শহীদ বাবার পাশে শায়িত হলেন লামিয়া

জুলাই বিপ্লবে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া গ্রামের শহীদ মো. জসিম উদ্দিন হাওলাদারের কবরের পাশেই সমাহিত করা হয় মেয়ে লামিয়াকে। রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে দুমকির পাঙ্গাসিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বাবার কবরের ডানপাশে লামিয়াকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে, শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন শহীদ কন্যা লামিয়া।
লামিয়ার জানাজা নামাজে উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কবির রিজভী ও এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
এ ছাড়াও কেন্দ্রীয়, বরিশাল মহানগর ও জেলা বিএনপি ও এনসিপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লামিয়ার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যার দিকে দুমকির পাঙ্গাসিয়া গ্রামে শহীদ বাবা জসিম উদ্দিনের কবর জিয়ারত শেষে আলগী গ্রামে নানার বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে কয়েকজন বখাটে রাস্তা থেকে লামিয়াকে তুলে গহিন জঙ্গলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করে বখাটেরা। বিষয়টি কাউকে জানালে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় তারা। পরদিন ১৯ মার্চ লামিয়া নিজে থানায় গিয়ে ধর্ষক সাকিব মুন্সী (১৭) ও সিফাত মুন্সী (১৭) নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। পুলিশ ওইদিন রাতেই সাকিব মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ২২ মার্চ আরেক আসামি সিফাত মুন্সিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত লামিয়ার দাদা সোবাহান হাওলাদারের ভাষ্যমতে, দুই দিন আগে লামিয়া তার মায়ের কাছে ঢাকাতে যায়। গতকাল শনিবারও নাতনির সঙ্গে কথা বলেন দাদা সোহবান। রাতে মোবাইলফোনে জানতে পারেন লামিয়া মারা গেছেন। প্রথম কীভাবে মারা গেছেন তা জানতে পারেনি। পরে সকালে জানতে পারেন গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন লামিয়া।
নিহত লামিয়ার স্বজনরা বিচারের দাবি করে বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকে লামিয়া বিচারহীনতার ভয়ে ভুগছিলেন। গতকাল একটি খবর পান আসামিদের জামিন হয়ে গেছে। এই খবর পাওয়ার পরেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে লামিয়া আত্মহত্যা করেন।’
তবে জেল হাজতে থাকা দুই আসামির জামিন হয়নি। তারা জেল হাজতেই আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, মামলার দুই আসামিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। আসামিরা আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। তাদের জবানবন্দি আমলে নিয়ে অধিকতর গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে।