যে তিনটি জিনিস বাড়িয়ে দিতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ

Looks like you've blocked notifications!
প্রতীকী ছবি

ভারতে প্রায় ১১ হাজার করোনা রোগীর দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি ভারত এ সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিশেষজ্ঞ মহলে এ নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা চলাকালীন এবং এমনকি সেরে ওঠার পরেও  ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ঠিক কেন ও কীভাবে এ সংক্রমণ ঘটছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে মতের ভিন্নতাও রয়েছে।

আমরা জেনেছি যে, ডায়াবেটিসে যাঁরা ভুগছেন, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের করোনা সংক্রমণ হলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও ভারতে এ অবধি সংক্রমিত রোগীর ২১% ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন না। ফলে ডায়াবেটিস থাকলেই এ ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হবে আর না থাকলে এ সংক্রমণ হবে না, চোখ বুজে কিন্তু সেটা বলা যাচ্ছে না।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ

এদিকে, এখন অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় জিঙ্কের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলেই হয়তো ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) প্রাক্তন সভাপতি ডা. রাজীব জয়দেবনের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের এই প্রকোপের পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ থাকতে পারে।

করোনাভাইরাস নিরাময়ে ব্যবহৃত (১) অতিরিক্ত জিঙ্ক গ্রহণ (২) গরম ভাপ বা বাষ্পের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং (৩) একই সাথে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের  প্রয়োগকে তিনি এ ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এর স্বপক্ষে তিনি মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল সরকারি মেডিকেল কলেজ, ইন্দোর-এর বিশেষজ্ঞ ডা. ভিপি পান্ডের একটা গবেষণাপত্রের সূত্র উল্লেখ করেছেন। সে গবেষণায় নাকি বলা হয়েছে যে, করোনা সংক্রমণের সাথে সাথে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের  সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উপরে উল্লেখিত তিনটি কারণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এখন আসুন বিষয়টা আর একটু পরিষ্কার করে বোঝার চেষ্টা করি। 

১) অতিরিক্ত জিঙ্ক

জিঙ্ক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে, এটা ঠিক। শরীরের প্রায় ৩০০ রকম এনজাইমের ওপর এটা কাজ করে শরীরকে রোগ প্রতিরোধী করে তোলে। কিন্তু একই সাথে এটাও প্রমাণিত যে, জিঙ্ক ফাঙ্গাস বিশেষ করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বংশবৃদ্ধির একটা বড় কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, জিঙ্কবিহীন কোষে ছত্রাকের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

২) বেশি বেশি গরম ভাপ বা বাষ্প

ডা. ভিপি পান্ডের গবেষণা সূত্রের বরাতে ডা. রাজীব জয়দেবন বলছেন যে, অতিরিক্ত পরিমাণে বাষ্প আমাদের নাকের নরম ঝিল্লি আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতে পারে। এমনকি পুড়িয়েও দিতে পারে। তাতে করে আমাদের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে সহজেই সেখানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। কারণ, অতীতে দেখা গেছে, ১০-২০%  পোড়া রোগীর শরীরে এ ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটেছে।

(৩) একই সাথে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার

ডা. রাজীব জয়দেবন বলছেন, অনেক সময় দেখা যায় করোনা রোগীর চিকিৎসায় অহেতুক একই সাথে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের এই অযাচিত ব্যবহারের ফলেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করোনা হলেই মাত্রাতিরিক্ত জিঙ্ক গ্রহণ, বেশি মাত্রায় এবং বারবার গরম ভাপ বা বাষ্প নেওয়া এবং একই সাথে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করাটাই হবে উত্তম কাজ। তাতে করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ রোধ করা অধিকতর সম্ভবপর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ, সাভার