চড়া সুর, কড়া গান

জুডাস প্রিস্ট, জুডাস প্রিস্ট!

Looks like you've blocked notifications!

হেভি মেটাল ঘরানার শুরুর সময়ে যে ব্যান্ডগুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল, সেগুলোর অন্যতম জুডাস প্রিস্ট। বিশেষ করে তাদের ‘ব্রিটিশ স্টিল’ অ্যালবামটি এই ঘরানাকে ভীষণভাবেই প্রভাবিত করে। গার্ডিয়ান পত্রিকা তো লিখেই বসে যে এই অ্যালবাম হেভি মেটাল জনরার ‘সংজ্ঞা’ নিরূপণ করে দিয়েছিল। এই জুডাস প্রিস্টের হাত ধরেই হেভি মেটাল জনরা বেরিয়ে আসে ব্লুজের প্রভাব থেকে। শুধু তাই নয়, ব্যান্ডে দুজন লিড গিটারিস্টের ধারণাও তারাই প্রতিষ্ঠা করে। হেভি মেটালের যে পোশাক-আশাকের রীতিনীতি, বিশেষ করে গ্ল্যাম মেটালের, মানে মেটাল ব্যান্ডগুলোর লেদারের পোশাক-আশাক ও তাতে কালো রঙের আধিক্য, পোশাকে স্পাইকের ব্যবহার—এই ‘ট্যাবু’গুলো জনপ্রিয় হয় জুডাস প্রিস্টের হাত ধরেই। এমনকি ব্যান্ডটির ভূমিকা আছে হেভি মেটালের সঙ্গে উদ্দাম মোটরসাইকেলের সখ্য গড়ে তোলাতেও। এমটিভি সর্বকালের সেরা মেটাল ব্যান্ডের তালিকা করলে, তাতে ব্ল্যাক স্যাবাথের পরে দুই নম্বর জায়গায় স্থান করে নেয় ব্যান্ডটি। ভিএইচ১ রক অনার্স-এর প্রথম আসরেই কুইন, কিস ও ডেফ লেপার্ডের সঙ্গে সম্মান জানানো হয় জুডাস প্রিস্টকেও।

তবে এসব সাফল্য জুডাস প্রিস্টের হাতে ধরা দিতে শুরু করে অনেক পরে এসে। আশির দশকে এসে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করা ব্যান্ডটি গঠিত হয় এরও এক দশক আগে। অবশ্য প্রথম জুডাস প্রিস্ট নামের ব্যান্ড গঠিত হওয়ার গল্পটি তারও কয়েক বছর আগের। ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে প্রথম জুডাস প্রিস্ট নামের ব্যান্ড গঠিত হয়। লাইনআপে ছিলেন অ্যালান অ্যাটকিনস (ভোকালিস্ট), ব্রুনো স্ট্যাপেনহিল (বেইস), জন প্যাট্রিজ (ড্রামস) এবং জন পেরি (গিটার)। নামটি দিয়েছিলেন স্ট্যাপেনহিল। বব ডিলানের ‘দ্য ব্যালে অব ফ্র্যাঙ্কি লি অ্যান্ড জুডাস প্রিস্ট’ গান থেকে এই নাম তার মাথায় আসে। ব্যান্ডটি বছরখানেক টিকে ছিল। বেশ কিছু কনসার্টও করেছিল ব্যান্ডটি। এমনকি একটা ট্যুরও করেছিল স্কটল্যান্ডে।
ব্যান্ডটি অবশ্য টেকেনি বেশিদিন। এর কিছুদিন পরেই, ১৯৭০ সালের অক্টোবরে, বার্মিংহামে আরেকটা ব্যান্ডের জন্ম হয়। জন্ম দেন তিনজন—লিড গিটারিস্ট কেনি ডাউনিং, বেইজিস্ট ইয়ান হিল ও ড্রামার জন এলিস। এঁদের মধ্যে ডাউনিং-হিল দুজনে আবার ছোটবেলার বন্ধু। ওয়েস্ট ব্রমউইচে একসঙ্গেই বড় হয়েছেন। গানের পছন্দও এক রকম। দুজনেই ব্ল্যাক স্যাবাথ, ডিপ পার্পল, লেড জ্যাপেলিন, জিমি হেনড্রিক্স, ইয়ার্ডবার্ডসের ভক্ত। তাঁদের সঙ্গে ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দিলেন পুরোনো জুডাস প্রিস্টের অ্যালান অ্যাটকিন্স। অ্যাটকিন্সের পরামর্শেই তাঁর পুরোনো ব্যান্ডের নামটাই রেখে দেওয়া হলো ব্যান্ডের নাম হিসেবে—জুডাস প্রিস্ট।

জুডাস প্রিস্টকে শুরুর দিকে একটা বিষয়ে ভীষণ ভুগতে হয়েছে—টাকাকড়ি। আর এই টাকাকড়ির জন্য তাদের যেমন অন্য ব্যান্ডের কনসার্টের ওপেনিং ব্যান্ড হিসেবে পারফর্ম করতে হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারেও অন্যের খবরদারির উটকো ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। না চাইলেও মানতে হয়েছে তাঁদের সিদ্ধান্ত, যাঁরা তাঁদের জন্য অর্থলগ্নি করেছেন। আর মোটামুটি সব সময়েই ব্যান্ডটিকে আরেকটি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে—ড্রামার-সংকট। ব্যান্ডটিতে কেন যেন কোনো ড্রামারই লম্বা সময় ধরে বাজাতে পারেননি।

১৯৭৩ সালে ব্যান্ডে ড্রামস বাজাতেন অ্যালান মুর। তখন তাঁদের পৃষ্ঠপোষক টনি ইয়োম্মি। তাঁর চাওয়ার ভিত্তিতে ব্যান্ড থেকে ছাঁটাই করা হলো দুজনকে। ড্রামার অ্যালান মুর আর ভোকালিস্ট অ্যালান অ্যাটকিন্স। বেইজিস্ট হিলের প্রেমিকার সুপারিশে মুরের বদলে নেওয়া হলো হিলের প্রেমিকার ভাই রব হ্যালফোর্ডকে। হ্যালফোর্ড এর আগে ‘হিরোশিমা’ ব্যান্ডে বাজাতেন। জুডাস প্রিস্টে যোগ দেওয়ার সময় তিনি সঙ্গে নিয়ে এলেন হিরোশিমার ড্রামার জন হিঞ্চকেও।
পরের বছর ব্যান্ডটি তাদের প্রথম স্টুডিও ট্র্যাক রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু স্টুডিও তাদের লাইনআপ নিয়ে তখনো ঠিক সন্তুষ্ট নয়। তারা আরো একজন সদস্য নেওয়ার কথা বলল। আরেকজন নিলে নিতে হয় একজন কি-বোর্ডিস্ট। কিন্তু লিড গিটারিস্ট ডাউনিং কি-বোর্ডিস্ট নেওয়ার ব্যাপারে স্রেফ বেঁকে বসলেন। বদলে আরেকজন লিড গিটারিস্ট নেওয়ার কথা তুললেন। নেওয়া হলো গ্লেন টিপটনকে। ডাউনিং-টিপটনের মধ্যে বোঝাপড়াটাও জমে উঠল। আগস্টে ব্যান্ডটি তাদের প্রথম স্টুডিও ট্র্যাক রেকর্ড করল। নাম—‘রকা রোলা’।

এক মাস পর তারা প্রথম অ্যালবাম রেকর্ডিংয়ের কাজও শুরু করল। ওই একই নামে। একে টাকাকড়ির অভাবে রেকর্ডিং কোয়ালিটি ভালো করা যায়নি, তার ওপর প্রডিউসারের খবরদারি। তাঁদের কনসার্টের নিয়মিত আর জনপ্রিয় তিনটা গান স্রেফ বাদ দিয়ে দিলেন প্রডিউসার। আরেকটা ১০ মিনিটের গান কেটেছেঁটে বানানো হলো একটা ২ মিনিটের ইন্সট্রুমেন্টাল। সব মিলিয়ে এই অ্যালবামটাকে পরে জুডাস প্রিস্ট পারতপক্ষে স্বীকারই করত না। ১৯৭৬ সালের পর থেকে কনসার্টে এই অ্যালবামের গান করাও ছেড়ে দেয় ওরা।

১৯৭৬ সালে তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘স্যাড উইংস অব ডেসটিনি’ বের হয়। খানিকটা সফলও হয়। অন্তত পরের অ্যালবামের জন্য বড় কোনো লেবেলের দৃষ্টি আকর্ষণের পক্ষে সে সাফল্যই ছিল যথেষ্ট। ফলে পরের অ্যালবামের জন্য সিবিএস-এর সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। আর ১৯৭৭ সালের ‘সিন আফটার সিন’ নামের ওই অ্যালবাম থেকেই তাদের সাফল্যযাত্রার শুরু। এর পর তাদের টানা ১১টা অ্যালবাম ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। টানা ১১টা ‘হিট’ অ্যালবাম উপহার দেয় জুডাস প্রিস্ট।

এরই মধ্যে আবার ব্যান্ডটির ড্রামার বদল হয়। জন হিঞ্চ ব্যান্ড ছাড়লে, সিন আফটার সিনের রেকর্ডিংয়ে ড্রামস বাজান সেশন ড্রামার সাইমন ফিলিপস। কিন্তু তিনি পাকাপাকিভাবে ব্যান্ডে যোগ দিতে রাজি হলেন না। অ্যালবামটি প্রডিউস করেন রজার গ্লোভার। তিনি আগে ডিপ পার্পলে বেইস বাজাতেন। তার পরামর্শে লেস বিঙ্কস-কে ব্যান্ডের নতুন ড্রামার হিসেবে নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটা যে খারাপ হয়নি, তা পরের দুই অ্যালবামের সাফল্যেই বোঝা যায়। বিঙ্কসের ড্রামিং ব্যান্ডটিকে আরো চড়া সুরে কড়া গানের দিকে নিয়ে যায়। বিশেষ করে ‘কিলিং মেশিন’ তুমুল জনপ্রিয় হয়। আর এ সময় থেকেই ব্যান্ডটি ‘মেটাল গেটআপ’ জনপ্রিয় করতে শুরু করে। মানে নিয়মিত কনসার্টে স্পাইকওয়ালা লেদারের কালো পোশাক পরতে শুরু করে।
এরই মধ্যে আরেকবার ব্যান্ডের ড্রামার পরিবর্তন হয়। এ সময় ব্যান্ডটি রেডিওর শ্রোতাদের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ে। এমনকি রেডিওর কথা মাথায় রেখে নতুন অ্যালবামের গানগুলোর দৈর্ঘ্য কমানোরও সিদ্ধান্ত নেয় জুডাস প্রিস্ট। এসব সিদ্ধান্তে ভীষণই ক্ষুণ্ণ হন বিঙ্কস। তিনি ব্যান্ড ছাড়লে নতুন ড্রামার হিসেবে যোগ দেন ‘ট্র্যাপেজ’-এর ডেভ হল্যান্ড। এই নতুন লাইনআপটিকে বলা যেতে পারে জুডাস প্রিস্টের সবচেয়ে সফল লাইনআপ। এই লাইনআপ ব্যান্ডটির ছয়টি অ্যালবামে কাজ করে। ছয়টিই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। আর এই লাইনআপের প্রথম অ্যালবামটি ‘ব্রিটিশ স্টিল’-কে জুডাস প্রিস্টের তো বটেই, হেভি মেটাল ঘরানারই অন্যতম প্রভাবশালী অ্যালবাম বলা হয়ে থাকে। অ্যালবামটির ‘ইউনাইটেড’, ‘ব্রেকিং দ্য ল’, ‘লিভিং আফটার মিডনাইট’ গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়।

