙা ঝুপড়ি ঘরে রাজিয়া বেগম স্বামী-সন্তানহীন এক অসহায় জীবন যাপন করছেন। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। প্রায় এক যুগ আগে স্বামী মারা যায়। নেই কোনো সন্তান। একাই কাটছে দিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সভ্যতার এ যুগে এমন ঘরে মানুষের থাকাটা বিরল। বলতে গেলে একদম জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় কয়েকটি বাঁশের সঙ্গে টুকরো টুকরো পলিথিন দিয়ে ঘেরা মরিচাধরা টিনের বেড়া আঁকড়ে থাকছেন তিনি।
রাজিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়, আবার বৃষ্টির সময় আশ্রয় দেয়। এইভাবেই টিকে আছি। স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে যায়। একটি বাড়ি পেলে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো।’
স্থানীয়রা জানায়, রাজিয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরেই অসহায়। সহায়তার অভাবে তার জীবন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মারুফ বিল্লাহ বলেন, রাজিয়া বেগম পলিথিনে মোড়ানো ঘরেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্ষা কিংবা শীতের মৌসুমে ঘরটিতে বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
রাজিয়া বেগমের প্রতিবেশী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ভাঙা ঘরে কোনোরকম থাকে। বৃষ্টি নামলে পানিতে সব কিছু ভিজে যায়। আমরা এলাকার মানুষ যে যতটুকু পারি তাকে সাহায্য করি। সেটা খেয়ে তার জীবন চলে।
সামাজিক সংগঠন পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত বলেন, রাজিয়া বেগম এক নিঃসঙ্গ ও অসহায় নারী। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়—ঠিকমতো তিন বেলাও খেতে পারেন না তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গালুয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, রাজিয়া বেগম বিধবা ভাতার জন্য কখনও আসেননি। ভিজিএফ চাল দেওয়ার মতো তার বয়স নেই। তবে তাকে সরকারি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজিয়া বেগমকে তার বসতঘর মেরামতের জন্য টিন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাকে ঈদ উপলক্ষে সরকারি ভিজিএফ ১০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।