গরমে ত্বকের যত্নে তরমুজ খান

Looks like you've blocked notifications!

গরমকালে আমাদের যে সমস্যাটা প্রথমে হয়, ত্বক খুব ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। এ সময় আমরা যতই বাইরে থেকে যত্ন নিই না কেন, ত্বক কিন্তু শুকনো ও মলিন থাকে। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টিকণা প্রবেশ করাতে হবে। সেটা কীভাবে, সেটা অবশ্যই খাবারের মাধ্যমে।

এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে গরমে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন  পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা। তিনি বলেন, প্রথমেই আমাকে খেয়াল রাখতে হবে শরীরে যেন পানির অভাব না হয় এবং আমি যাতে ডিহাইড্রেশনে না ভুগি। তাই পর্যাপ্ত পানি ও পানিযুক্ত খাবার আমার শরীরে প্রবেশ করাতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্ততপক্ষে আড়াই লিটার পানি রাখুন এবং শাকসবজি, ফলমূল, যে খাবারে পানি আছে, সেগুলো খেতে হবে।

পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা বলেন, দেখা যায়, গরমকালে আমরা জুস খাচ্ছি এবং ফ্রিজ থেকে বের করে ঠাণ্ডা খাবার খাচ্ছি; এটি কিন্তু আমাদের ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। ঠাণ্ডা খাবার ত্বকে প্রদাহ তৈরি করে এবং ত্বকে যে সিস্টেম রয়েছে, সেটাকে ব্রেকডাউন করে দেয়। তাই অতিরিক্ত পরিমাণ ঠাণ্ডা খাবার গরমের দিনে খেলে শরীর বেশি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাবে। তাই আমরা যদি জুসও খাই, সুগার-ফ্রি, ন্যাচারাল ফলমূল থেকে তৈরি জুস খেতে পারি বা ঠাণ্ডা ছাড়া বা নরমাল টেম্পারেচারে জুস খেতে পারি। এ ছাড়া আমাদের আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের স্কিনে যে দুটো জিনিস ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, সেটা হচ্ছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও কোলাজেন। এ দুটো উপাদান যাতে আমাদের খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় প্রবেশ করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এ পুষ্টিবিদ বলেন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও কোলাজেন বাদাম থেকে, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি থেকে, চিয়া সিড থেকে, ফ্ল্যাক্সিড থেকে পেয়ে থাকি। এ ছাড়া ডিমও কিন্তু কোলাজেনের ভালো উৎস। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আমরা ডিম, বাদাম, সিড এবং শাকসবজি ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখব।

গরমকালে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফল রয়েছে আমাদের দেশে, সেটি হচ্ছে তরমুজ। তরমুজ কিন্তু মিনারেলসের আধার। এটা কিন্তু প্রতিদিন আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারি এবং এতে ন্যাচারাল সুইটস রয়েছে। সুতরাং আমরা খাদ্যতালিকায় চিনি ছাড়াই তরমুজ এক বাটি পরিমাণ খেয়ে ফেলতে পারি। এ ছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যেটা হলো পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যদি আপনার খাদ্যতালিকায় কম থাকে এবং তার পুষ্টির গুণগত মান কম থাকে, তাহলে আপনার স্কিনে রিঙ্কেলস পড়বে। তাই কুঁচকানো স্কিন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারগুলো যাতে ফাইবার সমৃদ্ধ হয়। যেমন—লাল চাল, লাল আটার রুটি, ওটস, যব, বার্লি... এগুলো আমরা অনায়াসে খেতে পারি।
 
তিনি বলেন, আরও একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে, পর্যাপ্ত হেলদি ফ্যাট যাতে আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন প্রবেশ করে। হেলদি ফ্যাট বলতে আমরা নরমালি যে তেল খাচ্ছি খাবারে, সেই তেলের কথা বলছি না। সাধারণত হেলদি ফ্যাট বলেতে আমরা বুঝি সেসব তেল, যাতে রয়েছে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। পলি ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবারগুলো হচ্ছে তিল, ফ্ল্যাক্সিড, সয়া এগুলো। 
 
ওমেগা থ্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছ আমরা প্রতিদিন খেতে না পারলেও সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন খাওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে আমরা হেলদি ফ্যাট জাতীয় খাবারগুলো আমাদের খাদ্যতালিকায় পৌঁছাতে পারব। তাই আসুন, যত্ন নিই আমাদের স্কিনের। বাহির থেকে নয়, ভেতর থেকে। পর্যাপ্ত পুষ্টিকণা সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখি এবং নিজের ত্বককে তৈরি করি যৌবনদীপ্ত এবং আনন্দময়।