ব্লাড সুগার বাড়ার ৫ লক্ষণ

Looks like you've blocked notifications!

রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিস মেলাইটাসের লক্ষণ। আর ডায়াবেটিস সারা জনমের রোগ।

বেশি চিনি বা উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এটি দুই ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায়। তবে একজন ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। এই উচ্চ সুগার জায়গা করে নেয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও কোষে। দীর্ঘদিন এভাবে থাকলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। আর এ কারণে অধিকাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী ইনসুলিন নেন।

আমাদের শরীর পেনক্রিয়াসে ইনসুলিন তৈরি করে। একটি স্বাভাবিক শরীর রক্তের সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে। তবে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর পেনক্রিয়াস এতটা ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। আর তাই এ ধরনের রোগীদের বাইরে থেকে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

আরেকটিভাবে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা করা যায়। আর সেটি হলো, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার খেলে। এতে অন্তত রক্তের সুগার রোলার কোস্টারের মতো ওঠানামা করতে থাকে না। আর এ কারণে বেশিরভাগ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। তাদের বাজে কার্বোহাইড্রেটের মিষ্টিজাতীয় পানিও ও খাবার এড়িয়ে যেতে বলা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, অনেকেরই দেহে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে। তবে তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন নন। আর সচেতন না থাকার কারণে তাঁরা তাঁদের খাবারের বিষয়ে সচেতন হন না। কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে বোঝা যাবে ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়ছে আপনার। আর একটি রক্তের পরীক্ষা একে নিশ্চিত করতে সহজ হবে। লক্ষণগুলো জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ।

১. অবসন্ন ভাব

বেশি অবসন্ন ভাব কিন্তু রক্তে সুগার বাড়ার লক্ষণ। আপনার শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ (সুগার) থাকলে ক্লান্ত লাগবে। যে রক্তে বেশি সুগার থাকে সেটি ধীরে প্রবাহিত হয়, যে রক্তে সুগার স্বাভাবিক থাকে তার তুলনায়। এটি হলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষ রক্ত থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। দীর্ঘদিন ধরে রক্তের সুগারের চিকিৎসা না করা হলে এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়।

রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়ার জন্য এই ক্লান্ত ভাব হওয়া প্রদাহের সঙ্গেও সম্পর্কিত। রক্তের সুগারের মাত্রা বেশি হলে রক্তনালিতে প্রদাহ হয়। গবেষকরা দেখেছেন, রক্তনালিতে প্রদাহ হলে মস্তিষ্কে মনোসাইটিস ছড়িয়ে পড়ে। মনোসাইটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কোষ। এর কারণে অবসন্ন ভাব হয়।

এমনকি সুগার কমে গেলেও অবসন্ন ভাব হয়। রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুগার না থাকলে শরীর শক্তি পায় না। রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়ার কারণে অবসন্ন ভাব হলে ঝিমুনি ও বিরক্তি ভাব হয়। এতে দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়।

এই অবসন্ন ভাবের কারণে ঘুমের মান কমে যায়। গবেষণায় দেখা যায়, ৩১ শতাংশ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে রোগী ঘুমের সমস্যা হওয়ার কথা বলেছেন। আর টাইপ-টু ডায়াবেটিসের রোগীদের ৪২ শতাংশের ঘুমের সমস্যা হয়।

২. ঝাপসা দেখা

রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হতে পারে। আর এটি কখনো কখনো খুব বেশি হয়। রক্তে সুগারের মাত্রা না কমলে চোখের লেন্স ফুলে যায়। এতে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়। চিকিৎসা না করা হলে লেন্স দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ক্ষয়ে আসে। ডায়াবেটিসের কারণে চোখে হওয়া সমস্যাকে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলা হয়। এর মধ্যে দুটো খুব প্রচলিত রোগ হলো, ম্যাকুলার ইডিমা ও প্রলিফেরেটিভ রেটিনোপ্যাথি।

