‘নায়করাজের কথা মনে হলে সাহস পাই’
চলচ্চিত্র অভিনেতা, নির্মাতা ও প্রযোজক নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুর এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ শুক্রবার এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। বেলা ১১টার দিকে এফডিসির জহির রায়হান অডিটরিয়ামে সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, আমজাদ হোসেন, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। তবে নায়করাজের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
অভিনেতা ও পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, “নায়ক রাজের প্রথম ছবি ‘বেহুলা’। এই ছবিটি পরিচালনা করার কথা ছিল আমার। জহির রায়হান ও আমি, আমরা অনেক কাছের মানুষ ছিলাম। এই ছবিটি আমার নামে নিবন্ধনও করা হয়েছিল। কিন্তু একসময় আমি জহির রায়হানকে ছবিটি নির্মাণ করার জন্য পরামর্শ দিই। কাগজপত্র সবকিছু উনার নামে করিয়ে নিই। তখন থেকেই রাজ্জাকের সঙ্গে কাজ শুরু। প্রথম থেকেই নায়করাজ আমাকে আপনি করে সম্বোধন করতেন। আমিও উনাকে আপনি বলতাম। আমরা একে অপরকে সম্মান দিয়ে চলার চেষ্টা করেছি।”
সভায় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, “নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবি দেখে আমার চলচ্চিত্রে আসার ইচ্ছে তৈরি হয়। তারপর যখন আমি চলচ্চিত্র শুরু করি, তখন নায়করাজের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। আমরা অনেক কাছের মানুষ ছিলাম। চলচ্চিত্র করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় অনেক ধরনের সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু সেই সমস্যা থেকে উঠে আসতে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি।”
মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, “‘অবুঝ মন’ ছবিটি আমি ছোটবেলায় অনেকবার দেখেছি। তখন মনে হতো, আমি যদি চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারতাম। একসময় আমি চলচ্চিত্র সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করি। একদিন আমি ৩৫ মিলিমিটার ক্যান নিয়ে ডাবিংয়ে দিকে যাচ্ছিলাম। তখন দেখি নায়করাজ আসছেন। আমার হাতে তখন চার-পাঁচটি ক্যান। উনাকে সামনাসামনি দেখে আমরা হাত-পা কাঁপছিল। আমি উনাকে সালাম দিতে গিয়ে হাত থেকে সব ক্যান পড়ে যায়। আমি সেগুলো তুলতে শুরু করলাম। উনিও এসে আমাকে সাহায্য করলেন। তার পর থেকেই তিনি আমাকে ছেলের মতো আদর করতেন।”
প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘চলচ্চিত্র নিয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সব সময় কথা হতো। চলচ্চিত্রে নানা সংকট নিয়ে কথা হলে তিনি সাহস দিতেন। বলতেন, আমি তো এখনো বেঁচে আছি। তোমরা আনন্দেলন করো। আমাকে সব সময় সঙ্গে পাবে। যখন প্রয়োজন তখন আমাকে ডাকবে। নতুন নেতৃত্ব তৈরি করো। নায়করাজের কথাগুলো মনে হলে এখনও সাহস পাই।’
বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘চলতি মাসের ২১ তারিখ ছিল নায়করাজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি ঈদের আগের দিন হওয়ায় আমরা সেদিন এই আলোচনা সভা করতে পারিনি। তখনই উনার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা আজকের দিনটি ধার্য করি। সবাই নায়করাজের জন্য দোয়া করবেন।’
নায়করাজ রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে রাজ্জাক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’। সেই থেকে তিনি তিন শতাধিক বাংলা ও কয়েকটি উর্দু চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। পরিচালনা করেন ১৬টি চলচ্চিত্র। প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন রাজ্জাক।