মঞ্চে ব্যর্থ ‘গেম অব থ্রোনস’ তারকারা
থিয়েটারের কাস্টিং এজেন্টদের জন্য ‘গেম অব থ্রোনস’ স্বপ্নের মতোই। সুদর্শন সব শিল্পী আর ‘গেম অব থ্রোনস’-এর ঈর্ষণীয় সাফল্যের খাতিরে দর্শকমহলে তাদের বিপুল গ্রহণযোগ্যতা। ভক্তদেরও অনেক আগ্রহ তাঁদের নিয়ে। সেটা পর্দা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিও কম নয়। তবে টেলিভিশন স্ক্রিনে দুর্দান্ত হলেও মঞ্চের পরীক্ষায় একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন তাঁদের প্রায় সবাই। এ নিয়ে এখন বেশ আলোচনাও চলছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোতে।
টিভি সিরিজ হিসেবে ‘গেম অব থ্রোনস’ অনেক তরুণ অভিনেতার ক্যারিয়ার বদলে দিলেও ব্রিটিশ থিয়েটারে তাদের অংশগ্রহণ খুব একটা লাভজনক হয়নি। এই সিরিজের তারকাদের মধ্যে সর্বশেষ অ্যালফি অ্যালেনকে দেখা যায় জেসি আইজেনবার্গের নাটক ‘দ্য স্পয়েলস’-এ। কয়েক দিন আগেই মঞ্চে গড়িয়েছে নাটকটি। সদ্য পাওয়া তারকাখ্যাতি আর দর্শকের উত্তেজনা মিলিয়ে টিকেটের কাটতি ছিল ভালোই।
গত সপ্তাহে ‘জন স্নো’ খ্যাত কিট হ্যারিংটন অভিনয় করেছিলেন ‘ডক্টর ফস্টাস’ আর ‘রব স্টার্ক' রিচার্ড ম্যাডেন অভিনয় করেছিলেন ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এ, ফল একেবারেই সাধারণ! অনেক সময় দুয়োধ্বনিও পেয়েছিলেন এই তারকারা।
‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর বিশ্লেষক ডমিনিক ক্যাভেন্ডিশ ম্যাডেনের অভিনয়কে আখ্যা দেন ‘অতিসাধারণ’ অভিনয় হিসেবে। ‘জন স্নো’ থেকে সোজা ‘ডক্টর ফস্টাস’ হয়ে ওঠা হ্যারিংটন কিছুটা এগিয়েই ছিলেন বলা যায়। তবে মজার বিষয়, চরিত্র কিংবা নাটকের চেয়ে তাঁর ন্যাড়া মাথা আর পা নাচানোর দিকেই নাকি বেশি মনোযোগী ছিলেন এই তারকা।
আরেক ‘গেম অব থ্রোনস’ তারকা ‘মাদার অব ড্রাগনস’ খ্যাত এমিলিয়া ক্লার্ক ‘ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানিজ’-এ অভিনয় করেছিলেন ‘হলি’ চরিত্রে। আমেরিকান সমালোচকরা যাকে বলেছিলেন ‘ভুল অভিনেত্রী’। ‘দ্য হলিউড রিপোর্টার’ তো ঘোষণাই দিয়ে দিল, তাঁর চরিত্রে কোনোরূপ কোমলতা ছিল না, যা হলি চরিত্রটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এত সব সমালোচনার ফল হিসেবে সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে গেল ‘শো’। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, এ ধরনের অভিনয় এবং এই তারকাদের থিয়েটার-সংশ্লিষ্টতা কারো জন্যই মঙ্গলকর নয়, হোক সেটা দর্শক, তারকা কিংবা থিয়েটার।
স্বভাবতই একটি টিভি সিরিজের মাধ্যমে চট করে তারকা বনে যাওয়া এই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা চাইবেন, শিল্পের অন্য রূপগুলোতেও ঢুঁ মারতে, ড্রাগন লালনপালন কিংবা তরবারি ঘোরানোর বাইরে যেতে। তাই বলে হঠাৎ করেই বিশাল ‘ওয়েস্ট এন্ড স্টেজ’-এর নেতৃত্ব দেওয়া কিংবা ‘এলিজাবেথান ভার্স’ আবৃত্তি করাটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। এই তারকাদের অভিনয় জীবনের পুরোটাই কেটেছে ‘আইসল্যান্ড’-এ ‘গেম অব থ্রোনস’-এর ক্যামেরার সামনে-পেছনে। মঞ্চের খেলায় তারা যারপরনাই ব্যর্থ। সমালোচকদেরও তাই আর ঠেকায় কে!
বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, তাদের মেধার জন্য নয়, স্রেফ তারকাখ্যাতির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের নির্বাচন করা হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই এখানে প্রধান। এই নগদ প্রাপ্তির লোভ ভয়াবহ ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে ব্রিটিশ নাট্যচর্চার জন্যও।
যুগ যুগ ধরেই ব্রিটিশ চলচ্চিত্র আর টিভি তারকাদের অনেকেই কাঁপিয়েছেন নাটকের মঞ্চও। স্ক্রিন থেকে স্টেজে যাওয়াটা তারকাদের জন্য যতটা সহজ, এর উল্টোটা করা ঠিক ততটাই কঠিন। ডেভিড টেন্যান্ট থেকে শুরু করে আন্ড্রিউ স্কট কিংবা মার্ক রাইল্যান্স, জুডি ডেঞ্চ এবং প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট, থিয়েটার থেকে শুরু করে সহজেই টিভি আর সর্বশেষ সিনেমায় সমাপ্ত হওয়া এই তারকাদের ইতিহাসটা বেশ লম্বা এবং নান্দনিক।
টেলিগ্রাফের বিশ্লেষক হলি উইলিয়ামসের মতে, শুধু খ্যাতির সুবাদে আর লাভের আশায় এই তারকাদের অতিরিক্ত বাজারজাতকরণ ক্ষতিকর হয়ে উঠবে তাদের নিজের ক্যারিয়ার এবং থিয়েটারের জন্য। এর সমাধান হিসেবে শুরুতেই কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে না বসিয়ে অন্য চরিত্রগুলোতে এঁদের অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।