তরল বের হওয়ার কারণে ম্যাকুলার ফুলে যাওয়ার কারণে ম্যাকুলার ইডিমা হয়। ম্যাকুলা রেটিনার মধ্যখানে থাকে। এটি ২০/২০ দৃষ্টির জন্য এবং রং বোঝার জন্য জরুরি। ম্যাকুলাতে সমস্যা হলে দৃষ্টিতে এবং রং দেখতে অসুবিধা হয়। আর তাই চোখ ঝাপসা লাগলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

প্রলিফেরেটিভ রেটিনোপ্যাথি হয় রক্তনালির ছিদ্রের কারণে। এতে চোখের কেন্দ্র থেকে তরল বের হয়ে যায়। এতে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া ব্যক্তি ঝাপসাও দেখে।

এ ছাড়া রক্তের সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে ছানি হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে।

৩. মাথাব্যথা

রক্তের সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে মাথাব্যথার সমস্যা প্রায়ই হয়। এটি মাইগ্রেনের মতো মাথাব্যথা নয়। এটি কয়েক দিন পর্যন্ত থাকে। এমনকি এক সপ্তাহ পর্যন্তও থাকতে পারে। এটি আসলে রক্তের সুগার বাড়ার প্রাথমিক লক্ষণ। চিকিৎসা করা না হলে ব্যথা বাড়তে পারে।

মাথাব্যথা হলো রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার লক্ষণ। ওষুধ নেওয়ার পাশাপাশি ক্যাফেইন (চা, কফি) এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এটাও মনে রাখা উচিত, সব মাথাব্যথাই রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ার কারণে হয় না।

ঘুমের অসুবিধা, মদ্যপান, অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন, হরমোনের পরিবর্তন ইত্যাদি কারণেও ব্যথা হতে পারে। আর তাই মাথাব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের কাছে যান কারণ নিশ্চিতভাবে জানার জন্য। রক্তের সুগারও বেড়ে যাওয়ার কারণেও ব্যথা হতে পারে, কে জানে?

৪. ঘন ঘন প্রস্রাব

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা রক্তের সুগার বাড়ার লক্ষণ। কারণ, আপনার শরীর রক্তের সুগারকে ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করতে না পেরে কিডনির ওপর চাপ ফেলে। আর এ জন্য ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়। রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার এ বিষয়টিকে পলিউরা বলে।

এই সমস্যা হলে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় তিন লিটার প্রস্রাব নির্গত হয়, যেখানে একজন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে হয় এক থেকে দুই লিটার। এ রকম সমস্যা হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এমনকি যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং ইনসুলিন নিচ্ছে তাদেরও এ সমস্যা হয়। পলিউরার কারণে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়াও এর কারণে হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার মূত্রবর্ধককারী ওষুধ ও অতিরিক্ত কফি পানের কারণে অনেক সময় পলিউরা হয়।

৫. অতিরিক্ত পিপাসা

অতিরিক্ত পানি পিপাসাকে পলিডিপসিয়া বলে। এটি রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। পলিডিপসিয়ার ফলাফল হিসেবে পলিউরা বৃদ্ধি পায়। যতবার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, ততবারই পানি পানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

আমরা জানি, পর্যাপ্ত পান পান শরীরের জন্য ভালো। এবং আসলেও তাই। তবে অতিরিক্ত পানি পান কিন্তু শরীরের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। এটি শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্যকে নষ্ট করে। অতিরিক্ত পানি পান প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে রক্তে সোডিয়াম খুব অল্প পরিমাণ থাকে এবং কোষে বেশি পানি চলে যায়। এতে মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, বমি বমিভাব, অবসন্ন ভাব হয়।এর চিকিৎসা না করা হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অতিরিক্ত পানি পান দেহের ইলেকট্রোলাইট, ভিটামিন ও মিনারেলকে পাতলা করে ফেলে। আর এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হজম প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে।

আর তাই যদি মনে হয়, প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর পিপাসা পাচ্ছে, তাহলে হয়তো আপনার শরীর আপনাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।