‘গলা কেটে পোস্টার কপি করা হয়’
একসময় সিনেমা ব্যানার ও পোস্টার করা হতো হাতে এঁকে। প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে বদলে বর্তমানে পাল্টে গেছে পোস্টারের ধরন। এখন পোস্টারের জন্য আলাদা করে ফটোশুট হয়, ছবি নির্মাণের সময় তোলা আলোকচিত্রও ব্যবহার হয়। তবে বিদেশি সিনেমার পোস্টার থেকে নকল করে দেশে পোস্টার বানানোর ঘটনাও ঘটছে। কখনো তো শুধু মাথা সম্পাদনা করে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে নকল পোস্টারের পাশাপাশি, মৌলিক ও নান্দনিক পোস্টারও তৈরি হচ্ছে। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন নতুনরা। সিনেমার পোস্টার নিয়ে নানা বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন ডিজাইনার অর্নিল রাব্বী। তিনি ‘প্রেমী ও প্রেমী’, ‘নবাব’, ‘বস টু’, ‘ধ্যাততিরিকি’, ‘ইয়েতির অভিযান’, ‘ডেঞ্জার জোন’, ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’, ‘নূর জাহান’, ‘পাষাণ’সহ অনেক ছবির পোস্টার নকশা করেছেন।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সিনেমার পোস্টারে নকল বেশি দেখা যায়, কেন?
অর্নিল রাব্বী : আমাদের দেশের বেশির ভাগ সিনেমারই বাজেট কম থাকে, যার কারণে সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পোস্টারের জন্য প্রযোজক কোনো বাজেট রাখেন না। এমনকি শুটিংয়ের স্থিরচিত্রও নেওয়া হয় না। সিনেমার ফুটেজ থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়, যাতে কম খরচে পোস্টার বানানো যায়। অনেক সময় প্রযোজকদের ইচ্ছাতেই মাথা কেটে, গলা কেটে পোস্টার কপি করা হয় অথবা হুবহু অন্য সিনেমার পোস্টার একটু এদিক-সেদিক করে পোস্টার তৈরি বানানো হয়।
প্রশ্ন : অনেক পরিচালক অভিযোগ করেন, আমাদের দেশের ডিজাইনাররা ভালো কাজ পারেন না, যে কারণে নকল পোস্টার হয়। আপনার মত কী?
রাব্বী : আসলে এটা একদমই ভুল, আসলে প্রযোজকদের ব্যর্থতা, তাঁরা পোস্টারের জন্য বাজেট রাখেন না। শুটিং স্টিল দিয়ে পোস্টার বানান। বলিউড ও হলিউডে আলাদাভাবে পোস্টারের জন্য ফটোশুট করা হয়। অবশ্য আমাদের দেশেও এখন অনেক প্রযোজক পোস্টার শুট করে নেন। আর এখন আন্তর্জাতিক মানের পোস্টার বানানোর মতো দক্ষ ডিজাইনার দেশে আছেন। এটা পুরোটাই প্রযোজকের ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন : আপনার কাজ সম্পর্কে বলুন।
রাব্বী : এখন পর্যন্ত জাজ মাল্টিমিডিয়ার অনেকগুলো সিনেমার পোস্টার ডিজাইন আমি করেছি। যেমন বস ২, ইয়েতির অভিযান, ইন্সপেক্টর নটি কে, ধ্যাততিরিকি, পাষাণ, নূর জাহান, বিজলী ইত্যাদি। এ ছাড়া বেলাল সানির ডেঞ্জার জোন ও ডক্টর ইলার কাচা লংকা সিনেমার পোস্টার ডিজাইন করেছি।
প্রশ্ন : পোস্টার ডিজাইনের ক্ষেত্রে আপনি কোনটি মাথায় রাখেন।
রাব্বী : পোস্টার ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমি লক্ষ রাখি যেন পোস্টারটি দেখতে নান্দনিক হয়। সিনেমার পুরো গল্পটাকে পোস্টারের মাঝে ফুটিয়ে তুলি দর্শক যেন পোস্টার দেখেই সিনেমা দেখতে উদ্বুদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক মান মাথায় রেখেই পোস্টার ডিজাইন করি।
প্রশ্ন : আপনি কীভাবে এই পেশায় যুক্ত হলেন?
রাব্বী : আসলে আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেই কাজ শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই নিজের ছবি, বন্ধুদের ছবি নিয়ে কাজ করতাম, তখন থেকেই হাতেখড়ি। কলেজ জীবনে যখন রাস্তা দিয়ে যেতাম, আমাদের সিনেমার মানহীন পোস্টার দেখে খুব খারাপ লাগত। আমি ভাবতাম, আমি একদিন এই দেশের সিনেমার জন্য আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন করব, যা বিশ্বের সব জায়গায় প্রাধান্য পাবে। এর পর থেকে নিয়মিত প্র্যাকটিস শুরু করি। এখনো প্রতিনিয়ত শিখছি। আসলে কাজ করলেই কাজ শেখা যায়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে এটা কতটা নির্ভরযোগ্য পেশা জীবন চালানোর জন্য?
রাব্বী : বর্তমানে যদিও চলচ্চিত্রের মন্দা সময় যাচ্ছে। কোনো সিনেমাই সেভাবে চলছে না। অনেক হলই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে যাঁরা এই পেশাতে আসবেন, তাঁরা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হবেন। পেশা হিসেবে নিতে হলে শুধু ডিজাইন নয়, সঙ্গে চলচ্চিত্র সম্পৃক্ত অন্য কাজ জানা থাকতে হবে। আরেকটা বিষয় বলি, সিনেমাতে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা দেশের জন্যই কাজ করছেন, কারণ এ দেশের সিনেমার পোস্টারও যেন অন্য দেশের মানুষের কাছে হাসিঠাট্টার বস্তু না হয়, এই প্রয়াস নিয়েই কাজ করে যেতে হবে।