এরপর জুডাস প্রিস্টের কেবল এগিয়ে চলার পালা। একের পর এক সুপারহিট অ্যালবাম উপহার দিতে থাকে জুডাস প্রিস্ট। ১৯৮৫ সালে ব্ল্যাক স্যাবাথের সঙ্গে এক মঞ্চে পারফর্মও করে তারা। পরের বছর প্রকাশিত ‘টার্বো’ অ্যালবামে ডাউনিং-টিপটনরা প্রথম গিটার সিনথেসাইজার ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলাফলও ভালোই হয়। সে সঙ্গে তাদের স্টেজ পারফরম্যান্স আরো রংচঙে হয়ে ওঠে। বিশেষ করে হ্যালফোর্ডের হার্লে-ডেভিডসন চালিয়ে স্টেজে ওঠার স্টান্টটা ভীষণই সাড়া ফেলে।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘র‍্যাম ইট ডাউন’ নিয়ে বেশ জল ঘোলা হয়। অ্যালবামটির জন্য প্রস্তুত করা পাঁচটি ট্র্যাক শেষ পর্যন্ত বাদ পরে। গিটার সিনথেসাইজার ব্যবহার না করায় অনেক পুরোনো ভক্ত খুশি হয়। এই অ্যালবামের পরে ‘যথারীতি’ (!) আরেকবার জুডাস প্রিস্টের ড্রামার বদল হয়। ডেভ হল্যান্ডের পরিবর্তে যোগ দেন ‘রেসার এক্স’-এর ড্রামার স্কট ট্রাভিস।
এর মধ্যে আবার জুডাস প্রিস্টকে এক অদ্ভুত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৮৫ সালে আমেরিকার নেভাডায় দুটো ছেলে আত্মহত্যা করে। এক চার্চের মাঠে নিজেদের মুখে শটগান পুরে গুলি করে তারা। জেমস ভান্স ও রেমন্ড বেল্কন্যাপ নামের ছেলে দুটো আত্মহত্যা করার আগে প্রচুর পরিমাণে বিয়ার গিলেছিল। তারপর উপর্যুপরি মারিজুয়ানাও (গাঁজা) সেবন করেছিল। পুরো সময়টায় তারা জুডাস প্রিস্টের গান শুনেছিল। বেল্কন্যাপ ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও ভান্স সে যাত্রা বেঁচে যায়। কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নানা জটিলতায় ভুগতে ভুগতে বছর তিনেক পরে মারা যায় সেও।

এ ঘটনায় বেল্কন্যাপ-ভান্সের বাবা-মা জুডাস প্রিস্টের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। তাঁদের অভিযোগ, জুডাস প্রিস্টের ‘স্টেইন্ড ক্লাশ’ অ্যালবামের ‘বেটার বাই ইউ, বেটার বাই মি গান’ শুনেই ওরা আত্মহত্যায় পুরোচিত হয়। মূলত গানটির ‘ডু ইট শব্দবন্ধের দিকেই তাদের ইঙ্গিত ছিল। সেই মামলার শুনানি শুরু হয় ১৯৯০ সালের ১৬ জুলাই। চলে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রায় জুডাস প্রিস্টের পক্ষেই যায়।

এর পরপরই, ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে জুডাস প্রিস্ট বের করে ‘পেইনকিলার’। অ্যালবামটির গানগুলো নিয়ে যখন জুডাস প্রিস্ট ট্যুরে বের হয়, তাদের ওপেনিং ব্যান্ড হিসেবে পারফর্ম করে ‘মেগাডেথ’, ‘প্যান্টেরা’, ‘সেপালচুরা’, ‘টেস্টামেন্ট’-এর মতো ব্যান্ড। আর ব্রাজিলে ‘রক ইন রিও’ কনসার্টে তাদের পারফর্ম দেখতে হাজির হয় লাখখানেক মেটালহেড।

