নভেম্বরে মুক্তির অপেক্ষায় যেসব সিনেমা–ওয়েব সিরিজ
বিগত কয়েক বছরের ঢালিউড শিল্পের উন্নয়নের ধারা সঙ্গতিপূর্ণ রাখতে আগামী মাসও সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে বিনোদন বিচিত্রায়। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সিনেমাই নয়, পূর্ণদৈর্ঘ্য পর্দায় কাঁপন তোলার জন্য মূলধারার বাইরের সিনেমাগুলোও তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এর সঙ্গে শামিল হয়েছে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কন্টেন্ট ওয়েব সিরিজও। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজগুলো নভেম্বরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
যেসব বাংলাদেশি সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ মুক্তি পাচ্ছে নভেম্বরে
বেওয়ারিশ-প্রচলিত (২ নভেম্বর)
মুক্তির এই যাত্রায় সবার আগে রয়েছে চরকি ওটিটি (ওভার-দ্যা-টপ) প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্মিত ওয়েব সিরিজ প্রচলিত। হ্যালোইনের লগ্নকে স্বাগত জানাতে রোমাঞ্চকর এক কন্টেন্ট উপহার দিলেন প্রযোজক রেদওয়ান রনি। পাঁচটি অতিপ্রাকৃত গল্প নিয়ে রচিত এই সিরিজটির পরিচালনায় ছিলেন মো. আবিদ মল্লিক। সমাজে লোকমুখে রটে যাওয়া অমিমাংসিত রহস্যের কিছু ঘটনাকে নাট্যরূপ দেওয়া হয়েছে এই অমনিবাসে।
এই সিরিজের তৃতীয় পর্ব বেওয়ারিশসহ বাকি ৩টি পর্ব বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দেখানো হবে চরকির পর্দায়। বেওয়ারিশ গল্পটি ২৬ মিনিটের সেখানে কেন্দ্রিয় চরিত্রে দেখা যাবে রফিউল কাদের রুবেলকে।
বাকিগুলোর মধ্যে কলিংবেল নামের পর্বটি স্ট্রিমিং হবে ৯ নভেম্বর এবং ১৬ নভেম্বরে দেখানো হবে হাতবদল। এই পর্বগুলোতে অভিনয়ে দেখা যাবে ইয়াশ রোহান, মাহমুদ আলম, সাদিয়া আয়মান, তনয় বিশ্বাস, রাফায়েতুল্লাহ সোহান, ফারিন খান, খালিদ হাসান রুমি, শাহানা রহমান সুমি, ও আশরাফুল আশীষকে।
গত মাসে মুক্তি পাওয়া রিংটোন ও বিলাই-এর জন্য ইতোমধ্যে বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন যথাক্রমে মোস্তফা মনোয়ার এবং আব্দুল্লাহ আল সেন্টু।
ওয়েব সিরিজের সিনেমাটোগ্রাফির কাজ করেছেন রাজু রাজ এবং কালার গ্রেডিং করেছেন আশরাফুল আলম। সঙ্গীত ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের দায়িত্বে ছিলেন খৈয়াম সানু সন্ধি ও সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে ছিলেন রিপন নাথ। নাট্যাংশগুলোর সম্পাদনার কাজ করেছেন সবুজ শেখ।
অসম্ভব (৩ নভেম্বর)
অসম্ভব শিরোনামের চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালনায় অভিষেক হলো ৯০ দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাসের। সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমাটি নানা চড়াই-উৎড়াইয়ের পর অবশেষে মুক্তির দিন দেখতে চলেছে ৩ নভেম্বর।
প্রেম ও সংঘাতের পাশাপাশি সংস্কৃতি এবং দেশপ্রেমের প্রলেপে রচিত হয়েছে চলচ্চিত্রটির কাহিনী। সাবলীল গল্প নির্ভর এই মুভির বিশেষ দিক হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প।
অরুণা বিশ্বাস নিজেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিনেমাটিতে। অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন আবুল হায়াত, শতাব্দী ওয়াদুদ, সোহানা সাবা, শাহেদ শরীফ খান, গাজী আব্দুন নূর, স্বাগতা, নাফিস আহমেদ, এবং শহীদ কাদরী। সিনেমার এক দৃশ্যে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে প্রখ্যাত যাত্রা সম্রাজ্ঞী জ্যোৎস্না বিশ্বাসকে।
এতে চিত্রায়িত হয়েছে কবি অতুল প্রসাদ সেন রচিত গান-মোদের গোরব মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা। এটি প্রথমবারের মতো কোনো চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হলো। এ ছাড়াও চলচ্চিত্রটিতে দৃশ্যায়িত হয়েছে ‘ও শাড়ি’ শিরোনামের একটি গান। এটি কিংবদন্তি গীতিকবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের শেষ লেখা গান।
