ঈদুল আজহায় মুক্তির অপেক্ষায় যেসব বাংলাদেশি সিনেমা

ঢালিউড পাড়ায় এখনও কাটেনি ঈদুল ফিতরে মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমার রেশ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি। অবশ্য নির্মাণের সময়সীমার ভিত্তিতে অনেক আগে থেকেই বছরের দ্বিতীয় ঈদ উৎসবের আয়োজনে সারিবদ্ধ হয়েছে ছবিগুলো। তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই একাধিকবার পেছানোর পর ঠিক হয়েছে মুক্তির দিনক্ষণ। চলুন, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোন চলচ্চিত্রগুলোর মুক্তির কথা চলছে তা জেনে নেওয়া যাক।
২০২৫ ঈদুল আজহায় মুক্তির মিছিলে ৭টি বাংলাদেশি সিনেমা
তান্ডব
আসন্ন ঈদে দর্শক আগ্রহ তুঙ্গে থাকা সিনেমাটি হচ্ছে শাকিব খান অভিনীত ‘তান্ডব’। ‘তুফান’-এর পর আবারও ঢালিউড সুপারস্টারকে নিয়ে ছবি বানালেন পরিচালক রায়হান রাফি।
এবার শাকিবের বিপরীতে প্রধান নায়িকা হিসেবে থাকবেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাবিলা নূর। আর এর মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে সাবিলার।
ছবিতে সাংবাদিকের ভূমিকায় দেখা যাবে দুই বাংলায় বহুল সমাদৃত অভিনেত্রী জয়া আহসানকে। এছাড়া ৪০ সেকেন্ডের একটি ক্যামিওতে দেখা দেবেন বর্তমান সময়ের ব্যস্ততম তারকা শরিফুল রাজ। রায়হান রাফী নিজেই চলচ্চিত্রটির মূল গল্প লিখেছেন। চিত্রনাট্যে রাফীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছেন আদনান আদিব খান। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে হামলার প্রেক্ষাপট নিয়ে এগিয়ে যাবে সিনেমার কাহিনী।
পিনিক
শবনম বুবলীকে প্রথমবারের মতো খলনায়িকার ভূমিকায় দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। কিন্তু তাদের এই প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত করে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে ছবি মুক্তির দিনক্ষণ। তবে এবারের কুরবানীর ঈদে চূড়ান্ত মুক্তির কথা চলছে জাহিদ জুয়েল পরিচালিত এই সিনেমাটির।
সিনেমায় তার প্রধান সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন আদর আজাদ। ২০২২-এর ‘তালাশ’ এবং ২০২৩-এর ‘লোকাল’-এর পর ‘পিনিক’ বুবলী-আদর জুটির তৃতীয় কাজ। থ্রিলার, সাসপেন্স ও অ্যাকশনে ভরপুর ছবিটিতে প্রাধান্য পেয়েছে জিঘাংসা, প্রতিশোধ, এবং পাল্টা প্রতিশোধের গল্প। চিত্রনাট্যে রয়েছেন আখিউজ্জামান মেনন।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন আলী রাজ, ফজলুর রহমান বাবু ও আজাদ আবুল কালাম-এর মতো অভিনেতারা। এছাড়াও আছেন সমু চৌধুরী, মাসুম বাশার, মোমেনা চৌধুরী, এ কে আজাদ সেতু, শরীফ সিরাজ, নাফিস আহমেদ বিন্দু, এবং জয়িতা মহলানবীশ। ইউরো বাংলা এন্টারটেইনমেন্ট-এর সাথে সিনেমার সহ-প্রযোজনা করেছেন অভিনেতা শিমুল খান।
ইনসাফ
ছোট পর্দার দর্শকনন্দিত অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের নতুন সিনেমার নাম ‘ইনসাফ’। ওয়েব চলচ্চিত্রের বাইরে বাংলাদেশে এটি ফারিণের দ্বিতীয় ছবি। এর আগে ২০২৪ সালে তার অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা ‘ফাতিমা’ মুক্তি পায়। ‘ইনসাফ’-এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো তিনি ফর্মুলা ছবির নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। এখানে তার বিপরীতে রয়েছেন শরিফুল রাজ। আর খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে শক্তিমান অভিনেতা মোশাররফ করিমকে। অ্যাকশন ও থ্রিলার গল্প কেন্দ্রীক সিনেমাটির নির্দেশনা দিয়েছেন সঞ্জয় সমাদ্দার।
টগর
অপ্রকাশিত চলচ্চিত্র ‘নাকফুলের কাব্য’-এর পর দ্বিতীয়বারের মতো জুটিবদ্ধ হচ্ছেন পূজা চেরী ও আদর আজাদ। আলোক হাসানের পরিচালনায় ‘টগর’ শিরোনামের এই সিনেমাটি অ্যাকশন ও থ্রিলার ঘরানার। কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং প্রযোজনায় রয়েছে এ আর মুভি নেটওয়ার্ক। সংলাপ লেখনীতে ছিলেন মামুনুর রশিদ তানিম। সিনেমার অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন রোজী সিদ্দিকী, আজাদ আবুল কালাম, জোযন, সুমন আনোয়ার, এল আর খান সীমান্ত, ও শরিফুল।
নীলচক্র
বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ পেছানোর পর আরিফিন শুভ অভিনীত ‘নীলচক্র’ এবার কুরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিঠু খান পরিচালিত চলচ্চিত্রটির ইতিপূর্বে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে আমেরিকান ফিল্ম মার্কেটে।
এনায়েত এ মিলন প্রযোজিত এই সিনেমায় শুভ’র নায়িকা ছিলেন মন্দিরা চক্রবর্তী। এটি মন্দিরার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি। ‘কাজলরেখা’য় তার প্রথম কাজ দেখিয়ে তিনি দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
‘নীলচক্র’ সিনেমাটি ক্রাইম ঘরানার, যেখানে ইন্টারনেট জগতের নেতিবাচক দিককে তুলে ধরা হয়েছে। মানব কল্যাণে ইন্টারনেটের তাৎপর্যবহুল অবদান থাকলেও এর গহীনে রয়েছে ভয়াবহ ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, এমনকি প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে। এমনি প্রেক্ষাপটের উপর নির্মিত হয়েছে সিনেমার কাহিনী।
‘নীলচক্র’-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয় যাত্রা শুরু করলেন সংগীতশিল্পী বালাম। এছাড়া নানা ভূমিকায় অভিনয়ে দেখা যাবে শিরীন আলম, ফজলুর রহমান বাবু, খালেদা আক্তার কল্পনা, প্রিয়ন্তী ঊর্বী, দীপান্বিতা মার্টিন, শাহেদ আলী, মনির আহমেদ শাকিল, মাসুম রেজওয়ান, এবং টাইগার রবিকে।
উৎসব
কাইজার ওয়েব সিরিজ-খ্যাত পরিচালক তানিম নূর-এর নতুন চলচ্চিত্র ‘উৎসব’। কিংবদন্তির ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের ‘এ ক্রিসমাস ক্যারোল’ অবলম্বনে বানানো হয়েছে সিনেমার গল্প। এখানে বিখ্যাত চরিত্র ‘স্ক্রুজ’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন খ্যাতিমান অভিনেতা জাহিদ হাসান।
এখনও ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি ‘উৎসব’ টিম। তবে ইতোমধ্যে ভিন্ন আঙ্গিকের সিনেমাপ্রেমিদের মধ্যে এ নিয়ে সমূহ প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এশা মার্ডার: কর্মফল
একাধিকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। তবে এবার আসন্ন ঈদকে টার্গেট করে পুরোদমে অগ্রসর হচ্ছেন নির্মাতা সানী সানোয়ার। ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ ও ‘মিশন এক্সট্রিম’-খ্যাত এই পরিচালক নিজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা। আর তার মুভিগুলোতেও প্রধান ভূমিকায় থাকে কোনও না কোনও পুলিশ চরিত্র। এশা মার্ডারও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে পুলিশী চরিত্রে রয়েছেন বাঁধন, যেখানে একই জেলায় সংঘটিত তিনটি মেয়ের খুনের তদন্তের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তাকে।
শ্রেষ্ঠাংশে থাকা অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন পূজা ক্রুজ, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, এজাজ আহমেদ, ও মাজনুন মিজান। এ ছাড়াও নানা ভূমিকায় রয়েছেন সুষমা সরকার, সুমিত সেনগুপ্ত, শরীফ সিরাজ, দীপু ঈমাম, নিবির আদনান নাহিদ, এবং আনিসুল হক বরুণ।
পরিচালনার পাশাপাশি মার্ডার মিস্ট্রি ঘরানার সিনেমাটির গল্পও লিখেছেন সানি সানোয়ার। চিত্রনাট্যে তার সাথে যৌথভাবে অবদান রেখেছেন হাসানাত বিন মতিন। সংলাপের দায়িত্বে ছিলেন শাহজাহান সৌরভ।
প্রসঙ্গত, ২০২৫-এর ঈদুল আজহায় এই বাংলাদেশি চলচ্চিত্রগুলোর মুক্তির মাঝে নিহিত রয়েছে সম্প্রতি হলগুলোতে ফেরা সুদিনের ধারাবাহিকতা। তন্মধ্যে দর্শক টানার ক্ষেত্রে একক ভাবে শীর্ষস্থানটি নিশ্চিত করেছে শাকিব খানের ‘তান্ডব’। একাধিকবার কালক্ষেপণের পর এবার আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা রয়েছে ‘পিনিক’, ‘নীলচক্র’, এবং ‘এশা মার্ডার’-এর। অনবদ্য চিত্রনাট্যে মুগ্ধতার দাবি রাখছে ‘ইনসাফ’ ও ‘উৎসব’। আদর-পূজার রসায়ন কতটা দর্শকপ্রিয়তা পাবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ‘টগর’ মুক্তি পর্যন্ত। সর্বপরি, ঢালিউডের এই ঈদ আয়োজনে নতুন কিছু দেখার প্রত্যাশা থাকছে বাংলাদেশি মুভিপ্রেমিদের।