গ্লুকোমার লক্ষণ ও কারণ কী?

Looks like you've blocked notifications!
গ্লুকোমার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন ডা.সিদ্দিকুর রহমান ও ডা. সানজিদা হোসেন। ছবি : এনটিভি

গ্লুকোমা হলো চোখের প্রেশার। অনেকেই এ সমস্যায় ভোগেন। গ্লুকোমার  লক্ষণ ও কারণের বিষয়ে কথা বলেছেন  ডা.সিদ্দিকুর রহমান। 

বর্তমানে তিনি ভিশন আই হসপিটালে গ্লুকোমা অ্যান্ড রিফ্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৯৮তম পর্বে সাক্ষাতকারটি প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন : গ্লুকোমা আসলে কী?

উত্তর : গ্লুকোমা নিয়ে আমাদের এখন অনেক কথা হচ্ছে। গ্লুকোমা শব্দটার কোনো বাংলা নেই। তাই বুঝতে একটু অসুবিধা হয়। আসলে এটি এরকম একটি রোগ যেখানে চোখের প্রেশার বেশি থাকে, এই প্রেশারের সঙ্গে ধীরে ধীরে চোখের অপটিক নার্ভ আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। রোগী এক সময় চিরতরে অন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু গ্লুকোমা রোগে তেমন কোনো লক্ষণ রোগী বুঝতে পারে না, এ জন্যই আমরা একে বেশি ভয় পাই। যদি সহসা কেউ অন্ধ হয় না, সে জন্য গ্লুকোমা রোগের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। এটা বোঝা দরকার যে গ্লুকোমা রোগে চোখের প্রেশার বেশি থাকে। ব্লাড প্রেশার যেমন হয়, চোখেরও প্রেশার রয়েছে।

ফুটবলের ভেতরে যেমন প্রেশার থাকে, তেমনি চোখেরও প্রেশার থাকে। ফুটবলে যে প্রেশার না দিলে বলটা চুপসে যায়, আবার প্রেশার বেড়ে গেলে সমস্যা হয় তেমনি। ব্লাড প্রেশার যেমন মাপতে হয়, তেমনি নিয়মিত চোখের প্রেশারও মাপা দরকার। তো ব্লাড প্রেশার তো নিয়মিত মাপা যায়, যেহেতু নিজে নিজে মেশিন দিয়ে মাপা যায়। তবে চোখের প্রেশার মাপতে একটু চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। তো আমি বলি যে বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করা উচিত, যাদের বয়স ৪০ বা চল্লিশের কাছাকাছি হয়ে গেছে তাদের। সারা দেশে যে গবেষণা রয়েছে, তাতে চল্লিশের ওপর যাদের বয়স, তাদের অন্তত এক দশমিক দুই ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত।

প্রশ্ন : এর তো কোনো লক্ষণ নেই। তাহলে যখন রোগী বুঝতে পারে তখন কি অনেক দেরি হয়ে যায়?

উত্তর : রোগী এসে বলে, হয়তো পাশে রিক্সা চলছে, আমি বুঝতে পারছি না। হাত লাগছে বা কনুই লাগছে। মানে হলো, পাশ থেকে যায়, তবে দেখতে পায় না। গ্লুকোমা রোগীর দেখাটা কেমন কমে? দূরে অনেক দূর দেখতে পায়। যেমন, একটি টেলিভিশনের স্ক্রিন যদি চিন্তা করি, এর কেন্দ্র ভালো রয়েছে। পাশ থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেদিকে তাকায় সেদিকেই কেবল দেখতে পায়, তবে পাশে দেখতে পায় না। অন্ধকারে টর্চ জ্বালালে কেমন হয়? যেখানে আলো পড়ে সেখানে দেখা যায়, আর চারপাশে দেখা যায় না। গ্লুকোমা রোগীর দৃষ্টিশক্তিটা এরকম টিউবের মতো হয়ে যায়। এ চিকন জায়গা দিয়ে সে ঘুরে ঘুরে দেখে। তার জগত অতটুকুই। ৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ রোগী বুঝতে পারে। না হলে রোগী সাধারণত অনুভব করতে পারে না।

গ্লুকোমা রোগীদের চোখে কী কী ঘটনা ঘটে? একটি ঘটনা হলো, আমরা প্রেশারটা বেশি পাই, তবে এটি ছাড়াও, গ্লুকোমা রয়েছে। তো প্রেশার কম কিন্তু গ্লুকোমা। শেষ পর্যন্ত আমাদের চোখের কাজ কী? দেখা তো? চোখের স্নায়ুটা ঠিক রয়েছে কি না। চোখের ভেতর রেটিনা বড় করে, অপটিক নার্ভটা পরীক্ষা করি। এগুলোর জন্য পরীক্ষাও রয়েছে।

Shastho Protidin | স্বাস্থ্য প্রতিদিন | EP 3598

দ্বিতীয় হলো, যখন দেখি যে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, তখন ভিজুয়াল ফিল্ড বোঝার চেষ্টা করি। ভিজুয়াল ফিল্ড এনালাইসিস মেশিনটি এরকম যেখানে রোগীকে কিছু কাজ করতে হয়। যেমন: ইটিটি। একটি টার্গেট ঠিক করে দিই। অনেকগুলো দাগ থেকে বিন্দু বিন্দু আলো জ্বলে এবং নিভে যায়। রোগীর হাতে কম্পিউটারের একটি মাউস থাকে। মাউসে তারা ক্লিক করে। তো আমরা বলি আপনি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যদি আলো জ্বলে আপনি ক্লিক করবেন। কিছু শেখার বিষয় রয়েছে। সেটি আমাদের অপারেটর বুঝিয়ে দেয়। তখন আমরা দেখতে পাই, যতগুলো স্পটে আমরা দেখতে দিয়েছি, সবগুলো দেখছে কি না। যাদের রোগ বেড়ে যায়, তাদের দেখা যায়, চারপাশেরগুলো দেখতে পায়নি, মাঝখানেরটুকু দেখতে পেয়েছে। আমরা বুঝতে পারলাম যে তার এটি কমে আসছে। অনেকের রয়েছে অল্প প্রেশারে ক্ষতি হয়, আবার অনেকে রয়েছে বেশি প্রেশারেও ক্ষতি হচ্ছে না। এটি নির্ভর করে কীসের ওপর? শক অবজারভিং ক্যাপাসিটির ওপর। যেই গাড়িতে শক অবজরভার ভালো তাতে ঝাঁকির ভেতরেও রাস্তা খারাপ হলে অতোটা খারাপ লাগে না। আর যেই গাড়িটা কম দামী, শক অ্যাবজরভার খারাপ, তাতে অল্প ঝাকুনিতেই খারাপ লাগে। তো কারো কারো চোখ গঠনগতভাবে মজবুত। একটু প্রেশার বেশি হলেও ক্ষতি হয় না। এটাও আমরা পরীক্ষা করে দেখি। দেখি যে তার চোখটা আসলে কতটা মজবুত। অনেকগুলো ডাটা একজায়গায় করার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে তার জন্য কী আমরা ওষুধ শুরু করবো, মানে সে গ্লুকোমা রোগী কি না। এর পরের পর্যায়টা হলো, ক্ষতির পরিমাণ কেমন জানা এবং পরে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।

প্রশ্ন : একটি বিশেষ বয়সের পরে গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর বাইরে কি কারো হতে পারে?

উত্তর : সংজ্ঞা দিয়ে যদি বলি, গ্লুকোমা একটি গ্রুপ অব ডিজঅর্ডার, নিউরোজেনেটিক ডিজ অর্ডার। নিউরোজেনেটিভ ডিজ অর্ডার মানে নার্ভ নষ্ট হচ্ছে বিবিধ কারণ নিয়ে। এগুলোর মধ্যে প্রচলিত যেটি, চোখের প্রেশার বেশি থাকা। তবে গ্লুকোমার অনেকগুলো ধরন রয়েছে। প্রায় ১৪ থেকে ১৫টি ধরন রয়েছে। এর মধ্যে জন্মগত গ্লুকোমা রয়েছে। কনজিনিটাল গ্লুকোমা রয়েছে। আসলে এটি একটি জিনগত রোগ। বেশিরভাগ গ্লুকোমাই জিনগত। গ্লুকোমা যাদের থাকে, তাদের সন্তানের জন্মের পরপরই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নেওয়া উচিত।

এখন লক্ষণ কী হবে? সবাই তো সব জায়গায় চিকিৎসক পাবে না। বাচ্চার চোখটা দেখতে একটু বড় মনে হবে। যেমন, দেখতে গরুর মতো। খুব ডাগর ডাগর চোখ থাকে। মানে পুরো চোখ জুড়ে কালো মণি। কর্নিয়াটা মনে হবে পুরো চোখ জুড়েই রয়েছে। অনেক ভারী ও ভেজা ভেজা। বাচ্চাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং আলো সহ্য করতে পারে না। একদিনের বাচ্চাও আলো দেখতে পারে না। আলো দেখলেই সে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তো এটি একটি লক্ষণ। এরকম হলে চোখের চিকিৎসকের কাছে আসবে।

আঘাতের জন্যও কিন্তু গ্লুকোমা হতে পারে। চোখের ভেতর যে প্রেশারটা ব্যবস্থাপনা হয়, একুয়াস হিউমার নামে একটি তরল পদার্থের কারণে। এই তরল পদার্থ তৈরি হওয়া ও বেরিয়ে যাওয়ার একটি অন্তর্গত পরিবহন লাইন রয়েছে। এই লাইনটি যদি আঘাতের কারণে বন্ধ হয়, তাহলে তার প্রেশার বেড়ে গেল। এটি আস্তে আস্তে চিকিৎসা করে ঠিক করা যায়।

আরেক ধরনের গ্লুকোমা রয়েছে, যেটি আমরা নিজেরাই তৈরি করি। বাচ্চাদের যেমন অ্যালার্জির খুব প্রবণতা থাকে। অন্য যে ওষুধই দিই না কেন স্টেরয়েড দিলে সে ভালো হয়ে যায়। পাঁচ শতাংশের স্টেরয়েডের কারণে গ্লুকোমা হতে পারে। তো বাচ্চাদের তো পরীক্ষা করাও কঠিন, তার প্রেশার মাপাও কঠিন। শিশুটির মা-বাবাও উদ্বেগে থাকে। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো বারে বারে চিকিৎসকের কাছে আসা কঠিন। তখন হয়তো আর চিকিৎসকের কাছে আসে না। বাজার থেকে ওষুধ কিনে নিজেরাই দেয়। এরপর বাচ্চা আসে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে।