সোহেল রানার পর কে হচ্ছেন মাসুদ রানা?
বাংলা সাহিত্যে তুমুল জনপ্রিয় কাল্পনিক এক চরিত্রের নাম মাসুদ রানা। বাংলাদেশের জেমস বন্ড খ্যাত এই বাংলাদেশি দুঃসাহসী গুপ্তচরের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। ১৯৭৪ সালে মাসুদ রানা সিরিজের ‘বিস্মরণ’ উপন্যাসটি নিয়ে প্রথম বড় পর্দার জন্য নির্মিত হয়েছিল চলচ্চিত্র। সেই ছবিতে মাসুদ রানার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নায়ক সোহেল রানা।
সম্প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া মাসুদ রানা নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে নিজেদের ফেসবুক পেজে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ‘ধ্বংস পাহাড়’, ‘ভারতনাট্যম’ ও ‘স্বর্ণমৃগ’ এই তিনটি বই থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে জাজ। এরই মধ্যে লেখকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
জাজের ঘোষণা দেওয়ার পর কে হচ্ছেন মাসুদ রানা, সেটা নিয়ে শুরু হয়ে যায় আলোচনা। তবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি। জাজের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিগগিরই জানানো হবে কে হতে যাচ্ছেন মাসুদ রানা। আর যাঁকে নিয়ে শুরু হবে, তিনি তিনটি ছবিতেই থাকবেন।
ফেসবুক পেজে জাজের পক্ষ থেকে মাসুদ রানা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সেখানে বলা হয় :
‘৬০, ৭০, ৮০, ৯০ দশকের বাংলাদেশের মানুষেরা বড় হয়েছে মাসুদ রানা পড়ে। এখনো বিশাল একটি জনগোষ্ঠী পড়ে মাসুদ রানা। এখনো নতুন মাসুদ রানার প্রথম এডিশনে ২০ হাজার কপি ছাপা হয়। এই দেশে এটি এখনো একটি অনেক বড় সংখ্যা।
আমাদের নিজেদের কোন সুপার হিরো নেই, নেই সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান। আমাদের কাছে সুপার হিরো মানেই মাসুদ রানা, যে -
বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের
এক দুর্দান্ত স্পাই
গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তর।
বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি।
কমলে-কঠোরে মিশানো নিষ্ঠুর-সুন্দর তার অন্তর।
একা।
টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায় অবিচার দেখলে
রুখে দাঁড়ায়।
পদে পদে তার বিপদ শিহরণ ভয়
আর মৃত্যুর হাতছানি।
সে প্রচণ্ড রকমের দেশপ্রেমিক । একি সাথে সরল, কমল ও কঠিন । সেই বাংলার জেমস বন্ড ।
মাসুদ পারভেজ ভাই মাসুদ রানা সিরিজের ‘বিস্মরণ’ অবলম্বনে, ১৯৭৩ সালে মাসুদ রানা চলচ্চিত্র তৈরি করেন । আর ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে । এর পর আর মাসুদ রানা হয়নি । মূলত কাজীদা কাউকে মাসুদ রানা বানানোর জন্য রাইট দেয় না, কারণ কেউ নাকি ঠিকমতো রানাকে উপস্থাপন করতে পারবে না । জাজ এর শুরুতেই একটা বই-এর রাইট-এর জন্য যোগাযোগ করা হলে, উনি রাইট দেয়নি ।
তবে শুভ সংবাদ হলো, এখন কাজীদা জাজের উপর আস্থা রেখেছেন। উনার বিশ্বাস জাজ ঠিকমতো মাসুদ রানা বানাতে পারবে। এই জন্য প্রথমে উনার ৩টি বইয়ের রাইট দিয়েছে ৫ বছরের জন্য ।
১। ধ্বংস পাহাড়
২। ভারতনাট্যম
৩। স্বর্ণমৃগ
জাজ এই ৩টি সিনেমা বানাবে ৫ বছরের মধ্যেই ।
প্রথম সিনেমার নাম :
মাসুদ রানা
(ধ্বংস পাহাড়)
যার প্রাথমিক বাজেট ৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
ধ্বংস পাহাড় রচনা করেছিলেন ১৯৬৫ সালে । তখনকার আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রেক্ষাপট এখন থেকে ভিন্ন । তখন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান ছিল আর ভারতকে শত্রু দেখান হয়েছে । ভারত পাগল বৈজ্ঞানিক কবির চৌধুরী সাথে মিলে, কাপ্তাই বাঁধ উড়িয়ে দিবে, যেদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কাপ্তাই বাঁধে আসবেন । সেই বাঁধের সাথে প্রেসিডেন্টও ভেসে যাবে । কিন্তু এখন তো ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। এখন তারা এটা করবে না । এ ছাড়া পরিবর্তন হয়েছে অনেক টেকনিকাল দিক । তাই কাজীদার অনুমতি নিয়ে পূর্বের গল্পের প্লট ঠিক রেখে, আমরা নতুন করে গল্পের বিন্যাস করছি । আমরা শুটিং করব দেশে-বিদেশে।
এই শুটিং-এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাপ্তাই বাঁধের শুটিং-এর পারমিশন পাওয়া । কারণ, কাউকে কখনো কাপ্তাই বাঁধে শুটিং করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সেখানে জনসাধারণেরও প্রবেশাধিকার নেই। যাই হোক, আমরা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে পারমিশন নেওয়ার চেষ্টা করব ।
এখন কথা হচ্ছে কে হবে মাসুদ রানা ?
যাকে নেবো, তাকে আগামী ৩টি মাসুদ রানা সিরিজের জন্য নেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী চুক্তি করা হবে ।
কে হবে মাসুদ রানা, তা খুব শিগগিরই আপনাদের জানানো হবে ।
সম্প্রতি মাসুদ রানার সাথে যুক্ত হলো ইউনিলিভার। এক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জাজ ও ইউনিলিভার-এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হলো । এবং আরও কিছু ব্র্যান্ড খুব শিগগরিই যুক্ত হবে ।
আর মাসুদ রানা মুক্তি দেওয়া হবে বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন দেশে একই দিনে ।’