কেমন হলো ‘স্পাইডারম্যান হোমকামিং’?
চলে এসেছে নতুন স্পাইডারম্যান। গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মারভেলের নতুন চলচ্চিত্র ‘স্পাইডারম্যান হোমকামিং’। আগের স্পাইডারম্যানের সব হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে এবার তাকে অ্যাভেঞ্জারের জন্য উপযোগী করে তোলা হয়েছে। যার এক ঝলক দেখা গিয়েছিল ক্যাপ্টেন আমেরিকা সিভিল ওয়ারে।
কেমন করলেন নতুন এই স্পাইডারম্যান? চলুন জেনে নিই টাইমস অব ইন্ডিয়ার চলচ্চিত্র পর্যালোচনা থেকে।
ছবিটির গল্পে দেখা যায়, সুপারহিরোদের নিজের আদর্শ মেনে নেওয়া স্পাইডারম্যান বা পিটার পার্কার (টম হল্যান্ড) অ্যাভেঞ্জারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে। এর কয়েক মাস পর পিটার এই ধরনের নায়কোচিত অভিজ্ঞতার জন্য আবার উদগ্রীব হয়ে ওঠে। কিন্তু অ্যাভেঞ্জারে সুযোগ করে দেওয়া আয়রনম্যান ওরফে টনি স্টার্ককে (রবার্ট ডাউনি জুনিয়র) স্কুলে নিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি তাকে ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলে। যখন সঠিক সময় আসবে, তখন সে অ্যাভেঞ্জারকে তার সেরাটুকু দেওয়ার সুযোগ পাবে।
কিন্তু স্পাইডারম্যানের অভিধানে ধৈর্য বলে কোনো শব্দ নেই। টনি স্টার্কের কাছে অ্যাভেঞ্জারের উত্তেজনায় টইটম্বুর একটি চাকরির প্রস্তাবের জন্য বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হতে থাকে স্পাইডারম্যান। নিজেকে অ্যাভেঞ্জারের শিক্ষানবিশ হিসেবে বিভিন্ন ডাকাতি এবং অপরাধের বিরুদ্ধে লড়তে থাকে স্পাইডারম্যান। অতিদ্রুতই তার সঙ্গে পরিচয় হয় খলনায়ক ভালচার বা শকুনের (মাইকেল কিটন)। স্পাইডারম্যান কি পারবে জনগণের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা শকুনকে থামাতে?
ছবিটির জন্য পরিচালক জন ওয়াটসের প্রশংসা করতেই হবে। আগের ছবির মতো, স্পাইডারম্যানের উৎপত্তি কীভাবে হলো, কীভাবে সে তার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারল এবার এসব কিছুই দেখানো হয়নি, বরং সরাসরি চলে গেছেন স্পাইডারম্যানের স্কুলের দৃশ্যে। ফলে শুরুতেই দর্শকদের মধ্যে চমক সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া এবার কোনো আঙ্কেল বেন বা আন্ট মে-এর কোনো কাহিনী বা স্পাইডারম্যানের প্রতিশোধের গল্প রাখা হয়নি। যদিও আন্ট মে (মারিসা টমেই) চরিত্রটি রাখা হয়েছে। আবার গতানুগতিক স্পাইডারম্যান চলচ্চিত্রের মতো হাস্যরসাত্মক ও রোমাঞ্চকর স্টান্ট দৃশ্য ছবিটিতে রাখা হয়েছে।
স্পাইডারম্যান চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে টম হল্যান্ড ছিলেন যথেষ্ট আন্তরিক। বিগত স্পাইডারম্যান সিরিজে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করা টম ম্যাকগুইরে অথবা অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের মতো অত সুদর্শন নন এই ব্রিটিশ অভিনেতা। তবু তিনি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ঠিক মতোই।
তাছাড়া আগের স্পাইডারম্যান সিরিজের নায়কদের যে আবেগ থাকত, তা নতুন এই স্পাইডারম্যানে অনুপস্থিত। তবে এই অনুপস্থিতিই নতুন এই স্পাইডারম্যানকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। আগের স্পাইডারম্যান চলচ্চিত্রে নায়কদের লক্ষ্য ছিল দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি স্পাইডারম্যানের চাচা ‘আংকেল বেন’-এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া। কিন্তু স্পাইডারম্যান হোমকামিং চলচ্চিত্রে এই লক্ষ্য সম্পূর্ণ বদলে যায়। নতুন এ স্পাইডারম্যানের নতুন লক্ষ্য হয় অ্যাভেঞ্জার প্রধান টনি স্টার্ককে খুশি করে অ্যাভেঞ্জারে একটি জায়গা করে নেওয়া।
স্পাইডারম্যান হোমকামিং চলচ্চিত্রে নতুন এ লক্ষ্য পূরণে স্পাইডারম্যানের চেষ্টা ছাড়াও, বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত হন আয়রনম্যান বা টনি স্টার্ক। এ ছাড়া খলনায়ক চলচ্চিত্রে মাইকেল কিটনের দুর্দান্ত অভিনয় আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।
স্পাইডারম্যান হোমকামিংয়ের মাধ্যমে মারভেল দুনিয়ায় নতুনভাবে জায়গা করে নিয়েছে স্পাইডারম্যান। তবে মারভেল দুনিয়ায় নতুন এই স্পাইডারম্যানের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব অবশ্য পিছু ছাড়ছে না।
স্পাইডারম্যান হোমকামিং (২০১৭)
চরিত্রায়ণে
টম হল্যান্ড, মাইকেল কিটন, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, মারিসা টোমেই, জন ফাবেরু, জেনদায়া।
পরিচালক : জন ওয়াটস।
ছবির ধরন : অ্যাকশনধর্মী।
সময়সীমা : দুই ঘণ্টা ১৩ মিনিট।