আবারও বিপদ ঘনিয়ে আসে ব্যান্ডটির আকাশে। ব্যান্ডের অন্যদের সঙ্গে খিটিমিটি বেধে যায় হ্যালফোর্ডের। হ্যালফোর্ড ব্যান্ড থেকে বের হয়ে, এমনকি ‘ফাইট’ নামের একটা থ্র্যাশ মেটাল ব্যান্ডও গঠন করে ফেলেন। সঙ্গে নেন স্কট ট্রাভিসকেও। কিন্তু বাদ সাধে চুক্তি। চুক্তির গ্যাঁড়াকলে হ্যালফোর্ডকে ১৯৯২-এর মে পর্যন্ত জুডাস প্রিস্টের সঙ্গে থাকতে হয়। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে তবেই ব্যান্ড ছাড়েন হ্যালফোর্ড।
জুডাস প্রিস্টে হ্যালফোর্ডের শূন্যস্থান পূরণ হতে বছর চারেক লেগে যায়। অনেক খুঁজে পেতে ১৯৯৬ সালে ভোকালিস্ট হিসেবে নেওয়া হয় টিম রিপার ওয়েনসকে। টিম আগে ব্রিটিশ স্টিল নামের এক ব্যান্ডে ভোকাল দিত। ওই ব্যান্ড মূলত জুডাস প্রিস্টই কাভার করত। নতুন লাইনআপে ব্যান্ডটি কয়েকটা অ্যালবামও বের করে। তবে জুডাস প্রিস্টের ভোকালিস্ট হিসেবে ভক্তদের মনে রাখে হ্যালফোর্ডের প্রভাব অতিক্রম করতে পারেন না রিপার। হ্যালফোর্ডবিহীন জুডাস প্রিস্টের প্রতি তাই ভক্তদের আগ্রহও কমতে থাকে।

এই ভক্তদের ভালোবাসার কাছেই শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করেন হ্যালফোর্ড। বারবার ‘ফিরবেন না’ বলার পরও এগারো বছরের মাথায় জুডাস প্রিস্টে ফিরে আসেন তিনি, ২০০৩ সালের জুলাইয়ে। ২০০৪ সালের ওজফেস্টে হ্যালফোর্ড জুডাস প্রিস্টের হয়ে আবার মঞ্চে ওঠেন। রিপার ওয়েনস ব্যান্ড বদলে যোগ দেন ‘আইসড আর্থ’-এ। অবশ্য আইসড আর্থও পারফর্ম করে ওজফেস্টে।

এর পর থেকে নিয়মিত কনসার্ট করার পাশাপাশি বেশ কিছু অ্যালবামও বের করে জুডাস প্রিস্ট। এগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালের জুনে বের হওয়া ‘নস্ত্রাদামুস’ বিশেষভাবেই উল্লেখযোগ্য। পরের বছরের আগস্টে ব্যান্ডটি ‘ব্রিটিশ স্টিল’ অ্যালবামের ৩০ বছর উদযাপন করে। ২০১০ সালে হলিউডের প্রথম বিগ বাজেট থ্রিডি সিনেমা ‘টয় স্টোরি ৩’-এ ব্যান্ডটির ‘ইলেকট্রিক আই’ গানটি ব্যবহৃত হয়।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে ব্যান্ডটি তাদের ‘এপিটাফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এর ঘোষণা দেয়। পরের মাসে হ্যালফোর্ড এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন, এই ট্যুরের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে পারে জুডাস প্রিস্ট।

অবশ্য সে সম্ভাবনায় জল ঢেলে কিছুদিনের মধ্যেই জুডাস প্রিস্ট পরের অ্যালবামের কাজ শুরুর ঘোষণা দেয়। জানা যায়, এপিটাফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর ব্যান্ডটির শেষের ঘোষণা নয়। তবে এরপর ব্যান্ডটি আর বড় ধরনের কোনো ট্যুর করবে না।

