‘পাল্টা হাওয়া’য় নিশো ও রাজীব
গত শনিবার ২১ মার্চ পুরান ঢাকার টিকাটুলির বেঙ্গল স্টুডিওতে সূর্যের আলো ঝলমল করছিল। দুপুরের কড়া রোদ যেন হামলে পড়ছে স্টুডিওর সর্বত্র। এরইমধ্যে দিব্যি শট দিচ্ছিলেন অভিনেতা আফরান নিশো ও রাজীব সালেহীন।
রোদ ও গরমকে উপেক্ষা করে পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুল নাটকের দৃশ্যের শট নিচ্ছিলেন। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর উপন্যাস ‘পাল্টা হাওয়া’ অবলম্বনে নতুন ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন তিনি। ইতিমিধ্যে ৩০ পর্বের শুটিং শেষ করেছেন। ‘পাল্টা হাওয়া’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন তিনজন নাট্যকার শফিকুর রহমান শান্তনু, কাজী শুসমিন আফসানা ও মহিউদ্দিন আহমেদ।
গোলাম সোহরাব দোদুল এর আগে সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস ‘সাতকাহন’-এর নাট্যরূপ দিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছেন। এবারও তিনি উপন্যাসকে নাট্যরূপ দিয়ে কাজ করছেন। এর কারণ কী? জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য করলে কাজটা অনেক ভালো হয়, কারণ গল্পটা তৈরি অবস্থায় থাকে। আর মজবুত গাঁথুনির গল্প পেলে তো কথাই নেই। চিত্রনাট্য করার পর স্বাদ আরো বেড়ে যায়। আমি এই ধরনের নাটক বানিয়ে অনেক মজা পাই।’
পরিচালকের সঙ্গে গল্পটা জমে উঠতো কিন্তু সেটা আর হলো না। কারণ অভিনেতা নিশো ও রাজীব মেকাপ নিয়ে শট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। শট দেওয়ার আগ মুহূর্তে তাঁরা দুজন দুজনের কাঁধে হাত রেখে হেঁটে আসছিলেন। ব্যাপার কী? আপনাদের দুজনের বেশ ভাব দেখা যাচ্ছে? নাটকের কারণে বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন না কি এমনিতেই বন্ধু আপনারা? এ কথা শুনে নিশো বললেন, ‘বন্ধুই তো। এখন আসলে আমরা চরিত্রের মধ্যে ডুবে আছি। নাটকে আমাদের দুজনের চরিত্রের নাম শাক্য ও রীপ। আমরা দুজন ভালো বন্ধু। শট শুরু হওয়ার আগে নিজেদের একটু ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম।’
নিশোর কথার ফাঁকে রাজীব বললেন, ‘আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া অনেক ভালো। আর এটা পেশাগত কারণেই।’
নিশো এবার একটু নষ্টালজিক হলেন, ‘আমার ছোটবেলার বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে। ওদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলতাম। এখন আর সেই সুযোগ হয় না। আমার কাছে তাই বন্ধুত্বের সংজ্ঞা একেক সময় একেক রকম। অভিনয়ের সময় আমরা কাঠের পুতুল। পরিচালক যেভাবে বলেন সেভাবে আমাদের অভিনয় করতে হয়। তবে একটা ব্যাপার হলো দোদুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব পেশাগত নয়। আমি মিডিয়ায় কাজ শুরু করার আগে থেকেই দোদুল ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।’
নিশোর কথা চুপচাপ শুনছিলেন রাজীব। তিনি বললেন, ‘নিশো বন্ধুত্বের সংজ্ঞা খুব ভালোভাবে দিয়েছে। আমরা যতক্ষণ সেটে থাকি ঠিক ততক্ষণই আমরা একে অপরকে সময় দিতে পারি। কাজের বাইরে দুজনের দেখা হয় না। কারণ একটাই- যান্ত্রিক ব্যস্ততা।’
গল্প জমে উঠতে শুরু করল। কিন্তু এরমধ্যেই পরিচালক বললেন লাইট-ক্যামেরা রেডি। শুটিং শুরু করব এখন। কী আর করা! নিশো ও রাজীব গল্প থামিয়ে চলে গেলেন শট দিতে।
সেটে মেকাপ নিচ্ছেলন অভিনেত্রী শিরিন আলম। একদম সাদাসিধে মেকাপ। এ রকম হালকা মেকাপ নেওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘নাটকে আমি ট্রাক ড্রাইভারের বউ। আমার স্বামী ভয়ানক রাগী। আমার চরিত্র্রে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। উপন্যাসের নাটকে কাজ করতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ চরিত্রের মধ্যে গভীরতা থাকে।’
এক সময় মঞ্চ নাটক করতেন শিরিন আলম। তবে এখন আর মঞ্চে অভিনয় করা হয় না। কেন মঞ্চে অনুপস্থিত এমন প্রশ্নের জবাবে কি একটু মন খারাপ হলো এই অভিনেত্রীর? শিরিন বললেন, ‘আমি এখন সময় পাই না। কিন্তু মঞ্চের প্রতি টান আগের মতোই রয়েছে। এখন যে নাটকের শুটিং করছি, এই শুটিংয়ের মধ্যেই পুরো সংসার আমাকে সেলফোনের মাধ্যমে চালাতে হচ্ছে। তবে সময় সুযোগ মিললে আবারও মঞ্চে কাজ করব। মঞ্চই তো আমাদের আসল ঠিকানা। টিভি নাটকেরও আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।’ কথা শেষ করে আবার মেকাপে মনোযোগী হলেন অভিনেত্রী শিরিন আলম।
পুরো সেটে ঝলমলে রোদ এখনো বিরাজমান। উজ্জ্বল রোদে শুটিং ইউনিটের প্রত্যেককেই বেশ প্রাণোচ্ছল মনে হচ্ছিল। রোদ ও রোদেলা এসব মানুষকে বিদায় জানিয়ে আমরা ফিরে আসি, সঙ্গে নিয়ে আসি পাল্টা হাওয়ার গল্প।