বিরক্ত হয়ে চলচ্চিত্রে কাজ বন্ধ করেছি : নাসরিন
পুরো নাম নাসরিন আক্তার নার্গিস হলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনে শুধু নাসরিন নামেই অধিক পরিচিত। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘লাভ’ ছবির মধ্য দিয়ে ১৯৯২ সালে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন অভিনেত্রী নাসরিন। নৃত্য সহশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও দেশের প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত পাঁচ শাতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এখন তাঁকে সিনে অঙ্গনে খুব একটা দেখা যায় না।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় নাসরিনের। জানান, অনেকটা বিরক্ত হয়েই চলচ্চিত্রে কাজ বন্ধ রেখেছেন। ব্যক্তিগত জীবনসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে তাঁর কথায়।
কেমন আছেন, জানতে চাইলে নাসরিন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। প্রায় তিন মাস আগে অসুস্থ ছিলাম। পেটে টিউমার হয়েছিল। অস্ত্রোপচারও হয়েছে, এখন সুস্থ। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ভালো আছি। তবে করোনার কারণে ঘরবন্দি, আমি ভালো থাকলেও আশপাশের অনেকেই ভালো নেই। বিশেষ করে আমাদের চলচ্চিত্রে যাঁরা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাঁরা অনেক কষ্টে আছেন। তাঁদের জন্য অনেক খারাপ লাগে।’
করোনার এই দুঃসময়ে অনেকেই নিম্ন আয়ের শিল্পীদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। এ প্রসঙ্গ তুললে নাসরিন বলেন, ‘দেখেন, আমি যে অনেক টাকা-পয়সার মালিক, তা নয়। তবুও কিছু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। বছর দুয়েক ধরে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়, তাই মঞ্চে কাজ করছি। প্রতিটি স্টেজ শো শেষ করে মাটির একটি ব্যাংকে টাকা জমাতাম। সেই টাকাটা ঈদের সময় নিম্ন আয়ের কিছু শিল্পীর মধ্যে বিতরণ করেছি। এ ছাড়া করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে পাশের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বোনাস প্রসঙ্গে নাসরিন বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর মার্চের দিকে আমাকে একবার ফোন দিয়েছিল শিল্পী সমিতির অফিস সহকারী। বলেছিল আমার জন্য একটি প্যাকেট রাখা হয়েছে। আমি তখন একজন নাচের মেয়েকে বলেছিলাম সেটি যেন সে নিয়ে নেয়। এরপর আর কেউ ফোন দেয়নি। আমি ও আমার স্বামী দুজনই সমিতির সদস্য, আমরা কেউ বোনাস পাইনি। তবে যারা পাচ্ছে, তারা আমাদেরই সহকর্মী, এ কারণে আমি খুশি।’
দুই বছর ধরে নাসরিনকে চলচ্চিত্রে তেমন দেখা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘বিরক্ত হয়ে চলচ্চিত্রে কাজ বন্ধ করেছি। দুই-আড়াই বছর আগে আমি কয়েকটি ছবিতে আইটেম গানের কাজ করেছিলাম। একই পোশাক পরে তিনটি ছবির আইটেম গানে কাজ করেছি। প্রযোজক নাকি বাজেট দেয় না। নাচ করতে গিয়ে দেখেছি সব নাচেরই প্রায় একই মুদ্রা। এসব দেখে আর কাজ করতে ইচ্ছে করেনি।’
স্টেজ শো প্রসঙ্গে নাসরিন বলেন, ‘মঞ্চের কাজ অনেক উপভোগ করি। দেশের সাধারণ মানুষ যে কতটা ভালোবাসে, তা নিজের চোখে দেখতে পাই। আর মঞ্চে আমি সাধারণত কাজ করি সার্কাস অনুষ্ঠানগুলোতে। সেখানে সার্কাসের পাশাপাশি আমার অভিনীত চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানগুলোর সঙ্গে অভিনয় করি। পুরোনো দিনের সিনেমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরি। সবাই অনেক সম্মান করে।’
দীর্ঘদিন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মন্দাভাব। এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে শুটিং বন্ধ। এবারের ঈদুল ফিতরে নতুন ছবি মুক্তি পায়নি। করোনার পর চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নাসরিন বলেন, ‘আসলে চলচ্চিত্র বেশ কয়েক বছর ধরেই ভাইরাসে আক্রান্ত। ভালো গল্প কম, মানসম্পন্ন শিল্পীর অভাব, সিনেমা হল কমে গেছে। এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইলে নতুন করে ভাবতে হবে। সময়োপযোগী গল্প প্রয়োজন, গল্পের চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী প্রয়োজন; আর চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজন আধুনিক সিনেপ্লেক্স। তবেই ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র।’
বর্তমানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় যুক্ত নাসরিন। হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ‘সত্তা’ সিনেমায় অনন্য অভিনয়ের জন্য নাসরিন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। বর্তমানে নাসরিন দুই সন্তানের জননী। স্বামী রিয়েল খানও চলচ্চিত্র অভিনেতা।