ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে করণীয়

Looks like you've blocked notifications!
এডিস মশা। ছবি : সংগৃহীত

সুপ্রিয় পাঠক আপনারা জানেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু হয়েছিল ২০১৯ সালে। জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর, এই চার মাস ডেঙ্গুর মৌসুম। এ সময় যদি আমরা সতর্ক থাকি, তাহলে ডেঙ্গু থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত জ্বর। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেইন (ডেন-১, ২, ৩ ও ডেন-৪)। এর যেকোনো একটি দিয়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। আর এই ভাইরাস বহন করে এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির মশা। এডিস ইজিপ্টি স্বভাবগতভাবে গৃহপালিত ও নগরকেন্দ্রিক। এটি আমাদের শহরে ঘরের ভেতরে এবং এর কাছাকাছি  থাকে। এজন্য এটিকে আমরা গৃহপালিত মশা বলে থাকি। এডিস ইজিপ্টি মশা ডেঙ্গু বিস্তারে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভূমিকা রাখে। আরেকটি প্রজাতি এডিস এলবোপিকটাস, যাকে এশিয়ান টাইগার মশা বলা হয়। এটি বন্য বা জংলি বা গ্রামের মশা। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই এ মশা রয়েছে। এই প্রজাতি ডেঙ্গু বিস্তারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। এই মশা বিভিন্ন পাত্র ছাড়াও গাছগাছালিযুক্ত এলাকায় গাছের কোটর, কলাগাছের দুই পাতার মাঝখানে, কচুর পাতার মাঝখানে, কাটা বাঁশের গোড়ায় জমে থাকা পানিতে জন্মায়।

নগরে এডিস ইজিপ্টি মশা জন্মানোর অন্যতম স্থান হলো ড্রাম, টায়ার, বালতি, যেকোনো ধরনের মাটির পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের গর্ত, টাইলস ভেজানোর চৌবাচ্চা, কিউরিংয়ের পানি জমার স্থান, বিশেষ করে বেজমেন্ট।

সুপ্রিয় পাঠক, চলুন জেনে নিই কীভাবে আমরা আমাদের পরিবারকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে পারব। ডেঙ্গু এমন একটি সমস্যা, যেটিকে সরকার বা সিটি করপোরেশন একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়নি।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন

এডিস মশার জন্ম হয় পাত্রে জমে থাকা পানিতে। সপ্তাহে অন্তত একদিন আপনার বাড়ি এবং বাড়ির চারদিকে ঘুরে দেখুন কোথাও কোনো পাত্রে পানি জমে আছে কি না। যদি থাকে তাহলে তা ফেলে দিন বা পরিষ্কার করুন। যদি পাত্রটি এমন হয় যে পানি ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সেখানে ব্লিচিং পাউডার বা লবণ দিন। গাড়ির অব্যবহৃত টায়ার বাসায় রাখবেন না, কারণ এখানে এডিস মশার জন্ম হয় । দই বা যেকোনো খাবারের পাত্র বাইরে ফেলবেন না। বাথরুমে যদি পানি ধরে রাখতে হয় তাহলে পানির পাত্র সপ্তাহে অন্তত একবার ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভালো করে ধুয়ে আবার পানি ভর্তি করুন। এডিস মশা পানির পাত্রের কিনারে ডিম পাড়ে এবং পাত্রের গায়ে আটকে থাকে, যে কারণে পানি ফেলে দিলেও ডিম যায় না। তাই এটিকে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কারের প্রয়োজন পড়ে। আপনার বাড়ির পাশে কোনো নির্মাণাধীন ভবন থাকলে, এটির লিফটের গর্ত, ইট ভেজানোর চৌবাচ্চা, ড্রাম পরীক্ষা করুন। যদি এসব জায়গায় জমে থাকা পানিতে ছোট ছোট পোকা দেখতে পান, তাহলে বুঝবেন সেটি এডিস মশার লার্ভা বা বাচ্চা। নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগ করুন, যেন তিনি তাঁর বাড়িতে মশা জন্মানোর স্থান তৈরি না করেন। নির্মাণাধীন ভবনটি যদি আপনার হয় তাহলে সেখানে জমে থাকা পানিতে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রাখুন। আপনার বাড়ির আশপাশে যদি কোনো সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা থাকে মশা জন্মানোর মতো, তাহলে ওই অফিসকে জানান। বাড়ির আশপাশে গাছের গর্ত বা কাটা বাঁশের গোড়া মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিন। কারণ গাছের কোটর বা বাঁশের গর্তে এডিস মশার জন্ম হয়।

মনে রাখবেন, আপনার-আমার বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকা পাত্রে এডিস মশার জন্ম হয়। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন, ডেঙ্গুমুক্ত থাকুন। আপনার-আমার সচেতনতা এবং সামান্য কার্যক্রমই পারে সবার পরিবারকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে। সবার পরিবার ডেঙ্গুমুক্ত থাকলেই দেশ ডেঙ্গুমুক্ত হবে।

লেখক : অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়