মঞ্চে আসছে প্রাচ্যনাটের ‘কইন্যা’
কালারুকা নামের জনপদের মানুষ মনে করে কইন্যাপীর তাদের দেখে রাখে। কইন্যাপীর এসেছিল সেই কবে এই কালারুকায়; গত হয়েছে তাও যুগ যুগ আগে, তবু এমন বিশ্বাস বর্তমান, তার সাথী 'বহুরূপী'কে সে রেখে যায় খালি বাড়ীর এক পুকুরে, মাছ রূপে।
খালি বাড়িতে এখন থাকে নাইওর ও দিলবর- দুই ভাই। জনপদের সবাই জানে, বিপত্নীক নাইওরের ওপর কইন্যাপীর ভর করে আছে। ইশকে মাতোয়ারা নাইওর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে জলের বহুরূপীর সাথে, যেন বহুরূপীর কাছে নিজেকে জানার দীক্ষা নেয়। এই খালি বাড়তে আশ্রিত মেছাব, নাইওরের ছোটভাই দিলবরের সাথে বিয়ের আয়োজন করে নিজ গ্রামের এক কইন্যার, যাকে সে নিজেই একসময়ে বিয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়; যার প্রতি এখনো রয়েছে তার আসক্তি। যৌনতার ভিন্ন ভাবনায় বিশ্বাসী দিলবরকে বিবাহে সে রাজি করায় হরিরামপুরের এক মৌলভী সাহেবজাদার বানানো ওষুধের কথা বলে। কইন্যার আগমন ঘটে কালারুকায়।
দুই গ্রামের বিচ্ছিন্নতার প্রতীক এক খাল- চেঙ্গের খাল। চেঙ্গের খালের পশ্চিমপারের মৌলভী সাহেবজাদার ধর্মচিন্তা পূর্বপারের কালারুকার নাইওর আলীর ধর্মচিন্তা থেকে আলাদা, সে চায় ওই পারে কালারুকায় তার প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা করতে।
অপূর্ণ কইন্যাও এক সময় আত্মিক ও আঙ্গিক নিঃসঙ্গতা ঘোঁচাতে ইশকে মজে বহুরূপীর সাথে। রহুরূপী রূপ বদলায়, 'কইন্যা' ধরতে পারে না কে সে ? এরই মধ্যে সে টের পায় নিজের দেহে অন্য দেহের উপস্থিতি।
দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয় যখন সাহেবজাদা তার কার্য হাসিল করতে মেছাবকে ব্যবহার করতে শুরু করে। মেছাবও তথাকথিত এই খালি বাড়িতে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সাহেবজাদাকে সহযোগিতা করে। সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। মোক্ষ লাভে প্রত্যাশী নাইওর নিজেকে বিলীন করে আত্মার মিলন ঘটাতে, অহিংস নাইওর খুঁজে নেয় তার করণীয়, ঘোষণা দেয় স্বইচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার কথা। কইন্যাও যেন তার প্রতি এক অজানা আকর্ষণ অনুভব করে। সাহেবজাদা খোঁজে কর্তৃত্ব, মেছাব খোঁজে প্রভাব আর অস্তিত্ব, কইন্যা খোঁজে বহুরূপী আর নাইওর প্রশান্ত মনে মিলিত হতে চায় পরম আত্মার সাথে। যবনিকায় নিরুপায় কইন্যা শুধু তার গর্ভের শিশুর প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসায় প্রত্যাশা করে অন্যরকম তাৎপর্যময় এক ভবিষ্যতের।
এভাবে এগিয়ে চলে কাহিনী। দ্বন্দ্বই এগিয়ে নিয়ে যায় নাটককে সামনের দিকে। আগামীকাল ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মূল হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্যনাটের আলোচিত প্রযোজনা ‘কইন্যা’। নাটকটি রচনা করেছেন মুরাদ খান এবং নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম।