চড়া সুর, কড়া গান
মেটাল-রাজ মেটালিকা! (পর্ব-২)
বার্টনের মৃত্যুর পর মেটালিকার প্রথম অ্যালবাম বের হয় ১৯৮৮ সালে— ‘… অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল’। অ্যালবামটি জনপ্রিয় তো হয়ই, মেটালিকাকে প্রথম বারের মতো গ্র্যামিতে মনোনয়নও পাইয়ে দেয়। সবাই সেবার ধরেই নিয়েছিল, বেস্ট হার্ড রক/মেটাল ক্যাটাগরিতে গ্র্যামি মেটালিকার ঘরেই যাচ্ছে। এমনকি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘জেথ্রো টুল’ সেবার গ্র্যামির অ্যাওয়ার্ড গিভিং সেরেমনিতেও আসেনি। তাদের ম্যানেজার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কারণ তিনিও ধরে নিয়েছিলেন, অ্যাওয়ার্ড মেটালিকাই পেতে যাচ্ছে। মেটালিকাও অনুষ্ঠানে ‘ওয়ান’ গানটি পারফর্ম করে স্টেজের পাশেই অপেক্ষা করছিল পুরস্কার গ্রহণের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয় জেথ্রো টুলের ‘ক্রেস্ট অফ আ নেইভ’ অ্যালবামের নাম। ঘটনাটিকে গ্র্যামির ইতিহাসের সেরা অঘটনগুলোর একটা হিসেবেই ধরা হয়।
পরে অ্যালবামটির ‘ওয়ান’ গানটির মিউজিক ভিডিও বানানো হয়। তাতে ব্যবহার করা হয় ‘জনি গট হিজ গান’ সিনেমার ফুটেজ। কিন্তু সে জন্য মেটালিকা সিনেমাটির প্রডিউসারদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করেনি। বরং তারা সিনেমাটার স্বত্বই কিনে নেন। অবশ্য সেই ভার্সনটি এমটিভি চালাবে কি না, তাই নিয়ে মেটালিকা বেশ ধন্ধেই ছিল। তারা এমনকি এমটিভিতে পাঠানোর সময় একটা সাধারণ মিউজিক ভিডিও-ও সঙ্গে পাঠিয়েছিল। এমটিভি অবশ্য সিনেমার ফুটেজসহ মিউজিক ভিডিওটিই চালায়। আর মিউজিক ভিডিওটিও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৯০ সালে মেটালিকা বিখ্যাত ওয়ান অন ওয়ান রেকর্ডিং স্টুডিওতে পা দেয়। বের হয় ব্যান্ডটির নামে অ্যালবাম ‘মেটালিকা’। অ্যালবামটি অবশ্য এর কাভারের জন্য ‘দ্য ব্ল্যাক অ্যালবাম’ নামেও পরিচিত। অ্যালবামটি মেটালিকাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে আসে। দশটি দেশে অ্যালবামটি বিক্রির হিসেবে শীর্ষে উঠে আসে। প্রথম সপ্তাহে কেবল আমেরিকাতেই বিক্রি হয় সাড়ে ৬ লাখ কপি। এই অ্যালবাম দিয়েই মেটালিকা মূল ধারার সেরা ব্যান্ডের কাতারে চলে আসে। অ্যালবামটি তৈরির পেছনের গল্প, সঙ্গে অ্যালবাম-পরবর্তী কনসার্ট নিয়ে বানানো হয় ডকুমেন্টারি—আ ইয়ার অ্যান্ড আ হাফ ইন দ্য লাইফ অব মেটালিকা।
মেটালিকার এই কনসার্টগুলোর সমাপ্তি হয় বেশ দুঃখজনকভাবে। হেটফিল্ডের সঙ্গে দুর্ঘটনার একটা গভীর যোগ ছিল আগে থেকেই। এর আগেও বার দুয়েক হাত ভেঙেছিল তার। দুবারই তাদের টেকনিশিয়ান জন মার্শালের হাতে গিটার তুলে দিয়ে তাকে কেবল মাইক হাতে গাইতে হয়েছিল। এবার তার শরীরের একটা অংশ পুড়েই যায়। ঘটনাটা ঘটে ১৯৯২ সালের ৮ আগস্ট। সেদিন ‘গানস এন রোজেস’-এর সাথে কনসার্ট করছিল মেটালিকা। কো-হেডলাইনার কনসার্ট। সে কনসার্টে পাইরোটেকনিক সেটআপে কোনো একটা সমস্যা হয়। ফলাফল, হেটফিল্ড এগিয়ে গেলেন, আর তার শরীর ১২ ফুট লম্বা আগুনের শিখার মধ্যে হারিয়ে গেল। পরের কনসার্টগুলোতে গিটার আবারও চলে গেল জন মার্শালের হাতে। হেটফিল্ড আবারও বেশ কিছুদিনের জন্য কেবল মাইক হাতে গান গাইলেন।
