বন্ধ সিনেমা হল, ক্ষতি ৬ কোটির বেশি
করোনাভাইরাস আতঙ্কে সারা দেশের সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন। ১৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ থাকবে। এতে চলচ্চিত্র অঙ্গন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার (২০ মার্চ) সারাদেশে মুক্তির প্রক্রিয়ায় ছিল অপু বিশ্বাস ও নায়ক বাপ্পী চৌধুরী অভিনীত, দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ ও সুজন বড়ুয়া পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বান্ধব’। আগামী ২৭ মার্চ মুক্তির জন্য প্রস্তুত ছিল দুটি চলচ্চিত্র ইদ্রিস হায়দার পরিচালিত ‘নীল ফড়িং’ ও কামার আহমাদ সাইমন পরিচালিত ‘নীল মুকুট’। এতে করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে চলচ্চিত্র অঙ্গন।
কেবল প্রযোজকদের ক্ষতি হবে তিন থেকে চার কোটি টাকা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাসমুল আলমের দাবি এমনটাই।
শুধু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, বিশাল অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন হল মালিকেরাও। দেশে এখন চালু হলের সংখ্যা ৭০টি। বন্ধ হওয়ায় সব হল মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৭ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন। এতে করে ১৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল অর্থাৎ ১৬ দিনে শুধু সিনেমা হলগুলোর আর্থিক ক্ষতি হবে আড়াই কোটির বেশি।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার সার্ভার থেকে সাধারণত সিনেমা হলে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন করা হয়। সেখানেও রয়েছে বড় ধরনের আয়োজন, রয়েছে কর্মচারী। সেখানে শুধু কর্মচারীর বেতন দিতে হয় মাসে চার লাখ টাকা। তবে ১৬ দিন বন্ধ থাকার পর ফের চালু করতে বাড়তি ১০ লাখ টাকা গুনতে হবে বলে দাবি জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী (সিইও) আলিমুল্লাহ খোকনের।
আজ (১৯ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই কদিনে আমাদের প্রযোজকদের ক্ষতি হবে তিন থেকে চার কোটি টাকা। কারণ একেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে কমপক্ষে আশি লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। এতে করে চারটি ছবির নির্মাণব্যয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। আবার সিনেমা মুক্তির জন্য কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। যেমন—পোস্টার-ব্যানার, এগুলোতে আরো অর্ধকোটি। এতে করে এ কদিনে প্রায় চার কোটি টাকা ক্ষতি হবে প্রযোজকদের।’
আলম আরো বলেন, ‘আমরা প্রযোজকেরা সিনেমা নির্মাণ করি। সেটি মুক্তি দিই। দেখা যায়, এই টাকা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে আবারও নতুন চলচ্চিত্র শুরু করি। যেহেতু ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েও মুক্তি দেওয়া যায়নি, তাই টাকাটা পড়ে রইল। এতে করে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন।’
মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্তমানে চালু সিনেমা হলের সংখ্যা ৭০টির মতো। কর্মচারীর বেতন ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মিলিয়ে প্রত্যেক সিনেমা হলে প্রতিদিন খরচ প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এটা সিনেমা হল বন্ধ অবস্থায়। হল চালু থাকলে সঙ্গে যুক্ত হবে বিদ্যুৎ বিল। এই হিসাবে এই কদিনে আমাদের সিনেমা হলে ক্ষতি হবে আড়াই কোটির বেশি।’
আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘সিনেমা প্রদর্শন করার জন্য আমাদের যে সার্ভার আছে, সেটা চালাতে সে জনশক্তি রয়েছে, শুধু তাঁদের বেতন চার লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয়, এই ১৬ দিন হল বন্ধ থাকার পর আমাদের মেশিনগুলো ফের চেকআপ করাতে হবে। সেক্ষেত্রে আরো দশ লাখ টাকা খরচ হবে।’
খোকন আরো বলেন, ‘তবে বিষয়টি আমি ইতিবাচক দেখি। কারণ এখন করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে করে সবাই নিজের অবস্থান থেকে ছাড় দিতে হবে। সরকার একা কিছুই করতে পারবে না। আর সব কিছু করার দায়িত্বও সরকারের একার নয়। আমরা যদি সরকারের পাশে না দাঁড়াই, তবে দেশে মহামারির আকার ধারণ করতে সময় লাগবে না। এই আর্থিক ক্ষতি মেনে নিতেই হবে।’
আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে দেশের সব কোচিং সেন্টার। গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ঘোষণা দেয়, ২ এপ্রিল পর্যন্ত সব হল বন্ধ থাকবে।