এ মাসেই দেশে ফেরার সম্ভাবনা এন্ড্রু কিশোরের
গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ক্যানসারে (নন-হজকিন লিম্ফোমা) আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। দীর্ঘদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর এবার দেশে ফিরবেন তিনি। চলতি মাসের শেষের দিকে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এন্ড্রু কিশোরের ঘনিষ্ঠজন, কণ্ঠশিল্পী মোমিন বিশ্বাস।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সকালে এনটিভি অনলাইনকে মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে, দেশবাসীর দোয়ায় উনি অনেকটা ভালো আছেন এখন। ডাক্তারদের বক্তব্য অনুযায়ী, এ মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে ঠিক কবে ফিরবেন, এ ব্যাপারে ডাক্তাররা আরো কয়েক দিন পর পরিষ্কার করে জানাবেন। দেশে ফিরলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ করে তিনি ফিরছেন, এমনটা বলা ঠিক হবে না। কারণ, ক্যানসারের চিকিৎসা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাঁর পরবর্তী চিকিৎসা প্রক্রিয়া কেমন হবে, কীভাবে চলবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত আরো কিছুদিন পরে ডাক্তাররা জানাতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতো সবার দোয়ায় আমরাও অধীর আগ্রহে, একবুক আশা নিয়ে কণ্ঠরাজের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছি।’
গত মাসে এন্ড্রু কিশোরের সম্মানে কনসার্টের আয়োজন করা হয় সিঙ্গাপুরের জালান বুকিত মেরাহর গেটওয়ে থিয়েটারে। সেখানে গান গেয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, মিতালী মুখার্জি ও মোমিন বিশ্বাস।
ওই কনসার্টে চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। অসুস্থ শরীর নিয়েও গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের আবেগে ভাসিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে গিয়ে কেঁদেছেন অনেক ভক্তও। কনসার্টের শিরোনাম ছিল ‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’।
কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এন্ড্রু কিশোর। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এর পর থেকেই থেমে থেমে তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ক্যানসারে আক্রান্ত এই শিল্পী সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা চালানোর জন্য গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে নিজের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন। ক্যানসার ধরা পড়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চিকিৎসার জন্য তিনি কারো কাছে হাত পাতবেন না। তাই রাজশাহী শহরে ভদ্রা আবাসিক এলাকায় পাঁচ বছর আগে কেনা ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন।
বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাঁকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তাঁর।
এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সংগীতের পাঠ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন কিশোর। তাঁর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে।
তাঁর রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তাঁর গান শোনেন এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ব্যক্তিগত জীবনে এন্ড্রু কিশোরের দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক।