চট-পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে বৃদ্ধার মানবেতর জীবন

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউপির জগৎনগড় গ্রামের বৃদ্ধা জোসনা বেগম (৬০)। তার নেই কোনো বসতভিটা। তিনি জগৎনগর গ্রামে গোবরচাপা হাট-মিঠাপুর রোডের ধারে পলিথিন ও চট দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে বাস করছেন। ঘরে তিনবেলা খাবার জোটে না। অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন বৃদ্ধা জোসনা বেগম। আশপাশের মানুষ একটু সাহায্য করলেও তা যথেষ্ট না, মিলে না ওষুধের খরচও। মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন অসহায় এই বৃদ্ধা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি ঝুপড়ি ঘর। একটি ঘরে বসবাস করেন জোসনা বেগম। অপর ঘরে বসবাস করেন তার একমাত্র ছেলে, যিনি ভবঘুরে প্রকৃতির। বাহির থেকে ডাক দিতেই ঝুপড়ি ঘরের ভিতর থেকে আওয়াজ দেন জোসনা বেগম। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, একটি ছেঁড়া বালিশে মাথা দিয়ে মাটিতে বিছানা পেতে শুয়ে আছেন তিনি। শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন। সঙ্গে আছে একটি ছেড়া কাঁথা আর একটি মশারি। ঘরে চাল, ডাল, সবজি বলতে কিছুই নেই।

জোসনা বেগম বলেন, তার মাথা গোজার ঠাঁই ছিল। বেঁচে ছিলেন তার স্বামীও। এক যুগ আগে তার স্বামীর সংসারে অভাব দেখা দিলে বসতভিটা প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে। অন্য এক প্রতিবেশীর জায়গায় টিন দিয়ে ঘর করে বসবাস করেন। এর কিছুদিন পরে তার স্বামী মারা গেলে প্রতিবেশীরা থাকতে না দিলে রাস্তায় ঝুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকে রাস্তার ধারে চলছে তার সংগ্রামী জীবন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তার কাছে ঘুরেও পাননি কোনো সহযোগিতা। তাই সারা দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করে যা পান, তা দিয়ে কোনোরকমে সন্ধ্যায় একবেলা ভাত খান। বসবাস করার মতো একটি ঘর পেলে কিংবা অর্থ সাহায্য পেলে খুব উপকার হবে বলে জানান তিনি।
জগৎনগর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, জোসনা বেগম রাস্তার ধারে জিনিসপত্র নিয়ে ছিল। গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে তার জন্য সামান্য ঝুপড়ি ঘর করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি বলেন, ‘বৃদ্ধা জোসনা বেগমকে একটি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত, কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প বন্ধ আছে। সেহেতু আমরা তাকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করব। একইসঙ্গে তার বাসস্থানের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়েও চেষ্টা করব।’