মুঠোফোনে আসক্তি শিশুদের কী ক্ষতি করছে

Looks like you've blocked notifications!

মুঠোফোন এখন আমাদের জীবনযাপনের অবধারিত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সুফল ও কুফল দুই-ই আছে। অনেক শিশুর মুঠোফোন ছাড়া যেন অন্য কিছুতে মনোযোগই নেই। মুঠোফোন হাতে না দিলে খেতেও চায় না। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে জানব, মুঠোফোনে আসক্তি শিশুদের কী ক্ষতি করছে।

এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে শিশুদের মুঠোফোনে আসক্তি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে (শিশু বহির্বিভাগ) শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. তোশিবা রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. মুনা তাহসিন।

বর্তমান সময়ে মুঠোফোনে আসক্তি শিশুদের কী কী ক্ষতি করছে, সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. তোশিবা রহমান বলেন, আসক্তি সব সময় একটি নেগেটিভ শব্দ। আমরা কিন্তু মোবাইল ছাড়াও থাকতে পারছি না। অনেকে সময় দেখা যায়, আমাদের শিশুদের একাডেমিক পারপাসে হোক বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজের জন্য, এসাইনমেন্টের জন্য বা যে কারণেই হোক, মোবাইল আমরা নিজেরাই তুলে দিচ্ছি এবং তুলে দেওয়ার লিমিটেশন আমরা জানি না। কোন অ্যাপস আমরা তাকে দেখাব বা আদৌ এই বয়সের জন্য মোবাইলটা জরুরি কি না, সেটা না জেনেই আমরা তুলে দিচ্ছি। অভিভাবকেরা, যাঁদের ছয়-সাত মাস বয়সি শিশু আছে, তাঁরা যদি একটু সচেতন থাকেন, তাহলে কিন্তু আমাদের এই আসক্তি শব্দটা পর্যন্ত যেতে হয় না। কারণ, এডিকশন বা আসক্তি অনেক পরে গিয়ে ডেভেলপ করে।

ডা. তোশিবা রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে, করোনার সময় আমরা সবচেয়ে বেশি এটা পেয়েছি এবং এটা আসলে কিছু করারও ছিল না। আমরা সবাই তখন জুম মিটিং, জুম ক্লাসের ওপর নির্ভর ছিলাম বলে এটা বেড়েছে। কিন্তু তার আগে থেকেও আমরা খেয়াল করছিলাম, ২০১৬-১৮-এর সময় থেকে প্রকোপ বাড়ছিল এবং করোনা এসে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে করে দেখা গিয়েছে যে আমি যদি প্রতিদিন ২০ জন বাচ্চা দেখি, বিকাশ রিলেটেড, তাদের মধ্যে দেখা যায় ৬০ শতাংশ শিশু স্পিচ, কমিউনিকেশনে ডিজঅর্ডার।

অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি থেকে কী কী বিকাশজনিত সমস্যা বা আচরণগত পরিবর্তন দেখেছেন, ভ্যারিয়েশন কী, সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. তোশিবা রহমান বলেন, আমরা যে বিকাশের বিভিন্ন ধাপগুলো বলি, তার মধ্যে স্পিচ থাকে, বিহেভিয়ার থাকে; মেইন প্রবলেম যেটা হচ্ছে। ডিভাইসের আসক্তির কারণে এই শিশুগুলো ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ, ডিভাইস কিন্তু একাই তার সমস্ত কালারফুল জিনিস দিয়ে, বিভিন্ন মিউজিক দিয়ে আমাকে বিনোদন দিচ্ছে। এতে করে কী হচ্ছে, শিশুটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে বুঝতে পারে না টু ওয়ে কমিউনিকেশন কী বা তার ডিমান্ড কীভাবে সে ফুলফিল করবে বা তার স্পিচ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তার ডিমান্ড যে শো করবে, সেটা; বা বয়স অনুযায়ী তার যে ইনস্ট্রাকশন ফলো করার কথা বা যেটুকু শিক্ষণীয় বিষয় শেখার কথা, সেটা হলো হাউসহোল্ড শিক্ষা, একাডেমিক না।

ডা. তোশিবা রহমান বলেন, অনেক অভিভাবক খুশি হয়ে যায়, আমার বাচ্চা মাত্র আড়াই বছর, সব কালার চেনে এবং সব কালার সে ইংরেজিতে বলতে পারে। এখানেও একটা বিশাল বড় গ্যাপ রয়েছে, সেটা হলো ল্যাঙ্গুয়েজ প্রবলেম। সেখানে আমরা মিক্সড ল্যাঙ্গুয়েজ ঢুকিয়ে দিচ্ছি। কখনও ইংরেজি, কখনও বাংলা, কখনও হিন্দি। এর ফলে কী হয়, তার টু ওয়ে কমিউনিকেশন থাকে না, স্পিচ ডিলে হতে থাকে। একটা সময় যখন সে স্পিচ ডিলের এমন একটা পর্যায়ে চলে যায়, দেখা গেল তার হয়তো টয়লেট পেয়েছে বা তার এই খাবারটা পছন্দ হচ্ছে না, তার হয়তো বন্ধুদের সাথে এই খেলনা দিয়ে খেলতে ইচ্ছে করছে না, সেটা বোঝাতে পারছে না। সে শো করছে এগ্রেসিভ বিহেভিয়ার। তাহলে তার স্পিচে প্রবলেম হচ্ছে, স্পিচ ডিলে হয়ে যাচ্ছে, কমিউনিকেশনে প্রবলেম হচ্ছে।

শিশুদের মুঠোফোনে আসক্তি সম্পর্কে আরও জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।