এর কয়েক মাস পরেই ব্যান্ডটির সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দেন ডাউনিং। অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাকালীন এই সদস্য জুডাস প্রিস্ট ছাড়েন ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল। তাঁর বদলি হিসেবে যোগ দেন রিচি ফকনার। ডাউনিং জুডাস প্রিস্ট ছাড়ায়, এখন ব্যান্ডটিতে প্রতিষ্ঠাকালীন কেবল একজন সদস্যই আছেন—বেইজিস্ট ইয়ান হিল।
অনেক আগে ঘোষণা দিলেও, ব্যান্ডটির সর্বশেষ অ্যালবামের মুখ দেখা যায় ২০১৪ সালে। ২৮ এপ্রিল ব্যান্ডটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নতুন অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক আপলোড করা হয় ‘রিডিমার অব সোলস’। এরও কিছুদিন পরে অ্যালবামটি প্রকাশ পায়। এই অ্যালবাম দিয়েই ব্রিটেনে দারুণ সফল জুডাস প্রিস্ট প্রথমবারের মতো মার্কিন টপচার্টের শীর্ষ দশে উঠে আসে।

বছর চারেক আগেও পুরো ব্যান্ড ধরে অবসরের গুঞ্জন উঠলেও জুডাস প্রিস্ট অবসর তো নেয়ইনি, উল্টো বেশ জমিয়ে কনসার্ট করে বেড়াচ্ছে। শুধু গত বছরেই ব্যান্ডটি জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশে তো বটেই, কনসার্টে পারফর্ম করেছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো, আমেরিকা, কানাডাসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে।

সব মিলিয়ে তাই জুডাস প্রিস্টের অবসর নেওয়ার প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, তাদের বুড়িয়ে যাওয়ার আলাপ করার সময়ও বোধহয় এখন নয়।

লাইনআপ
ভোকালিস্ট—রব হ্যালফোর্ড
বেইজিস্ট—ইয়ান হিল
লিড গিটার—গ্লেন টিপটন
লিড গিটার—রিচি ফকনার
ড্রামার—স্কট ট্রাভিস
গুরুত্বপূর্ণ পুরোনো সদস্য—কেনি ডাউনিং (লিড গিটার), অ্যালান অ্যাটকিন্স (ভোকালিস্ট), অ্যালান মুর (ড্রামার), জন হিঞ্চ (ড্রামার), লেস বিঙ্কস (ড্রামার), ডেভ হল্যান্ড (ড্রামার), টিম রিপার ওয়েনস (ভোকালিস্ট)।

অ্যালবাসমূহ
রকা রোলা (১৯৭৪)
স্যাড উইংস অব ডেসটিনি (১৯৭৬)
সিন আফটার সিন (১৯৭৭)
স্টেইনড ক্লাশ (১৯৭৮)
কিলিং মেশিন (১৯৭৮)
ব্রিটিশ স্টিল (১৯৮০)
পয়েন্ট অব এন্ট্রি (১৯৮১)
স্ক্রিমিং ফর ভেঞ্জেন্স (১৯৮২)
ডিফেন্ডার্স অব দ্য ফেইথ (১৯৮৪)
টার্বো (১৯৮৬)
র‍্যাম ইট ডাউন (১৯৮৮)
পেইনকিলার (১৯৯০)
জাগুলেটর (১৯৯৭)
ডিমোলিশন (২০০১)
অ্যাঞ্জেল অব রিট্রিবিউশন (২০০৫)
নস্ত্রাদামুস (২০০৮)
রিডিমার অব সোলস (২০১৪)

গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরসমূহ
রকা রোলা ট্যুর
স্টেইন্ড ক্লাশ ট্যুর
কিলিং মেশিন ট্যুর
ব্রিটিশ স্টিল ট্যুর
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বিটজ ট্যুর
ওয়ার্ল্ড ভেঞ্জেন্স ট্যুর
পেইনকিলার ট্যুর
জাগুলেটর ট্যুর
ডিমোলিশন ট্যুর
রিইউনাইটেড সামার ট্যুর
ওজফেস্ট ২০০৪
অ্যাঞ্জেল অব রিট্রিবিউশন ট্যুর
নস্ত্রাদামুস ওয়ার্ল্ড ট্যুর
ব্রিটিশ স্টিল থার্টিথ অ্যানিভার্সারি ট্যুর
এপিটাফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর
রিডিমার অব সোলস ট্যুর