১৯৯৬-৯৭ সালে, পরপর দুই বছরে মুক্তি পায় মেটালিকার দুইটি অ্যালবাম—‘লোড’ এবং ‘রিলোড’। দুটি অ্যালবামের কাজই মেটালিকা একসাথে শুরু করেছিল। অর্ধেক গান নিয়ে আগের বছরে প্রকাশ করে ‘লোড’। বাকি গানগুলো নিয়ে তারা আরো কাজ করে, পরের বছর ‘রিলোড’ প্রকাশ করে। এই অ্যালবাম দুটি দিয়ে মেটালিকার গানের ঘরানাতেও পরিবর্তন আসে। পরিবর্তন আসে তাদের চেহারা ও সাজসজ্জাতেও। তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল অ্যালবাম দুটির কাভারে। দুটি কাভারই ডিজাইন করেন আন্দ্রেস সেরানো। ‘লোড’-এর কাভার ডিজাইন করতে তিনি ব্যবহার করেন তাঁর নিজের রক্ত ও বীর্য! আর ‘রিলোড’-এর কাভার ডিজাইন করতে তিনি ব্যবহার করেন তাঁর রক্ত আর মূত্র!
২০০০ সাল। ‘মিশন ইম্পসিবল ২’-এর জন্য একটা ট্র্যাকের কাজ করছিল মেটালিকা। নাম ‘আই ডিসেপিয়ার’। হঠাৎই তারা একদিন আবিষ্কার করলেন, বিভিন্ন রেডিওতে ট্র্র্র্যাকটা বাজানো হচ্ছে। খুঁজে-পেতে দেখা গেল, ‘নেপস্টার’-এ শেয়ার হতে হতে গানটা ছড়িয়ে গেছে। শুধু ওই গানটাই না, তাদের ব্যান্ডের আরো অনেক গানই নেপস্টারে মুফতে পাওয়া যাচ্ছে। মেটালিকা সোজা চলে গেল ক্যালিফোর্নিয়ার জেলা আদালতে। কপিরাইট লঙ্ঘনসহ তিনটা অভিযোগ তুলে ঠুকে দিল মামলা। ১১ জুলাই বিচারক নেপস্টারকে নির্দেশ দিলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে কপিরাইট ফিল্টার বসাতে হবে। অর্থাৎ কোনো শেয়ার করা গানের শিল্পী যদি আপত্তি করে, তবে সেই গান সাথে সাথে সরিয়ে ফেলতে হবে।
এরই মধ্যে ‘বার্টালসমান’ নামের এক জার্মান কোম্পানি নেপস্টার কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মেটালিকার সাথে সমঝোতায় আসে। সমঝোতার ফলে, কেউ যদি শিল্পীর অনুমতি ছাড়া গান নেপস্টারে শেয়ার করে, তবে তাকে ব্লক করা হবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বার্টালসমান আর নেপস্টার কিনতে পারেনি। তার আগেই নেপস্টারকে দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করে আদালত। এই ঘটনার জের গড়ায় সে বছরের এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড পর্যন্ত। অ্যাওয়ার্ড গিভিং সেরেমনিতে মেটালিকার লার্স উলরিচ আর নেপস্টারের প্রতিষ্ঠাতা শন ফ্যানিং দুজনেই দুজনকে খোঁচা দিয়ে বেশ কিছু কাণ্ড ঘটান।
পরের বছরের শুরুতেই মেটালিকা ছাড়েন নিউস্টেড। আগে থেকেই মেটালিকায় নিউস্টেডের অবস্থান খানিকটা নড়বড়ে ছিল। নিউস্টেড আসার পর প্রথম অ্যালবাম … অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল-এ তো তার তেমন কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। তবে মূল খিটিমিটি লাগে হেটফিল্ডের সাথে, প্লেবয়ে একটা সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়। প্লেবয়কে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে নিউস্টেড তার ব্যক্তিগত সাইড প্রজেক্ট ইকোব্রেইন-এর কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের মধ্যেই হেটফিল্ড সেটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি সোজা বলে দেন, মেটালিকায় থেকে অন্য কোনো সাইড প্রজেক্টে কাজ করলে সেটা মেটালিকাকে দুর্বল করে দেবে। ব্যাপারটাকে স্ত্রীকে ধোঁকা দেওয়ার সাথেও তুলনা করেন হেটফিল্ড। তখন নিউস্টেডও হেটফিল্ডকে আক্রমণ করে বসেন। হেটফিল্ড এর মধ্যে ‘সাউথ পার্ক : বিগার লংগার অ্যান্ড আনকাট’ নামের একটা অ্যানিমেশন মুভির গানে ভোকাল দিয়েছিলেন। কণ্ঠ দিয়েছিলেন আরো দুটি অ্যালবামে। যদিও কোনোটিতেই হেটফিল্ডের নাম যায়নি। নিউস্টেড সে সবের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সব মিলিয়ে অবস্থা গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়। মেটালিকার সাথে নিউস্টেডের বেশ ভালোই দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়।
সে বছরই মেটালিকা তাদের পরের অ্যালবামের কাজ শুরু করে- ‘সেন্ট অ্যাঙ্গার’। এই অ্যালবামে, এবং এই সময়ের কনসার্ট-শোগুলোতে বেস বাজান তাদের প্রডিউসার বব রক। অ্যালবামের কাজ শেষ হলে, ২০০৩ সালের শুরুর দিকে মেটালিকা আবারও নতুন বেসিস্ট নেওয়ার ঘোষণা দেয়। আবারও একগাদা বেসিস্ট অডিশন দেয়। অডিশন চলে তিন মাস ধরে। শেষ পর্যন্ত মেটালিকার নতুন বেসিস্ট হিসেবে যোগ দেন সুইসাইডাল টেন্ডেন্সিস এবং ওজি ওসবোর্নের ব্যান্ডের বেসিস্ট রবার্ট ত্রুজ্জিলো। ওদিকে অবস্থা বুঝে নিউস্টেডও ততদিনে ভয়ভড-এ যোগ দিয়েছেন (২০০২ সালে)। ২০০৩ ওজফেস্টে ওজির ব্যান্ডে ত্রুজ্জিলোর বদলি হিসেবেও বাজান নিউস্টেড।
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে, সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয় মেটালিকাকে নিয়ে বানানো একটা ডকুমেন্টারির। নাম সাম কাইন্ড অফ মনস্টার। ডকুমেন্টারির দুই নির্মাতা জো বার্লিংগার এবং ব্রুস সিনোফস্কি ২০০১ সালের এপ্রিল থেকেই মেটালিকার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। প্রায় দুই বছর মেটালিকাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তারা প্রায় হাজার ঘণ্টার ফুটেজ নেন। ডকুমেন্টারিটাতে নিউস্টেডের সঙ্গে মেটালিকার দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সেন্ট অ্যাঙ্গার অ্যালবামের বিহাইন্ড দ্য সিন, এবং সেই সময়ে হেটফিল্ডসহ ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যদের রিহ্যাব প্রক্রিয়াও উঠে আসে।
বরাবরের মতোই সেন্ট অ্যাঙ্গারও ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। টাইটেল ট্র্যাকটি বেস্ট মেটাল পারফর্মেন্স ক্যাটাগরিতে গ্র্যামিও জিতে নেয়। গানটি সে বছর রেসলিংয়ের সামার স্ল্যাম ২০০৩-এর অফিশিয়াল থিম সং হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সব মিলিয়ে পুরো অ্যালবামটি সমালোচকদের খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
মেটালিকা আরেকবার দুর্ঘটনার মুখে পরে ২০০৪ সালে। ডাউনলোড ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার ঠিক আগে উলরিচকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়। অবশ্য মেটালিকা পারফর্ম করে। দুটো গানে ড্রামস বাজিয়ে দেন স্লেয়ারের ডেভ লম্বার্ডো, একটা গানে বাজান উলরিচের টেকনিশিয়ান ফ্লেমিং লারসেন, বাকিগুলোতে ড্রামস বাজান স্লিপনটের জোয়ি জোর্ডিসন।
মেটালিকা তার পরের অ্যালবাম বের করে বছর পাঁচেক পরে, ২০০৮ সালে। নাম ‘ডেথ ম্যাগনেটিক’। এই অ্যালবামের মাধ্যমেই প্রডিউসার বব রকের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ পনের বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটে। ঘোষণাটা আসে ২০০৭ সালের শুরুতে, মেটালিকার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। নতুন অ্যালবামটা আসে ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। নতুন প্রডিউসার হন রিক রুবিন। অ্যালবামটার মুক্তি নিয়েও বেশ নাটকীয়তা হয়। ‘ডেথ ম্যাগনেটিক’ বাজারে আসার কথা ছিল ১২ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ফ্রান্সের একটা দোকান ২ সেপ্টেম্বর থেকেই অ্যালবামটি বিক্রি করতে শুরু করে। খুব তাড়াতাড়ি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যালবামের গানগুলো বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়েও পরে। শেষে বাধ্য হয়ে অ্যালবামটির পরিবেশক/ডিস্ট্রিবিউটর ভার্টিগো রেকর্ডস ১০ সেপ্টেম্বর অ্যালবামটি বাজারে ছেড়ে দেয়।
এবার আর ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা গা করেনি মেটালিকা। ইন্টারনেট-যুগের পরিবর্তিত পরিস্থিতি তারা হাসিমুখেই মেনে নেয়। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে উলরিচ উল্টো আরো খুশি হওয়ার কথাই জানান। আর এত কিছুর পরও অ্যালবামটি ভালোই ব্যবসা করে। টানা তিন সপ্তাহ ছিল বিলবোর্ডের শীর্ষে।
২০০৯ সালে মেটালিকা ‘রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম’-এ জায়গা করে নেয়। সে অনুষ্ঠানে ডেকে নেওয়া হয় তাদের সাবেক বেসিস্ট জ্যাসন নিউস্টেডকেও। পুরনো গানগুলোতে তার একার বেস বাজানোর কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত বেস বাজান নিউস্টেড আর ত্রুজ্জিলো দুজনেই। আর ক্লিফ বার্টনের হয়ে মঞ্চে ওঠেন তার বাবা রে বার্টন। মেটালিকা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের শুরুর দিনের বিতর্কিত সাথী ডেভ মাস্টেইনকেও। কিন্তু তখন ইউরোপ ট্যুরে থাকায় আসতে পারেননি তিনি।
২০১০ সালের ১৬ জুন। থ্র্যাশ মেটাল ভক্তদের জন্য অবিস্মরণীয় এক দিন। তখন ওয়ারশতে চলছিল সোনিস্ফিয়ার ফেস্টিভ্যাল। সেখানে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে ওঠে থ্র্যাশ মেটালের চার কুতুব ব্যান্ড- মেটালিকা, মেগাডেথ, স্লেয়ার ও অ্যানথ্রাক্স।
এরপর আরো অনেক কনসার্ট করেছে মেটালিকা। করছেও। সমসাময়িক অন্যান্য ব্যান্ডের তুলনায় তারা এখনো অনেক বেশি সক্রিয়। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর কনসার্ট করে গেছে ভারতের ব্যাঙ্গালোরেও। আর ২০১২ সালেই তারা ঘোষণা দেয়, মেটালিকার দশম অ্যালবামের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের এই দশম অ্যালবাম নিয়ে ভক্তরা বেশ কয়েক বছর বেশ উৎকণ্ঠা নিয়েই অপেক্ষায় ছিল। সে অপেক্ষারও শেষ হলো বলে। অ্যালবামের কাজ এক রকম শেষই। নাম ঠিক করা হয়েছে ‘হার্ডওয়্যার্ড… টু সেল্ফ ডিস্ট্র্যাক্ট’। এ বছরের ১৮ আগস্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অ্যালবাম মুক্তির তারিখও। আসছে ১৮ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে মেটালিকার দশম অ্যালবাম।
মেটালিকার শুরুটা হয়েছিল দ্রুত লয়ের চড়া সুরের থ্র্যাশ মেটাল দিয়ে। তবে তারা সবসময় একই ঘরানায় একই ঢঙে গান করেনি। ১৯৯১ সালে বব রক দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের মিউজিকের ধরন অনেকটাই বদলে যায়। আগের তুলনায় তাদের গানগুলোর টেম্পো কমে যায়। অ্যাগ্রেসিভনেস কমে যায়। ‘লোড’ অ্যালবামটিতে তাদের গানগুলো ছিল অনেকটাই অল্টারনেটিভ রক ঘরানার। আবার ‘রিলোড’-এর গানগুলোতে ব্লূজ এবং হার্ড রকের প্রভাব ছিল বেশি। পরে সেন্ট অ্যাঙ্গার থেকে আবার তাদের গানের ধরন বদলে যায়। তারা গান থেকে গিটার সলো একেবারেই বাদ দিয়ে দেয়। তাদের মিউজিক হয়ে ওঠে একেবারেই রিফ-নির্ভর। তবে শেষ অ্যালবামে রিক রুবিনের হাত ধরে তারা আবার তাদের শেকড়ের কাছাকাছি ফিরে এসেছে। ডেথ ম্যাগনেটিকের গানগুলো অনেকটাই বিশুদ্ধ থ্র্যাশ মেটাল।
পরের অ্যালবামটি, মানে ‘হার্ডওয়্যার্ড… টু সেল্ফ ডিস্ট্র্যাক্ট’ মুক্তি পেলেই জানা যাবে, থ্র্যাশ মেটালের অন্যতম পাইওনিয়ার ব্যান্ড মেটালিকা থ্র্যাশ মেটাল ব্যান্ড হিসেবেই তাদের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেবে, নাকি তাদের গানের ধরনে আবারও পরিবর্তন আসবে। অবশ্য ভক্তদের বোধহয় কোনোটাতেই আপত্তি নেই, মেটালিকার অ্যালবাম বলে কথা!
মেটালিকা
লাইন-আপ
ভোকাল, লিড গিটার- জেমস হেটফিল্ড
লিড গিটার, ব্যাক ভোকাল- কার্ক হ্যামেট
বেস, ব্যাক ভোকাল- রবার্ট ত্রুজ্জিলো
ড্রামস- লার্স উলরিচ
সাবেক সদস্য- ডেভ মাস্টেইন (গিটার), রন ম্যাকগভনি (বেইস), ক্লিফ বার্টন (বেইস), জ্যাসন নিউস্টেড (বেইস)
স্টুডিও অ্যালবামসমূহ
কিল ’এম অল (১৯৮৩)
রাইড দ্য লাইটনিং (১৯৮৪)
মাস্টার অফ পাপেটস (১৯৮৬)
… অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল (১৯৮৮)
মেটালিকা (১৯৯১)
লোড (১৯৯৬)
রিলোড (১৯৯৭)
সেন্ট অ্যাঙ্গার (২০০৩)
ডেথ ম্যাগনেটিক (২০০৮)
হার্ডওয়্যার্ড… টু সেল্ফ ডিস্ট্র্যাক্ট (২০১৬)
গুরুত্বপূর্ণ কনসার্ট ও ট্যুরসমূহ
কিল ’এম অল ফর ওয়ান (১৯৮৩)
ব্যাং দ্যাট হেড দ্যাট ডাসন্ট ব্যাং (১৯৮৪)
রাইড দ্য লাইটনিং ট্যুর (১৯৮৫)
ড্যামেজ ইনকর্পোরেশন ট্যুর (১৯৮৬-৮৭)
ড্যামেজড জাস্টিস (১৯৮৮-৮৯)
হোয়েরেভার উই মে রোম ট্যুর (১৯৯১-৯২)
গানস এন’ রোজেস/মেটালিকা স্টেডিয়াম ট্যুর (১৯৯২)
শিট হিটস দ্য শেডস ট্যুর (১৯৯৪)
লোল্লাপালুজা নাম্বার ৬ (১৯৯৬)
পোর ট্যুরিং মি (১৯৯৬-৯৭)
পোর রি-ট্যুরিং মি (১৯৯৮-৯৯)
গ্যারেজ রিমেইনস দ্য সেম ট্যুর (১৯৯৯)
ম্যাডলি ইন অ্যাঙ্গার উইথ দ্য ওয়ার্ল্ড ট্যুর (২০০৩-০৪)
এস্কেপ অব দ্য স্টুডিও ০৬ (২০০৬)
সিক অফ দ্য স্টুডিও ০৭ (২০০৭)
ওয়ার্ল্ড ম্যাগনেটিক ট্যুর (২০০৮-১০)
ইউরোপিয়া ব্ল্যাক অ্যালবাম ট্যুর (২০১২)
মেটালিকা লর্ডস অব সামার (২০১৫)