মেঘের কপাট (৩ নভেম্বর)
নিরঙ্কুশ ভালোবাসার আবেগ-অনুভূতির গল্প নিয়ে বানানো এই মুভিটির পরিচালক ওয়ালিদ আহমেদ। স্ক্রিপ্ট লেখনিতে ছিলেন আফরোজা মোমেন, যার সেই স্ক্রিপ্টে চিত্রনাট্য গড়েছেন স্বয়ং পরিচালক। সিনেমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়ও অভিনয় করেছেন গল্পকার আফরোজা মোমেন। শুধু তাই নয়, সাদামাটা এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে চলচ্চিত্রের প্রযোজনায়ও যৌথভাবে অংশ নিয়েছেন ওয়ালিদ আহমেদের সঙ্গে।
কোনো অংশ কর্তন ছাড়াই মুক্তির ছাড়পত্র পাওয়া এই সিনেমা আদ্যোপান্ত নতুন মুখ নির্ভর। ওয়ালিদ আহমেদের এটি প্রথম মুভি পরিচালনা। সিনেমার গানগুলোর কথাও লিখেছেন তিনি।
এতে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে মঞ্চ থেকে উঠে আসা অভিনেতা রাকিব হোসেন ইভনকে। পূর্বে তিনি সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ‘একটি না বলা গল্প’ এবং জি-ফাইভ অরিজিনাল ‘কুহেলিকা’তে কাজ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সিন্ডি রোলিং, সাবরিনা তন্বী, জামান সাইফ, রাজু আহসান, রেহানা পারভীন হাসি ও রেজাউর রহমান রিজভীসহ আরও অনেকে।
সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতীয় বাংলার স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী।
কলাকুশলীদের কাজের পাশাপাশি চলচ্চিত্রটির বিশেষ দিক হচ্ছে এর মনোমুগ্ধকর শুটিং লোকেশন। হৃদয়স্পর্শী সঙ্গীত আয়োজনে গানগুলোর দৃশ্য ধারণে বাছাই করা হয়েছে মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড।
আজব ছেলে (১৭ নভেম্বর)
এই সিনেমাটি দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ছোটগল্প ‘আজব ছেলে’-এর চলচ্চিত্ররূপ। সরকারি অনুদানে বানানো মুভিটি সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পায় ২০২২ সালে। চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন ছোট পর্দার নাট্যকার মানিক মানবিক। প্রথমে শিরোনাম ‘অদ্ভুত ছেলে’ রাখা হলেও পরে নাম বদলে সরাসরি মূল গল্পের নামই রাখা হয়।
শিশুতোষ এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিদওয়ান সিদ্দিকী। এছাড়া অন্যান্য ভূমিকায় আছেন ওয়ার্ল্ড মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ তাহমিনা অথৈ, সাজু খাদেম, এবং তৌকীর আহমেদ।
মূল গল্পকে অপরিবর্তিত রেখেই অগ্রসর হয়েছে চলচ্চিত্রে কাহিনী। সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন সানী জোবায়ের। ইতোমধ্যে ‘ফুল ফুটেছে’ শিরোনামের একটি গানের টিজার প্রকাশিত হয়েছে। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কা গোপ।
ছায়াবৃক্ষ (নভেম্বর, ২০২৩)
‘ছায়াবৃক্ষ’ চলচ্চিত্রের কাহিনী গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের জীবনকে ঘিরে। এই উদ্দেশ্যে সিনেমার চিত্রায়ণ শুরু হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে। শ্যুটিং-এর যাবতীয় কাজ শেষ হয় শ্রীমঙ্গলে পরের বছর জুন মাসে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই সিনেমাটির পরিচালক বন্ধন বিশ্বাস। সংলাপ ও চিত্রনাট্যের দায়িত্বে ছিলেন তানভীর আহমেদ সিডনি।
অনুপম কথাচিত্রের ব্যানারে চলচ্চিত্রটি কোন রকম কাটা-ছেড়া ছাড়াই ভূয়সী প্রশংসা সহ ছাড়পত্র পায়। মুক্তির পথে আর কোনো বাধা নেই, তবে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি যাওয়ার নির্দিষ্ট দিনক্ষণটির ঘোষণা এখনও বাকি আছে।
সিনেমাতে মুল ভূমিকায় দেখা যাবে নিরব-অপু বিশ্বাস জুটিকে। কাহিনীর প্রয়োজনে দুজনেই আবির্ভূত হয়েছেন চা শ্রমিকের বেশে। এই অভিনয়ের জন্য বেশ ক্ষাণিকটা ওজনও কমাতে হয়েছে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে।
মুভিতে আরও অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমিত সেনগুপ্ত, কাজী নওশাবা আহমেদ, এলিনা শাম্মি, ডন, ইকবাল বাবু, বড়দা মিঠু, জাহিদ, এবং আজম খান।
শ্যামা কাব্য (নভেম্বর, ২০২৩)
প্রায় পাঁচ বছর পার নতুন সিনেমা নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বদরুল আনাম সৌদ। শ্যামা কাব্য-এর পরিচালনা, সম্পাদনা, এবং কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লেখার কাজ করেছেন বদরুল আনাম সৌদ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়া এই সিনেমা প্রযোজনায় তার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।
সেন্সর ছাড়পত্রপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটির নভেম্বরেই মুক্তির কথা চলছে। তবে এর আগেই প্যারিসের গঁজ সুর সেইন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়েছে শ্যামা কাব্য-এর। এই আয়োজনটি ছিলো মূলত দক্ষিণ এশিয়ার সেরা চলচ্চিত্র নিয়ে। চলচ্চিত্র উৎসবটির শেষদিন ৮ অক্টোবর প্যারিসের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় প্রদর্শিত হয় শ্যামা কাব্য। উৎসবে চলচ্চিত্রটি বিশেষ জুরি, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য পুরস্কার (বদরুল আনাম সৌদ), বেস্ট পিকচার (ইশতিয়াক হোসেন) এবং শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা (বদরুল আনাম সৌদ)- এই মোট চারটি পুরস্কার অর্জন করে।
মনস্তাত্ত্বিক সিনেমাটির প্রধান অভিনয়শিল্পী সোহেল মণ্ডল ও নীলাঞ্জনা নীলা। তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমাগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে মুভিতে।
এক দম্পতির সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে এগিয়ে যায় কাহিনী। স্বামী পেশায় একজন কলেজ প্রফেসর। প্রচন্ড হতাশায় পর্যুদস্ত হয়ে তিনি আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। এমনই সময় তার দেখা হয় শ্যামার সঙ্গে। ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হতে শুরু করে অপ্রিয় কিছু সত্য, যার অঙ্কুর নিহিত মনস্তত্ত্বের অনেক গভীরে।
সোহেল-নীলা জুটির সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে আছেন নওরীন হাসান খান জেনি, ইন্তেখাব দিনার, এবং এ কে আজাদ সেতু। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করলেন ছোট পর্দার তারকা নওরীন হাসান খান জেনি।
কাগজের বউ (নভেম্বর, ২০২৩)
‘সোনা বন্ধু’ চলচ্চিত্রের সফলতার প্রায় ছয় বছর পর আবারও একসঙ্গে হলেন ডিএ তায়েব এবং পরী মনি। এবারে তাদের লক্ষ্য প্রেক্ষাগৃহ নয়; কাগজের বউ নামের চলচ্চিত্রটি বানানো হয়েছে ওয়েব প্ল্যাটফর্মকে উদ্দেশ্য করে। ওয়েবফিল্মটি পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় নাট্যপরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। নিজের পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হওয়ার পর এটি তার সঙ্গে পরিমনির দ্বিতীয় কাজ।
একদম শুরুর দিকে নায়ক মামনুন হাসান ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহিকে নিয়ে এই সিনেমার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জের ধরে শ্যুটিং-এ অপারগতা প্রকাশ করেন মাহি। ফলে ঘটনাক্রমে তাদের জায়গায় আনা হয় তায়েব-পরিমনি জুটিকে। তবে ইমন এখনও আছেন কাগজের বউ টিমের সঙ্গে ভিন্ন ভূমিকায়।
গল্পের পটভূমিতে পরী মণি একটি ধনী পরিবারের মেয়ে, অন্যদিকে ডিএ তায়েব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরী মনির অমতে ডিএ তায়েবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় পরী মনি প্রতিনিয়ত স্বামীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনি এক দাম্পত্য জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে কাগজের বউ।
এসজি প্রোডাকশনের ব্যানারে সিনেমাটির প্রযোজক হিসেবে ছিলেন মাহবুবা শাহরীন। সিনেমায় অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন আবুল হায়াত ও দিলারা জামানসহ প্রমুখ।