বয়স বাড়লে ত্বকের কী ক্ষতি হয় জানেন?

Looks like you've blocked notifications!
বার্ধক্যের কারণে ত্বকের সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করেছেন ডা. রেবেকা সুলতানা ও ডা. সানজিদা হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

বয়স বাড়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে ত্বকে। আর এ কারণে বলিরেখা, মলিন ভাব, শুষ্কতাসহ ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হয়।

বার্ধক্যে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করেছেন ডা. রেবেকা সুলতানা। বর্তমানে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চর্ম ও যৌন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৬০৪তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন : বার্ধক্য বা প্রবীণ বয়সটি আসলে কোন ভাগের মধ্যে পড়ছে?

উত্তর : বার্ধক্য একটি খুব কঠিন কথা। যাঁরা বার্ধক্যে এসে গেছেন, তাঁরা কিন্তু একদম পছন্দ করেন না এটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, ৬৫ পর্যন্ত সবাই তরুণ থাকে। তাহলে আমরা ধরে নিই, যে এর পরেই বার্ধক্য। মানুষ থেকে মানুষের ওপর, জীবনযাপনের ধরনের ওপর, অনেক সময় তার পারিপার্শ্বিকতার ওপরও নির্ভর করে। এই বয়স কিন্তু সীমাবদ্ধ থাকে না। কারো কারো দেখা যায়, পঞ্চাশের মধ্যেই বার্ধক্য চলে এসেছে। আবার কাউকে ৭০ বছরেও তরুণ লাগে। জীবনযাপনের ধরনের ওপর এটি অনেকটা নির্ভর করে।

বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলো প্রথমেই ধরা পড়ে তার চামড়ায়। এই বয়সে কিন্তু কিছু রোগও থাকে। অসুস্থতা ছাড়া বার্ধক্য এসেছে, এ রকম সাধারণত কম দেখা যায়। আরেকটি পরিবর্তন আসে অসচেতনতার কারণে।

বার্ধক্যের কারণে ত্বকের সমস্যা সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে ত্বকের কী পরিবর্তন হয়। কীসের মাধ্যমে বার্ধক্য আসছে বোঝা যায়? যেমন ধরুন, একটি শিশু। তার ত্বকের যে গড়ন থাকে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর আরেকটু পরিবর্তন হয়। প্রবীণ বয়সে গিয়ে আরেকটু পরিবর্তন হয়।

এর মধ্যে এপিডার্মিসটা পাতলা হয়ে যায় এবং স্পর্শকাতর হয়ে যায়। এপিডার্মিস হলো ত্বকের একেবারে প্রথম স্তর। আর ডার্মিসের মধ্যে সিবাসিয়াস গ্রন্থি ও হাইপারট্রফি হয়ে যায়। এ জন্য সিবাম নিঃসরণের যে স্বাভাবিক নিয়ম, সেগুলোও তাদের পরিবর্তন হয়ে যায়। সিবামের গঠনের মধ্যে তেলটাই বেশি। এরপর হেয়ার ফলিকলগুলো এট্রফি হয়ে যায়। হেয়ার ফলিকলগুলো বেশি বেড়ে যায়। যেগুলো অনেক গ্রহণ করতে পারে না। আরেকটু নিচে গেলে সাবকিউটোনিয়াস টিস্যু, ইলাস্টিক টিস্যুর মধ্যে সাংঘাতিক পরিবর্তন হয়। লেয়ারে পরিবর্তনটা বেশি হয় নিচে, তবে ওপরে সেটি দেখা যায়। যেমন : কোলাজেন ফাইবার। কোলাজেনের ব্রেকডাউন বেশি হয়। এর পরিবর্তন হয় বেশি।

এটি পরিবর্তন হওয়ার কারণে বলিরেখা চলে আসে। ত্বক ঝুলে যাওয়ার বিষয়টি ঘটে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার রোগের সঙ্গেও ত্বকের কিছু সমস্যা হয়। বার্ধক্যের সময় আমরা দেখি উচ্চ রক্তচাপ থাকে বা ডিসলিপিডিমিয়া থাকে। ডায়াবেটিসের কারণে কিন্তু ত্বকটা শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্কতার কারণে প্রবীণরা বলে, ত্বক চুলকায়। এর কারণ হলো, শুষ্কতা। তখন সেভাবে সুরক্ষা নিতে হবে।

বাচ্চাদের ত্বক যেমন স্পর্শকাতর থাকে, প্রবীণ বয়সে ঠিক একই রকম। বাচ্চার জন্য যে পণ্য কিনবে, মা-বাবার জন্যও একই রকম পণ্য কিনতে হবে। চুলকালে জায়গাটা একটু আঘাত পায়। আবার রক্তনালিগুলোও কিন্তু পাতলা হয়ে যায়। যেমন দেখবেন, প্রবীণ বয়সে লাল কিছু ব্রু এইজের মতো থাকে। একে আমরা সিনাইল পারপুরা বলি। প্রবীণ বয়সে এটি এমনিতেই হয়।

ডায়াবেটিসের কারণে তো ত্বকের কত রকম পরিবর্তন আসে। এরপর সহজে নিরাময় হতে চায় না। আর থাইরয়েড একটি রোগ রয়েছে, এর কারণে আরো শুষ্ক, মলিন হয়ে পড়ে ত্বক।

আর বলিরেখা যেগুলোকে বলব, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যেটি হয়, আমরা চিকিৎসা করি। তবে চিকিৎসা করে তো আর প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায় না। তবে আমরা ধীর করাতে পারি।