সিদ্দিক আহমেদের গল্পে কাঁদছে দর্শক

এবারের ঈদে বড় পর্দার সিনেমা নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, সে তুলনায় ছোট পর্দার ওটিটি-নাটক নিয়ে আলোচনা কম। সেই কম আলোচনার মধ্যে যে কনটেন্ট নিয়ে দর্শক কথা বলছেন সেটি, ইউটিউব ফিল্ম ‘তোমাদের গল্প’। ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে মোস্তফা কামাল রাজের এই কাজটি।
যৌথ পরিবারের মধ্যে বন্ধন অটুট থাকার গল্প নিয়ে দেড় ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এই ফিল্মটি দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেছে। আর এই আবেগাপ্লুত করার কারিগর সিদ্দিক আহমেদ। তাঁর রচনা ও চিত্রনাট্যে নির্মিত হয়েছে ‘তোমাদের গল্প’।
সিদ্দিক আহমেদের তরুণ চিত্রনাট্যকর হিসাবে খ্যতি আছে বেশ; গেল ঈদের একই পরিচালকের ‘ওমর’ সিনেমার চিত্রনাট্যও তাঁর করা।
‘তোমাদের গল্প’ ইউটিউব ফিল্মটিকে দর্শক নাটক হিসেবে চিহ্নিত করলেও গল্পকার চিত্রনাট্যকার সিদ্দিক আহমেদ জানালেন তিনি এটিকে ফিল্মের মতো করেই লেখেছেন। নিজে ডিরেক্টর সে কারণে এটিকে তিনি নিজেই বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোন ওটিটি প্লাটফর্ম এমন পারিবারিক গল্পে কাজ করতে রাজি হচ্ছিল না। শেষমেষ গল্পটি পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজকে এক আড্ডায় শোনান তিনি। রাজের পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তিনি গল্প চেয়ে বসেন।
সিদ্দিক আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে সেই গল্পে বলছিলেন, ‘রাজ ভাইয়ের সাথে আমার আপন ভাইয়ের মতো সম্পর্ক। আমি বানাই বা উনি তাতে কোন পার্থক্য দেখিনি। তাছাড়া এমন অস্থির সময়ে কাজটা হওয়া জরুরী ছিল বেশি। আমারা দুজনেই মানুষকে একটা সম্পর্কের আর স্বস্তির গল্প দেখাতে চাইছিলাম।’

এরপর মোস্তফা কামাল রাজের জন্য চিত্রনাট্য করতে শুরু করেন তিনি। এই চিত্রনাট্য করতে স্বাভাবিকের চেয়ে তার সময় বেশি লেগেছে। কাস্টিং হয়ে যাওয়ার বেশ পরে তিনি চিত্রনাট্য জমা দেন। এমন চিত্রনাট্য করার কারণ জানতে চাইলে সিদ্দিক জানান, ‘চারিদিকে খুবই অস্থির সময় যাচ্ছে। আমরা মানুষ হিসেবে মানুষের সাথে সম্পর্ক ভুলে যাচ্ছি। নিজেদের আপনজন ভুলে যাচ্ছি স্বার্থের জন্য। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা সম্পর্কের গল্প খুব প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছিল আমার। সেই চিন্তা থেকেই গলপটার জন্ম। তাছাড়া আমরা ক্রমশ গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। সেই সেকরে ফেরার গল্প আর যৌথ পরিবারের গন্ধ ধরতে চেয়েছিলাম। সে কারণেই সম্ভবত মাথায় গল্পটা আসে।’
নির্মানের পর দর্শকের অনুভূতি দেখে লেখক অবাক হয়েছেন। এই কৃতিত্ব তিনি দিতে চান পরিচালককে। তার ভাষায় মোস্তফা কামাল রাজ গল্পে বিশ্বাস করে না বানালে এই গল্প আলোর মুখ দেখত না। তাছাড়া পরিচালক যোগ্য লোকেদের অভিনয়ে নিয়েছেন। আজকালকার কন্টেন্টে তো দায়সারা কাস্টিং নেয়া হয়। লেখক আর কৃতিত্ব দিতে চান মিউজিক ডিরেক্টরকে। লেখকের মতে মিউজিক খুব ভাল ভূমিকা রেখেছে দর্শকের ইমোশন ধরতে।
লেখকের সাথে কথায় কথায় জানা গেল তিনি ঈদে আলোচিত ‘বরবাদ’ সিনেমার চিত্রনাট্যেও কাজ করেছেন। স্ক্রিনে নাম নেই কেন জানতে চাইলে তিনি সরল ভঙ্গীতে জানালেন, সম্ভবত পরিচালক আমাকে যোগ্য ভাবেননি।
সিদ্দিকের এমন দাবির পর ‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয় বলেন, ‘ভারত থেকে ভুল ডিসিপি আসায় উনার (সিদ্দিক আহমেদ) নাম ভুল করে বাদ পড়েছে। আমরা পরবর্তীতে ওটিটি ও অনলাইনে চিত্রনাট্যকার হিসাবে উনার নাম যুক্ত করব।’
চলতি বছরের ‘ফেউ’ ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য করেছেন তিনি, মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর চিত্রনাট্যের সিনেমা ‘রইদ’, যেটি পরিচালনা করেছেন ‘হাওয়া’ খ্যাত নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন। এছাড়াও ‘খাঁচার ভেতর অচীন পাখি’, ‘টান’ এবং ‘ওমর’ সিনেমার চিত্রনাট্য করেছেন তিনি।
নতুন কাজ প্রসঙ্গে সিদ্দিকের ভাষ্য, ‘আমি মূলত লেখক, এখন বইয়ের কাজ করছি। চিত্রনাট্যেও করছি ওটিটি ও সিনেমার জন্য করছি। নিজে যেহেতু নির্মাণ করি, একাধিক সিনেমা ও ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে আলোচনা চলছে প্রযোজকদের সঙ্গে।’
চিত্রনাট্যকর সিদ্দিক আহমেদ নির্মাণে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘জাগো বাহে’র ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি ‘শব্দের খোয়াব’ তাঁর সৃষ্টি। নির্মাণ করেছেন ক্রাইম থ্রিলার ধাঁচের ওয়েব সিরিজ ‘অগোচরা’; পুরান ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প।