চুলকানির সাথে লিভার ও কিডনি রোগের সম্পর্ক কী
জীবনে কখনও না কখনও চুলকানির সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। অপরিচ্ছন্নতার কারণে অনেক সময় চুলকানি হতে পারে। আবার থাকতে পারে শরীরের ভেতরগত কোনও কারণ। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চুলকানির সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে চুলকানির সমস্যা সম্পর্কে কথা বলেছেন বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডে চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ফারহানা কাইয়ুম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. সামিউল আউয়াল স্বাক্ষর।
আমরা অনেকের মধ্যে চুলকানির সমস্যা দেখতে পাই। কিন্তু এই চুলকানির সমস্যাটাকে আমরা আসলে কখন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করব, সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. ফারহানা কাইয়ুম বলেন, চুলকানি তো কমবেশি আমাদের সবারই হয়ে থাকে, যেটা ক্ষণস্থায়ী, হুট করে আমাদের চুলকানি হচ্ছে, আবার কমেও যাচ্ছে। যেমন শুষ্কতার জন্য চুলকানি হতে পারে। এটা আবার কমে যাচ্ছে। কিন্তু যখন চুলকানি দীর্ঘক্ষণ চলছে রাত-দিন সব সময়, এমন অবস্থা হয় যে তার হাত ওই এরিয়া থেকে নামাতে পারছে না। তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে এবং তার স্কিনে চুলকানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন চলে আসছে, বিশেষ করে নখের আঁচড়ের যে চিহ্ন, তখনই আমাদের চিন্তা করতে হবে হয়তো বা আমার চামড়ায় কিছু প্রবলেম হচ্ছে অথবা আমার বডির ভেতরে; যেমন লিভারে সমস্যা থাকলেও চুলকানি হতে পারে, কিডনিতে সমস্যা থাকলেও চুলকানি হতে পারে, ব্লাডে যদি পলিসাইথেমিয়া থাকে, আমরা যদি কিছু ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে বের করে ফেলি, সে ক্ষেত্রেও চুলকানি হতে পারে।
ডা. ফারহানা কাইয়ুম বলেন, থাইরয়েডের সমস্যার জন্যও চুলকানি হয়। কারও যদি ডায়বেটিস মেলাইটাস থাকে অনিয়ন্ত্রিত, সে ক্ষেত্রেও আমাদের চুলকানি হতে পারে। তবে বয়স্কদের যেটা হয়, নরমালি অনেকের চুলকানি থাকে। কারণ, বয়সের সাথে সাথে আমাদের চামড়ায় যে তেলটা থাকে, সেটা শুষ্ক হয়ে যায়। তখন তার চুলকানির পরিমাণ অন্যান্য অ্যাডাল্ট বা ইয়াং পারসনের তুলনায় একটু বেশি হয়ে থাকে।
একেবারে চুলকানির পরিমাণ কম থাকে, ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে। প্রাথমিকভাবে যখন শুরু হচ্ছে, সাথে অন্যান্য কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ থাকছে কি না, সেটি চামড়ার বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে, সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. ফারহানা কাইয়ুম বলেন, কিছু খাবারের জন্য আমাদের এলার্জি হয়, এটাকে আমরা বলি আর্টিকারিয়া, ফুড এলার্জি, সেটার ক্ষেত্রে পার্টিকুলার পারসনের ওই খাবারে যদি এলার্জি থাকে; যেমন অনেকের বেগুন থেকে সমস্যা হয়, গরুর মাংস বা চিংড়ি-ইলিশ মাছ থেকে হয়। তাহলে তার এই খাবারগুলো খাওয়ার পরে শরীরে ইচিং হয় বা চুলকায়, তারপর লাল লাল দাগ হয়, যেটা আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে, আমরা যদি ইনফেকশন চিন্তা করি, যেমন স্ক্যাবিস খুব কমন; বিশেষ করে যারা মাদ্রাসায় পড়ে। কারণ, এখানে অনেক বাচ্চা একসঙ্গে থাকে। প্রথমে তারা অভিযোগ করে অল্প ইচিং হচ্ছে, আঙুলের ফাঁকে, কবজিতে, নাভির চারপাশে ছোট ছোট লাল দাগ হচ্ছে এবং চুলকানিটা এত বেশি হয়, তাদের যে নরমাল অ্যাকটিভিটি থাকে, সেগুলোও হ্যাম্পার হচ্ছে এবং রাতে তারা ঘুমাতে পারে না। চুলকানি আস্তে আস্তে এত বাড়ে যে স্কিনে ইনফেকশন হয়ে যায়।
ডা. ফারহানা কাইয়ুম বলেন, আমরা জানি, স্ক্যাবিস যে জীবাণু দিয়ে হয়, স্ক্যাবিসের সাথে সাথে যদি স্ট্যাফিলোকোকাল ইনফেকশন হয়, তাহলে বাচ্চাদের কিডনিতেও সমস্যা হতে পারে। আরেকটা যেটা কম হয় ফাঙ্গাল ইনফেকশন, যেটাকে বাংলায় আমরা দাদ বলে থাকি, সেটার জন্য কিন্তু অনেক বেশি চুলকায়। আমরা অনেক সময় ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সাথে এলার্জি বা ফুড এলার্জি গুলিয়ে ফেলি যে আমার মনে হয় এলার্জি হচ্ছে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনে যেটা হয়, প্রথমে ভাঁজ এরিয়াগুলোতে, যেমন কুচকিতে, বগলে, ফিমেলদের বুকের নিচে এবং এর পাশাপাশি যে কোনও জায়গায় হতে পারে। প্রথমে একটা ঘামাচির মতো হয়, তারপর উনারা আস্তে আস্তে চুলকাতে থাকেন। চুলকাতে চুলকাতে এটা বড় হতে থাকে, যেটার মাঝখানটা ক্লিয়ার থাকে, কিন্তু বর্ডারটা লাল হয়ে ফুলে যায়। আমরা যদি চিন্তা করি, লিভারের সমস্যা থেকে হচ্ছে কি না, কিডনির সমস্যা থেকে হচ্ছে কি না, সেসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তার শুধু চুলকানিটাই বেশি হয়, স্কিনে প্রবলেমটা খুব কম হয়।
চুলকানির সমস্যা সম্পর্কে আরও জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।