নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি : শ্রাবণ্য
ছোটবেলা থেকে ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃতি আর খেলাধুলাতেও পটু। বাবা আদর করে ডাকতেন ‘সুপার গার্ল’। সেই মেয়েটি যে সত্যিই বড় হয়ে একদিন সুপার গার্ল হয়ে উঠবে কে জানত! কথা হচ্ছে, শ্রাবণ্য তৌহিদাকে নিয়ে।
এক কথায় শ্রাবণ্যর পরিচয় দেওয়াটা কঠিন। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করার পর শ্রাবণ্য এখন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা। পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে। প্রথম প্রচেষ্টাতেই এফসিপিএসে চান্স পাওয়া শ্রাবণ্য পড়ছেন শেষ বর্ষে। চিকিৎসক, উপস্থাপক, মডেলের পাশাপাশি শ্রাবণ্যর আরেক পরিচয়—তিনি মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রবির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
শ্রাবণ্য সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন জিটিভির ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ক্রিকেট ম্যানিয়া’র উপস্থাপক হিসেবে। গত বিশ্বকাপ থেকে তিনি এতে উপস্থাপনা করছেন। অনুষ্ঠানটিকে তো অনেকেই বলেন ‘শ্রাবণ্য ম্যানিয়া’ নামেও! আরটিভি ও বৈশাখীর ফোনো লাইভ অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থাপনা করছেন। এসএটিভির ‘ওয়েডিং স্টোরি’রও উপস্থাপনা করছেন। এর আগে এনটিভির ‘মিউজিক ইউফোনি’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন।
এখন পর্যন্ত সাত-আটটি টিভি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন শ্রাবণ্য। সামনে আরো দুটি টিভিসি আসছে। সর্বশেষ মডেল হয়েছেন ইস্পাহানি মির্জাপুর চায়ের। উপস্থাপনা, টিভিসির সঙ্গে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, পত্রিকা-ম্যাগাজিনের জন্য ফটোশুট তো আছেই। শ্রাবণ্য এত এত কাজ করছেন মাত্র আড়াই বছরে।
ডাক্তারি, এফসিপিএসের পড়াশোনা, উপস্থাপনা, মডেলিং—একসঙ্গে এত কাজ কীভাবে করেন? প্রশ্নটা করতে না করতেই একগাল হেসে শ্রাবণ্যর জবাব, ‘অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ডাক্তারি আমার দেহ হলে মিডিয়া সেই দেহের অক্সিজেন। এটাই আমার নেশা। কোনোটাকেই ছেড়ে দেওয়ার উপায় নেই।’
শ্রাবণ্য বললেন, ‘আমি মা-বাবা আর পরিবারের কাছে খুবই লক্ষ্মী একটা মেয়ে। ক্লাসে বরাবরই ফার্স্ট হওয়া, বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই নিজের স্বপ্নগুলো সুপ্ত ছিল। কিন্তু রক্তে মিশে থাকা শিল্প তো প্রকাশ পাবেই। এমবিবিএস শেষ হতেই শখের বশে মডেলিং শুরু করি। এরপর উপস্থাপনা। তারপর তো শুধুই এগিয়ে চলা। অনেক টিভিসি করলাম। বিলবোর্ড, পত্রিকা-ম্যাগাজিনের জন্য ফটোশুট তো আছেই। তবে উপস্থাপনাটাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার জায়গা।
নিজেকে, নিজের বুদ্ধিমত্তাকে ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়। বিশেষ করে লাইভ শোগুলোতে এটার সুযোগ আরো বেশি।’
আর কিছু করার ইচ্ছা আছে? নাটক, সিনেমা...। শ্রাবণ্যর জবাব, ‘নাটক, সিনেমায় অভিনয়ের প্রচুর প্রস্তাব পেয়েছি। সিনেমার প্রস্তাবই বেশি পাই। কিন্তু করা হয়ে উঠছে না। ডাক্তারি, এফসিপিএসের পড়াশোনা, মডেলিং, উপস্থাপনার জন্য এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে যাওয়া—এভাবেই সময় কেটে যায়। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকি। নাটকে ঢুকলে কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারব না। সব সময় ভালো কিছু করতে, ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চাই।’
এরপর শ্রাবণ্য জানালেন, এত এত ব্যস্ততার মধ্যেও সিনেমার নায়িকা হওয়ার আগ্রহ তাঁর রয়ে গেছে। তবে সেটা শর্তসাপেক্ষ। বললেন, ‘ভালো নির্মাতা ও ভালো ছবি হলেই ভেবে দেখব। সম্প্রতি একটা ছবির গল্প ভালো লেগেছে। সব ব্যাটে-বলে মিলে গেলেই আমাকে বড় পর্দায় দেখা যাবে।’
শ্রাবণ্য যোগ করেন, ‘আমি কখনোই কোয়ালিটির সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করি না। যখন যে কাজ করি, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে, নিজেকে উজার করে দেওয়ার চেষ্টা করি। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার অদম্য মানসিকতার জন্য আজ আমি এ জায়গায়। বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আমার স্বপ্নটাও ভালোভাবে পূরণ করতে চাই।’
কাজের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস, তার একটা উদাহরণও দিলেন শ্রাবণ্য, ‘একদিন স্কয়ারের একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনের শুটিং চলছিল। ১৫ ফুট ওপর থেকে লাফ দিতে হবে। লাফও দিলাম, কিন্তু জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি ইউনাইটেড হাসপাতালে। এরপর উঠেই পরিচালক রাজু ভাইকে বলি, চলেন শুট শেষ করি। সবাই তো অবাক।’
‘সুপার গার্ল’ শ্রাবণ্য এমনই। কাজের প্রতি একাগ্রতা আর ভালোবাসা তাঁকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে দেয়। ইস্পাহানি চায়ে চুমুক দেওয়া মিষ্টি মেয়েটা এগিয়ে যাক বহুদূর, এটাই কামনা।