ভার্মা ভার্সেস কশ্যপ
যুদ্ধটা ঘোষিত ছিল আগে থেকেই। দরকার ছিল শুধু বারুদে আগুন দেওয়ার মতো একটা মওকা। সেটা এনে দিল ‘বম্বে ভেলভেট’। অনুরাগ কশ্যপের ড্রিম প্রজেক্ট এবং হয়তো বা এটাই অনুরাগের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ফ্লপ ছবি হতে পারে। এমনই সময় মোক্ষম আঘাত হেনেছেন অনুরাগের পুরনো শত্রু রাম গোপাল ভার্মা।
যা হোক, বম্বে ভেলভেটের ব্যর্থতা স্বীকার করে ফেসবুকে লম্বা স্ট্যাটাস ইতিমধ্যেই দিয়েছেন মিস্টার কশ্যপ। সেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে দেরি করেননি কশ্যপের সিনিয়র রামগোপাল ভার্মা।
১৯৯৮ সাল। তখনকার স্ট্রাগলিং অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ি অখ্যাত অনুরাগ কশ্যপকে পাঠিয়েছিলেন বিখ্যাত পরিচালক রামগোপাল ভার্মার কাছে। তাঁর ছবির চিত্রনাট্য লেখার জন্য।
অনুরাগের কাজ ভালো লাগে ভার্মার। তাঁকে সত্য (১৯৯৮) ছবির চিত্রনাট্য লেখার কাজ দেন। অবশ্য সাথে সৌরভ শুক্লাকেও রেখেছিলেন। শুক্লা ও কশ্যপ মিলে লেখেন সত্যর স্ক্রিনপ্লে। ‘সত্য’ হিট হলেও হিতে হয়েছিল আরেক বিপরীত।
এক ঘরে দুই পীর যেমন টেকে না, তেমনি রাম গোপালের সাথেও অনুরাগের জুটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভার্মার প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে লেখার পাশাপাশি পরিচালক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন কশ্যপ। অনেক সময়, অনেক ফ্লপ পেরিয়ে বলিউডে পরিচালক হিসেবে জায়গা করে নেন কশ্যপ।
কশ্যপ-ভার্মার দ্বন্দ্ব ইন্ডাস্ট্রির সবারই জানা। এরই মধ্যে করণ জোহরের ‘কফি উইথ করণ’ টকশোতে অনুরাগকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘রামগোপাল ভার্মা ইজ...?’ অনুরাগের উত্তর ছিল, রামগোপাল ভার্মা ‘ওয়াজ’। টেলিভিশনের পর্দায় ভার্মাকে রীতিমতো অতীত বানিয়ে দিয়েছিলেন কশ্যপ!
শোধটা ভার্মা নিলেন গত ১৭ মে টুইটারে। টুইট করলেন, ‘দর্শকরা ফিরিয়ে দেওয়ার পরও একটা ব্যর্থ ছবির পরিচালক যদি নিজের ছবির গুণগান করে, তাহলে ব্যাপারটা অনেকটা একটা মেয়েকে গিয়ে বলা, আমি নিজেকে ভালোবাসি। তুমি যদি আমাকে ভালো না বাস, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
অনুরাগের নাম না নিলেও ইঙ্গিত যে অনুরাগ আর বম্বে ভেলভেটের দিকেই ছিল সেটা কারো বুঝতে বাকি নেই। অনুরাগও রিটুইটে লিখলেন, ‘স্যার, আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। এবার ভদকার বোতলটা পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক অনেক চুমু।’
ব্যস, যুদ্ধ জমে গেল। এরপর শুধুই পাল্টাপাল্টি রিটুইট। ভার্মা লেখেন, ‘স্যার, আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আর আমি পুরুষদের চুমু খাই না।’
উত্তরে অনুরাগ লেখেন, “তবে চলুন ফিল্টার কফি খাই আর ‘আগ’ এর সাফল্য উদযাপন করি।”
১৯৭৫ সালে রমেশ সিপ্পির কাল্ট ক্লাসিক ‘শোলে’র রিমেক হিসেবে ২০০৭ সালে ‘আগ’ নামে একটি ছবি বানিয়েছিলেন ভার্মা। সেটারও বম্বে ভেলভেটের মতোই মুমূর্ষু অবস্থা হয়েছিল।
নিজের ফ্লপ ছবির কথা মনে করিয়ে দিতেই ভার্মা প্রসঙ্গ পাল্টালেন, “স্যার, আপনি আমাকে যতটা ভালোবাসেন, তার চেয়ে বেশি আমি আপনাকে ভালোবাসি। সেটা আপনিও জানেন। কফিই যখন খাব, ‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে যাই চলেন। সেখানেই ছবি নিয়ে আলাপ হবে। তাহলে শিখতে পারব ‘আগ’ না বানিয়ে কীভাবে ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ বানাতে হয়!”
এখানেও একটা খোঁচা রয়েছে। একসময় নিজের ব্লগে করণ জোহরকে প্রচুর গালমন্দ করেছিলেন অনুরাগ। করণ সস্তা ছবি বানায়, নাচা-গানা ছাড়া আর কিছু নাই-ইত্যাদি ছিল তাঁর অভিযোগ।
পরে ২০১৩ সালে ‘বম্বে টকিজ’ করতে গিয়ে দুজন বন্ধু হয়ে যান। ‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে ‘বম্বে ভেলভেট’-এর নায়িকা আনুশকা শর্মাসহ দাওয়াত পান অনুরাগ। আর তার বদলেই হোক আর না হোক, ‘বম্বে ভেলভেট’ ছবিতে অভিনব এক চরিত্র মেলে করণের।
সব মিলিয়ে অনুরাগ বেশ হতাশ। নিজের ড্রিম প্রজেক্ট এভাবে মার খাবে, সেটা হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। সবসময় কম বাজেট আর অপরিচিত মুখ নিয়ে কাজ করা অনুরাগ এবার স্টারকাস্ট এবং বিগ বাজেট নিয়ে কাজ করেছিলেন। ব্যাপারটা মনে হয় বক্স অফিসের ভাগ্যদেবী মানতে পারেননি। তার উপরে রামগোপালের খোঁচা মানতেও বিশেষ আরাম নিশ্চয়ই বোধ হচ্ছে না তার!