এইডস : কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Looks like you've blocked notifications!

আজ বিশ্ব এইডস দিবস। এইডসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে দিবসটি পালন হয়ে আসছে।  দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘এইডস নির্মূলে প্রয়োজন : জনগণের অংশগ্রহণ’।

এইডসের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এস এম রাশেদ উল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইরোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৬২৩তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন : এইডস আসলে কী?

উত্তর : এইডস হলো, একোয়াট ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রম। একে আমরা সংক্ষেপে এইডস বলি। এটি আসলে একটি ভাইরাসের আক্রমণের কারণে হতে পারে। এই ভাইরাসকে আমরা বলি এইচআইভি ভাইরাস। এইচআইভি মানে ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস।

প্রশ্ন : এইডসের কারণ কী?

উত্তর : এইডস রোগের কারণগুলোর মধ্যে আমরা প্রথমে যেটি বলি, সেটি হলো, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। এইচআইভির বাহক বা এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে যদি অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক হয়, তাহলে যার সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে সে আক্রান্ত হতে পারে।

এ ছাড়া অনিরাপদ রক্ত শরীরে সঞ্চালিত হলে সেখান থেকে এইচআইভি হতে পারে। এ ছাড়া মাদক সেবনের মাধ্যমেও হতে পারে। আরেকটি হলো, এইচআইভি আক্রান্ত কোনো মায়ের যদি বাচ্চা হয়, তাহলে মায়ের থেকে বাচ্চার সংক্রমণ হতে পারে।

প্রশ্ন : এইডসের লক্ষণ কী?

উত্তর : আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো অনেক পড়ে প্রকাশ পায়। দেখা গেছে, এই রোগটি প্রকাশ পেতে আট থেকে ১০ বছর সময় লাগে। কেউ যদি নিজে চিকিৎসকের কাছে যায় এবং জানায় যে তার অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো প্রকাশ না পাওয়ার কারণে চিকিৎসকের কাছে রোগীরা অনেক দেরি করে আসে।

আরেকটি বিষয় হলো, মায়ের থেকে এইচআইভি যদি বাচ্চাদের ছড়ায়, তাহলে আমরা বাচ্চাদের স্ক্রিনিং করি। যদি বাচ্চারা নেগেটিভ হয়, তাহলে তো তাদের কোনো ঝুঁকি নেই। বিভিন্ন চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে, এর মাধ্যমে নেগেটিভ হতে পারে। তবে আমরা যেহেতু জানি, আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে হচ্ছে, তাই আমরা আগেভাগে নির্ণয় করতে পারি।

প্রশ্ন : যখন আপনাদের কাছে আসে, সেই সময়কার লক্ষণগুলো কী হতে পারে?

উত্তর : আমাদের কাছে যে লক্ষণগুলো নিয়ে আসে, সেগুলো আসলে অনেক রোগের সঙ্গে মিলে যায়। আমি যদি বলি অনেকদিন ধরে তার জ্বর রয়েছে, ডায়রিয়া রয়েছে, অনেক দিন  ধরে তার সংক্রমণ রয়েছে, হঠাৎ করে ব্যক্তির ওজন কমে যাচ্ছে—

 তখন আমরা ইতিহাসটা জানি। ব্যক্তির হয়তো একটি অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক ছিল। হয়তো সে মাদক সেবন করে। আবার হয়তো সে সার্জারির করেছিল। রক্ত নেওয়ার একটি ইতিহাস রয়েছে। এই ধরনের ইতিহাস থেকে আমরা অনেক সময় ধারণা করি, ব্যক্তির হয়তো এইচআইভি হয়েছে।

এটিকে নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি পরীক্ষা করি। সেই পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা নির্ণয় করতে পারি। পরীক্ষার মধ্য আমরা সেরোলজি টেস্ট করি। এর মাধ্যমে আমরা লেজার টেস্ট করি। ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা করতে পারি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা রেপিড টেস্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নির্ণয় করতে পারি।

প্রশ্ন : একজন মানুষ যখন জানে তার এইডস হয়েছে বা তার পরিবার যখন বিষয়টি জানে, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এই ক্ষেত্রে আপনারা কীভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন?

উত্তর : আসলে এই রোগীর চিকিৎসা গতাণুগতিক রোগীদের তুলনায় আলাদা। এই ক্ষেত্রে রোগীর রোগটি সম্পর্কে সবাই যেন না জানতে পারে সেদিকে খেয়াল করতে বলি এবং রোগীর মানসিক বিষয়েও আমাদের চিন্তা করতে হয়। এ জন্য রোগ নির্ণয়ের আগে, রোগীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে আমরা অনুমতি নিয়ে নিই।

যদি নেগেটিভ হয় তখনো আমরা তাকে বলি যে কী কারণে এইডস হয় এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেই। আর পজিটিভ হলে আমরা চিকিৎসা শুরু করি। চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন সেন্টারগুলো নির্ণয় করে দেওয়া রয়েছে। ঢাকার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, ঢাকার বাইরে কুমিল্লা মেডিকেল, কক্সবাজার মেডিকেল, সিলেট মেডিকেল, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ, বগুরা মেডিকেল কলেজ ও খুলনা মেডিকেল কলেজে এইচআইভি নির্ণয়ের এবং চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা সরকারিভাবে করা রয়েছে।

প্রশ্ন : এইডস রোগের চিকিৎসা কীভাবে শুরু করেন?

উত্তর : আমরা প্রথমে তার একটি ইতিহাস নেই, কাউন্সেলিং করি। আসলে প্রথমে কিন্তু তাকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। কারণ, এই রোগের আসলে কোনো প্রতিকার নেই। তবে ওষুধের মাধ্যমে সে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। এই জন্য তাকে মানসিকভাবে তৈরি করা জরুরি।

প্রশ্ন : এইডসের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

উত্তর : আসলে মানসিকভাবে তৈরি করাটাই প্রথম চিকিৎসা। রোগীকে যেমন মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে, তার পাশাপাশি পরিবার ও স্বজনের সহযোগিতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এইচআইভি রোগীর ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো, সামাজিক বাধা। রোগীকে মানসিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে, বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন : জিডোবোডিন, ল্যামিবোডিন, নেভিরাপিন, টেনোফোবিন ইত্যাদি। 

প্রশ্ন : এইডস রোগীর অন্যান্য রোগ হওয়ার কী ধরনের ঝুঁকি রয়েছে? এ ক্ষেত্রে কী কী পরামর্শ  আপনারা রোগীকে দেন?

উত্তর : এইআইভি আসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অন্য রোগগুলো কিন্তু বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টের রোগ, ডায়রিয়া বেড়ে যায়। অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রে এসব রোগে যে ওষুধ ব্যবহার করি এখানেও সেই ওষুধ ব্যবহার করি। এই ওষুধগুলো প্রতিদিন খেতে হবে, একদিনের জন্যও ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। এটা হলেই যে সব কিছু শেষ হয়ে গেল তা নয়।

প্রশ্ন : এইডস রোগীর গ্লাস-প্লেট কেউ ব্যবহার করতে চায় না, খাওয়া পানি কেউ পান করতে চায় না। এতে এইডস আক্রান্ত রোগী আরো বিষয় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : আমি প্রথমে যেই বিষয়গুলো বলেছি, সেগুলো ছাড়া আসলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার আর কোনো কারণ নেই। এইডস আক্রান্ত রোগীকে মশা কামড় দিলে এবং সেই মশা পরে অন্য কাউকে কামড়ালে এইডস হয় না। একজনের পোশাক আরেকজন পরলে এইডস হয় না। যে তিনটি কারণ বলেছি এর বাইরে আসলে এইচআইভি ছড়ায় না।